Advertisement
১১ মে ২০২৪

১২ টাকায় আলু খাওয়ালে মিলবে রফতানির ছাড়পত্র

তোমরা আমাকে ১২ টাকায় আলু দাও, আমি তোমাদের রফতানির অনুমতি দেব। সোমবার নবান্নে আলু ব্যবসায়ীদের ডেকে এমনই শর্ত দিল রাজ্য সরকার। চাহিদা ও জোগানের স্বাভাবিক নিয়ম অগ্রাহ্য করে জোরজবরদস্তি বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে মানুষের ভোগান্তি বাড়িয়েছে প্রশাসন। পর্যাপ্ত উৎপাদন সত্ত্বেও সরকার ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে বলে আমজনতার অভিযোগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৪ ০২:৫৭
Share: Save:

তোমরা আমাকে ১২ টাকায় আলু দাও, আমি তোমাদের রফতানির অনুমতি দেব। সোমবার নবান্নে আলু ব্যবসায়ীদের ডেকে এমনই শর্ত দিল রাজ্য সরকার।

চাহিদা ও জোগানের স্বাভাবিক নিয়ম অগ্রাহ্য করে জোরজবরদস্তি বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে মানুষের ভোগান্তি বাড়িয়েছে প্রশাসন। পর্যাপ্ত উৎপাদন সত্ত্বেও সরকার ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে বলে আমজনতার অভিযোগ। তাতে সায় দিয়েছেন ব্যবসায়ীদেরও একাংশ। এই পরিস্থিতিতে আলু নিয়ে এ দিন টাস্ক ফোর্সের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী সিদ্ধান্ত নেন, সে-দিকেই তাকিয়ে ছিলেন কারবারিরা। কিন্তু ১০ মিনিটেই বৈঠক শেষ।

ব্যবসায়ীদের একাংশ বলছেন, ১৭ অগস্ট থেকে পাঁচ দিনের জন্য ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোর অনুমতি দিয়েছিল তৃণমূল সরকার। ২২ অগস্ট সেই মেয়াদ ফুরিয়েছে। কিন্তু পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কৃষি বিপণন দফতর। তাই এ দিন বৈঠকের গোড়াতেই তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ভিন্ রাজ্যে আরও বেশি আলু পাঠানোর অনুমতি চান।

ব্যবসায়ীদের দাবি, হিমঘরগুলিতে যে-আলু আছে, তাতে এ রাজ্যের মানুষের চাহিদা অপূর্ণ থাকার কথা নয়। সেই চাহিদা মিটিয়ে যদি প্রতিদিন ৭০০ টন আলু ভিন্ রাজ্যে পাঠানো যায়, কিছুটা লাভ হবে ব্যবসায়ীদের। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, তখনই ওঠে শর্তের কথা। ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দেওয়া হয়, সরকার ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোর দাবি মেনে নিতে রাজি। শর্ত হল, রাজ্যকে প্রতিদিন ১২ টাকা কিলোগ্রাম দরে ৩০০ টন আলু দিতে হবে ব্যবসায়ীদের। শুনে আর কথা বাড়াননি আলু ব্যবসায়ীরা। সরকারকে তাঁরা জানান, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ২৮ অগস্ট বক্তব্য জানিয়ে দেওয়া হবে। তার পরেই বৈঠক শেষ করে দেন মুখ্যমন্ত্রী।

বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন নানা বিষয়ে সরকারের কাছে দাবি জানান। এ ক্ষেত্রে খোদ সরকারই দাবিদার। ব্যবসায়ীরা কি সেই দাবি মানবেন?

“রাজ্যের এই দাবি আদৌ মানা সম্ভব কি না, তা আমরা ২৭ অগস্ট বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেব,” বলেছেন প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বরেন মণ্ডল। তবে ব্যবসায়ীদের একাংশ জানান, ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোর ক্ষেত্রে সরকার যে-শর্ত আরোপ করেছে, তা কার্যত অযৌক্তিক। তাঁরা ফি-বছরই অন্যান্য রাজ্যে আলু রফতানি করেন। কখনও বেশি, কখনও কম। তবে সবটাই করা হয় এ রাজ্যের স্বার্থ বজায় রেখে। ওই ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, শর্তের নামে সরকার যে-ভাবে ঘুরপথে জোর খাটাতে চাইছে, তাতে হয়তো ধর্মঘটের পথই বেছে নিতে হবে। সে-ক্ষেত্রে ফের জটিলতা তৈরি হবে বলে আলু ব্যবসায়ীদের একাংশের আশঙ্কা।

রাজ্যে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ইতিমধ্যে একাধিক বার বৈঠক হয়েছে নবান্নে। সেই সব বৈঠকে কখনও ব্যবসায়ীদের দাম কমাতে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, কখনও বা সরকারের কথা অমান্য করার জন্য ভিন্ রাজ্যের সীমানা থেকে আলু আটক করে তা মজুত করা হয়েছে মিলনমেলায়। পরে সেই আলু বিভিন্ন বাজারে কম দামে বিক্রি করেছে সরকার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। আলুর দর থেকে গিয়েছে ২২ টাকা কেজিতেই।

আলু ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সরকারের জোরজবরদস্তির ফলেই ক্রেতাদের ভোগান্তি বেড়েছে। সরকার আলু আটক করেছে। তার জেরে প্রচুর আলু নষ্ট হয়েছে। আটক আলু মিলনমেলায় পচে যাওয়ায় তা ফেলে দিতে হয়েছে ধাপায়। সরকারের গাজোয়ারি মনোভাবে বহু ব্যবসায়ী হিমঘর থেকে পর্যাপ্ত আলু বার করেননি। ফলে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে অসামঞ্জস্য দেখা দিয়েছে। তারই খেসারত দিতে হচ্ছে আমজনতাকে। বাজার-অর্থনীতির সাধারণ নিয়মের বিরুদ্ধে গেলে যে হিতে বিপরীত হয়, গত বছরেও তা টের পেয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা থেকে সরকার যে কোনও শিক্ষা নেয়নি, এ বারেও তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন বঙ্গবাসী। তবে এ দিনের বৈঠকের পরে টাস্ক ফোর্সের সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে বলেছেন, “অন্য রাজ্যে আলুর দাম অনেক বেশি, ৩০-৪০ টাকা। এখানে ২২ টাকার উপরে ওঠেনি। এই দাম ঠিকই আছে। আর কমবে না।”

ফলে বাংলায় সেই বাইশেই দাঁড়িয়ে গেল আলুর দাম!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

export of potato potato price hike
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE