Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

হার না মেনেও সম্মানিত কৌস্তভ

শরীর ভেঙে চুরমার। কিন্তু এতটুকুও ভাঙেননি কৌস্তভ দাশগুপ্ত। মন আর প্রাণ দু’টোই টগবগ করে ছুটছে ২৬ এর তরুণের।

কৌস্তভ দাশগুপ্ত

কৌস্তভ দাশগুপ্ত

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৭ ০১:৪৮
Share: Save:

শরীর ভেঙে চুরমার। কিন্তু এতটুকুও ভাঙেননি কৌস্তভ দাশগুপ্ত। মন আর প্রাণ দু’টোই টগবগ করে ছুটছে ২৬ এর তরুণের।

সারা শরীর স্থবির। শুধু বাঁ হাতের দু’টি আঙুল নাড়াতে পারেন। চলার জন্য ভরসা বৈদ্যুতিক হুইল চেয়ার। তাতে কী? স্রেফ এই দু’আঙুলে ধরে মাউস দিয়ে কম্পিউটারে ছবি আঁকেন, গান লেখেন, সুর দেন, গানও গান। তারই সুবাদে ‘প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দেশের অন্যতম দৃষ্টান্ত’ হয়ে উঠেছেন তিস্তাপাড়ের কৌস্তভ। আর এখন তাঁকে ঘিরে উচ্ছ্বসিত দক্ষিণ ভারতের চিত্রাবতী পাড়ের জনপদও।

শারীরিক ভাবে অশক্ত ছেলেকে ঘিরে এই উন্মাদনা দেখেশুনে কৌস্তভের বাবা-মা, কৌশিক ও শীলার চোখে জল। কারণ, ছেলেকে সুস্থ করার তাগিদেই শিলিগুড়ির যাবতীয় প্রতিষ্ঠা এক কথায় ছেড়ে চলে এসেছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের পুত্তাপুর্তিতে। সাঁই আশ্রমের সঙ্গে দীর্ঘ দিনের যোগাযোগ ছিল তাঁদের। সেখানকার হাসপাতালেই চিকিৎসা চলছে কৌস্তভের। কৌশিক বললেন, ‘‘তখন শিলিগুড়িতে থাকতাম। ছোটবেলাতেই গান গেয়ে দিশারি পুরস্কার পেয়েছিল কৌস্তভ। ওর চিকিৎসার জন্য প্রায় দেশ দশক দক্ষিণ ভারতে। কত ধরনের প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে ওঁকে। তাই বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে ‘প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশের সেরা হওয়ায়’ গর্ব বোধ করছি।’’

কৌস্তভের যে রোগের শিকার তাতে হাড় ক্রমাগত ভেঙে যায়। চিকিৎসকদের ভাষায় ‘অষ্টিওজেনেসিস ইমপার্ফেকশিয়া’। যা কি না ২০ হাজার শিশুর মধ্যে এক জনের হতে পারে। কৌস্তভের যখন আট, তখনই প্রথম এই রোগ ধরা পড়ে তাঁর। ততদিনে গান গেয়ে শিলিগুড়িতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কৌস্তভ। কিন্তু, বারবার হাড় ভেঙে যাওয়ায় সঙ্গীত চর্চাতেও বাধা পড়ে। সেই সময়ে শিলিগুড়ির চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, দুরারোগ্য ব্যাধি সারাতে টানা চিকিৎসা করাতে হবে।

এক কথায় কৌস্তভের বাবা-মা শিলিগুড়ির পাট চুকিয়ে যে ধর্মীয় সংস্থার সঙ্গে তাঁরা যুক্ত, দক্ষিণ ভারতে সেই সাঁই-আশ্রমের হাসপাতালে চলে যান। সেখানেই চাকরি পান কৌশিকবাবু। পাকাপাকি ভাবে থিতু হন পুত্তাপূর্তিতে।

গত দেড় দশকে ৫০ বার হাড় ভেঙেছে কৌস্তভের। তা জুড়ে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এখন হুইল চেয়ারে বসে সতেজ মস্তিষ্ক আর দু’আঙুলের ভরসায় মাউস নাড়িয়ে সৌরভ লিখে চলেন, ‘হে প্রভু তোমার রঙে রামধনু হতে চাই। সেই রঙে জীবন রাঙাতে তোমার তুলি চাই।’ আবার কখনও ইংরেজিতে, ‘উই ওয়ান্ট টু সে, উই ওয়ান্ট টু লিভ ইন ইওর লাভ’। কথায় বসে সুর। তৈরি হয় গান। কৌস্তভের গলায় তাঁরই লেখা ও সুর দেওয়া গানের সিডি সমাদৃত হয়েছে। লিখেছেন বইও। সেই সঙ্গে তাঁর করা গ্রাফিক ডিজাইনও প্রশংসিত হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kaustubh Dasgupta Bone Disease
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE