Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

হ্যাপি-হত্যায় দায়সারা রিপোর্ট জেল সুপারের, ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট

বিভিন্ন ঘটনার তদন্তে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ও দায়সারা রিপোর্ট নিয়ে বারবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। এ বার প্রেসিডেন্সি জেলে দণ্ডিত বন্দি হ্যাপি সিংহের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে রাজ্যের কারা দফতরের পাঠানো রিপোর্ট নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করল তারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৪ ০৩:১১
Share: Save:

বিভিন্ন ঘটনার তদন্তে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ও দায়সারা রিপোর্ট নিয়ে বারবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। এ বার প্রেসিডেন্সি জেলে দণ্ডিত বন্দি হ্যাপি সিংহের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে রাজ্যের কারা দফতরের পাঠানো রিপোর্ট নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করল তারা।

মঙ্গলবার হ্যাপি-হত্যার রিপোর্ট পড়ার পরে ক্ষুব্ধ বিচারপতি নিশীথা মাত্রে মন্তব্য করেন, এক পাতারও কম জায়গা খরচ করে সাদামাঠা ও দায়সারা ভাবে ওই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। গত ৫ মে প্রেসিডেন্সি জেলে খুন হন হ্যাপি। আর রিপোর্টটি তৈরি করেছেন ওই জেলের সুপার।

বিচারপতির বক্তব্য, ওই জেলে বন্দিদের জন্য কী রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে, কখন কোন ধরনের পাহারায় বন্দিরা থাকেন, রিপোর্টে তার কোনও উল্লেখই নেই। কেন ওই হত্যাকাণ্ড ঘটল, কোথায় কার কতটা ত্রুটি ছিল, নিরাপত্তা ব্যবস্থার শৈথিল্য ঠিক কোন জায়গায় এবং সেই সব ত্রুটি শুধরে নেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার কী ভাবছে এ-সব প্রসঙ্গও এড়িয়ে গিয়েছে ওই রিপোর্ট। এই সব কারণেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিচারপতি মাত্রের ডিভিশন বেঞ্চ। হ্যাপির আইনজীবীকে যাতে প্রেসিডেন্সি জেলের সুপারের পাঠানো ওই রিপোর্টের প্রতিলিপি দেওয়া হয়, বিচারপতি মাত্রে সরকারি আইনজীবীকে সেই নির্দেশ দিয়েছেন।

রিপোর্টের ব্যাপারে হাইকোর্টের ক্ষোভ নিয়ে কী বলছে জেল?

প্রেসিডেন্সি জেলের সুপার নবীন সাহা এ দিন বলেন, “উচ্চ আদালত কী মন্তব্য করেছে, সেই ব্যাপারে আমি এখনও কিছু জানি না। তাই কোনও মন্তব্য করব না।”

খাদিম-কর্তা অপহরণ মামলায় আলিপুর আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন হ্যাপি। তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিল আলিপুর আদালত। ওই রায়ের বিরুদ্ধে হ্যাপি হাইকোর্টে আপিল মামলা করেন। বিচারপতি মাত্রের ডিভিশন বেঞ্চেই সেই আপিল মামলা চলছিল। এই অবস্থায় ৫ মে জেলের ভিতরেই হ্যাপিকে খুন করা হয়। সেই ব্যাপারেই জেল-কর্তৃপক্ষ রিপোর্ট পাঠিয়েছেন হাইকোর্টে।

আদালত সূত্রের খবর, রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৫ মে সকালে নিজামুদ্দিন নামে অন্য এক বন্দি একটি চাঙড় দিয়ে হ্যাপির মাথায় আঘাত করে। সেটা দেখতে পান সিদ্ধার্থ কোলে নামে এক বিচারাধীন বন্দি। তিনি কারা-কর্তৃপক্ষকে খবর দেওয়ার পরে হ্যাপিকে প্রথমে জেলেরই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে পাঠানো হয় এম আর বাঙুর হাসপাতালে। সেখানেই সে-দিন বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে হ্যাপির মৃত্যু হয়।

এই সব বিষয় জানানোর সঙ্গে সঙ্গে ওই ঘটনার পরে জেল-কর্তৃপক্ষ যে-সব ব্যবস্থা নিয়েছেন, তার কথাও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে বলে আদালত সূত্রের খবর। রিপোর্টে বলা হয়েছে, হত্যাকাণ্ডের পরে অতিরিক্ত ইনস্পেক্টর প্রাথমিক তদন্ত করেন। সেই তদন্তের ভিত্তিতে ওয়ার্ডার রাকেশ বিশ্বাসকে সাসপেন্ড করা হয়। হেড ওয়ার্ডার ঈশা আলিকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। আলাদা ভাবে তদন্ত করেন জেলের ডেপুটি ইনস্পেক্টরও। কিন্তু দু’টি তদন্তে কী বেরিয়ে এল, সেই ব্যাপারে রিপোর্টে কিছুই বলা হয়নি। এমনকী কারা দফতরের অতিরিক্ত ইনস্পেক্টর জেনারেলও বিভাগীয় তদন্ত করেছেন। তাতে কী পাওয়া গিয়েছে, জেল সুপার তাঁর রিপোর্টে সেই সম্পর্কেও কিছু উল্লেখ না-করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ডিভিশন বেঞ্চ।

আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, হ্যাপি নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করে যে-আপিল মামলাটি করেন, তাঁর বোনেরা এখনও সেটি চালিয়ে যেতে আগ্রহী। তবে হ্যাপির বোনেরা ওই মামলা চালাতে পারবেন কি না, সেই বিষয়ে ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন কোনও মন্তব্য করেনি। আইনজীবীদের মতে, সাধারণ ভাবে যিনি আপিল মামলা করেন, তাঁর মৃত্যু হলে সেই মামলা খারিজ হয়ে যায়। তবে এখন হ্যাপির বোনেরা মামলা চালাতে চাইলে কী হবে, সেটা আদালতের উপরেই নির্ভর করছে। গ্রীষ্মের ছুটির পরে ফের মামলাটির শুনানি হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

happy singh presidency jail high court calcutta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE