Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সারদায় হিসেবের কড়ি খেল কোন বাঘ

সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন বাজার থেকে ২৪৬০ কোটি টাকা তুলেছেন বলে জানিয়েছিল রাজ্য পুলিশের স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) বা বিশেষ তদন্তকারী দল। সিটের কর্তাদের দাবি, সারদার বিভিন্ন কম্পিউটার ঘেঁটেই তাঁরা এই তথ্য পেয়েছেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সারদা কমিশনে হাজির হয়ে সুদীপ্ত নিজে জানালেন, তিনি বাজার থেকে তুলেছিলেন মোট ২০৬০ কোটি টাকা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৪ ০২:৪৬
Share: Save:

সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন বাজার থেকে ২৪৬০ কোটি টাকা তুলেছেন বলে জানিয়েছিল রাজ্য পুলিশের স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) বা বিশেষ তদন্তকারী দল। সিটের কর্তাদের দাবি, সারদার বিভিন্ন কম্পিউটার ঘেঁটেই তাঁরা এই তথ্য পেয়েছেন।

কিন্তু বৃহস্পতিবার সারদা কমিশনে হাজির হয়ে সুদীপ্ত নিজে জানালেন, তিনি বাজার থেকে তুলেছিলেন মোট ২০৬০ কোটি টাকা।

অর্থাৎ গরমিল অন্তত ৪০০ কোটি টাকার। সিটের হিসেবের সঙ্গে সুদীপ্তের হিসেবের এই ফারাক কেন, এ দিন সেই প্রশ্ন ওঠে বিচারপতি শ্যামল সেনের নেতৃত্বাধীন কমিশনে। প্রশ্ন ওঠে, হিসেবের কড়ি খেল কোন বাঘ? তা হলে বাকি টাকা কি অন্য কোথাও সরিয়ে ফেলা হয়েছে? আমানতকারীদের টাকা দেশে-বিদেশে সরিয়ে ফেলার অভিযোগ এসেছে ভূরি ভূরি। টাকা কোথায় সরানো হয়েছে, কারা তা পেয়েছে, সেটা যাচাই করবে তদন্তকারী সংস্থা। কিন্তু সংস্থার নথিপত্র এবং সংস্থা-প্রধানের খতিয়ানে ফারাকের কারণ কী?

কমিশন বা সিটের কাছে এই প্রশ্নের জবাব এখনও নেই। তবে সুদীপ্ত এ দিন জানান, সম্পত্তি ও সংবাদমাধ্যম কেনা এবং চালানোর জন্য তিনি খরচ করেছেন ৬০০-৭০০ কোটি টাকা। সংস্থা চালাতে খরচ হবেই। কিন্তু তাতে হিসেবের ফারাক কেন হবে, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। ক্ষতিগ্রস্ত লগ্নিকারীরা কবে কী ভাবে টাকা ফেরত পাবেন, আদৌ পাবেন কি না, সেই প্রশ্ন তো আছেই। সারদা মামলায় সুপ্রিম কোর্টেরও অন্যতম মূল প্রশ্ন ছিল, ওই বেসরকারি লগ্নি সংস্থার কাছ থেকে লাভবান হয়েছেন কারা? শীর্ষ আদালতের নির্দেশেই সেই প্রশ্নের জবাব খোঁজার ভার আপাতত সিবিআইয়ের উপরে ন্যস্ত।

বৃহস্পতিবার কমিশনে সারদা গোষ্ঠীর মালিকানাধীন আজাদ হিন্দ ও কলম পত্রিকার আয়-ব্যয়ের হিসেব নিয়ে জেরা পর্ব চলে। হাজির ছিলেন কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যামলবাবু এবং অন্য দুই সদস্য অম্লান বসু ও যোগেশ চট্টোপাধ্যায়। কমিশন সূত্রের খবর, আজাদ হিন্দ ও কলম পত্রিকার আয়-ব্যয়ের হিসেব দেওয়ার জন্য এ দিন ওই পত্রিকার চেয়ারম্যান এবং কর্মী সংগঠনের কর্তাদেরও হাজির হতে বলা হয়েছিল। কর্মী সংগঠনের আইনজীবী কমিশনে জানান, ওই হিসেব এখনও তাঁরা তৈরি করতে পারেননি। এই কাজের জন্য তাঁদের আরও সাত দিন সময় দেওয়া হোক। কমিশন তাঁদের আবেদন মঞ্জুর করে।

অসমের এক সংবাদপত্রের কর্ণধার অঞ্জন দত্তকেও এ দিন কমিশনে হাজির থাকতে বলা হয়েছিল। সুদীপ্ত কমিশনে বলেছেন, ওই সংবাদপত্র চালানোর জন্য তিনি সাত কোটি ৪০ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। অঞ্জন এ দিন নিজে কমিশনে হাজির ছিলেন না। তাঁর আইনজীবী প্রাণ বরা সারদার কাছ থেকে ওই টাকা পাওয়ার কথা স্বীকার করে কমিশনে জানান, সেই টাকা ইতিমধ্যেই ব্যয় হয়ে গিয়েছে। উপরন্তু তাঁরাই সারদার কাছ থেকে ৪৬ লক্ষ টাকা পাবেন। বরা জানান, বিষয়টি নিয়ে অসমের একটি আদালতে মামলা চলছে। তাই কমিশনে এই বিষয়ে আলাদা করে শুনানির প্রয়োজন নেই। তাই সেটি বাতিল করা হোক।

কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যামলবাবু এর পরেই অঞ্জনের আইনজীবীকে জানান, অন্য আদালতে মামলা চললে যে কমিশনে তার শুনানি করা যাবে না, এই মর্মে কোনও নথিপত্র থাকলে সেটা তাঁকে কমিশনে দেখাতে হবে। এর জন্য তাঁকে আগামী ৯ জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।

এ দিন কমিশনে বেশ কয়েক জন আমানতকারী হাজির হয়েছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে সিবিআই-কে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার কথা ঘোষণা করার পরে তাঁদের চিন্তা, তাঁরা কি আদৌ আর টাকা ফেরত পাবেন?

কমিশনের সদস্য অম্লান বসু জানান, আমানতকারীর টাকা ফেরত দেওয়ার কাজে সিটের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কমিশনে জমা পড়া আবেদনপত্র তারাই যাচাই করে দিত। সিবিআই তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার পরে তারা আর থাকছে না। অম্লানবাবুর কথায়, “এ বার সারদার সব নথিপত্র সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিতে হবে সিটকে। তাই আবেদনপত্র যাচাইয়ের প্রক্রিয়াই থমকে যাবে। এতে টাকা ফেরতের কাজে বিলম্ব তো হবেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

saradha case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE