তাপস-বরণ। জামিনের পরে। — নিজস্ব চিত্র।
সে দিনও তাঁর গলায় মালা দুলছিল। এ দিনও দুলল।
সে দিন, যখন নদিয়ার চৌমুহায় দাঁড়িয়ে বিরোধীদের উদ্দেশে তিনি বলছিলেন, ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে রেপ করিয়ে দেবেন বা নিজের রিভলভার থেকে গুলি করে মারবেন— বেগুনি ফুলের মালা দুলছিল গলায়। এ দিন তিন-চার স্তবক রজনীগন্ধায় ঢেকে গেল তাঁর গলা-বুক।
সোমবার সেই কুকথা-মামলায় জামিন পেয়ে তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল যখন কৃষ্ণনগর আদালত থেকে বেরোচ্ছেন, তাঁর নামে নাগাড়ে জয়ধ্বনি দিচ্ছিলেন অনুগামীরা। সাদা শার্ট, ফেডেড জিন্সে প্রায় নায়কের কায়দায় হাত নেড়ে তাপস হাসি মুখে বেরোতেই তাঁরা গলায় পরিয়ে দিলেন মালা। তাপস উঠে গেলেন তাঁর দুধ-সাদা গাড়িতে। সংবাদমাধ্যমের কারও দিকে ফিরেও তাকালেন না।
গত ২৬ মে কৃষ্ণনগর আদালতেই সিআইডি বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিয়েছিল। যে ক’টি ধারায় মামলা রুজু হয়েছে তার মধ্যে উত্তেজনা ছড়ানোর জন্য জামিনঅযোগ্য ধারাও রয়েছে। সকালেই তাপসের তিন আইনজীবী বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়, রাজদীপ দাস এবং শ্যামাপ্রসাদ সিংহ রায় জামিনের আর্জি জানিয়েছিলেন। দুপুর ২টো নাগাদ বিচারক শুভজিৎ বসু জামিন মঞ্জুর করেন। সরকারি আইনজীবী বীরেশ্বর মুখোপাধ্যায় এক বার উঠে দাঁড়ানো ছাড়া আর কিছুই করেননি বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। জামিনের বিরোধিতা করলেন না কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে বীরেশ্বরবাবু একটিও কথা বলতে চাননি।
গত বছর জুনে নাকাশিপাড়ার চৌমুহা গ্রামে তাপস কুকথার ঝড় বইয়ে দেওয়ার পরে পুলিশ একটি সাধারণ ডায়েরি করেই দায় সারে। ওই থানাতেই ফের তাপসের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন কলকাতার বিরাটির বাসিন্দা, সমাজকর্মী বিপ্লবকুমার চৌধুরী। তার পরেও পুলিশ মামলা না করায় বিপ্লববাবু সিবিআই তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে যান। বিচারপতি নিশীথা মাত্রে সিআইডি-কে তদন্তের নির্দেশ দেন। এর পরে ২৭ সেপ্টেম্বর পুলিশ এফআইআর নেয়, সিআইডি তদন্ত শুরু করে। এ দিন যখন তাপস আদালতে পৌঁছন, এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর অসীম সাহা তাঁর সঙ্গে ছিলেন। পরে অবশ্য তাঁকে আর দেখা যায়নি। কর্মী-সমর্থকেরা অপেক্ষা করছিলেন। নেতা জামিন পেয়ে বেরোতেই তাঁরা যা শুরু করেন, তাতে আশপাশের লোকজন বিস্মিত। এক আইনজীবী বলেন, ‘‘যে লোক ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে রেপ করানোর হুমকি দিল, তাকে মালা পরিয়ে জয়ধ্বনি দিয়ে বরণ করল তৃণমূলের লোকজন! লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে।’’ চাপড়া থেকে আসা এক বিচারপ্রার্থী বলেন, ‘‘তাপস পাল মহিলাদের সম্পর্কে যে ভাষায় কথা বলেছেন, নদিয়া কেন, তামাম দেশের মানুষও তা ভুলতে পারেননি। সেই লোকটিকে ঘিরে মাতামাতি দেখে মনে হচ্ছে, আমরা কি কোনও সভ্য দেশে বাস করছি?’’ হতাশ চৌমুহাও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের এক যুবক বলেন, ‘‘লোকটার চরম শাস্তি চেয়েছিলাম। তা তো হলই না। উল্টে কত সহজে জামিন পেয়ে গেল। এখন ওকে নিয়ে নাচানাচি হচ্ছে। এর পরে আর কী বলার থাকতে পারে!’’
তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব অবশ্য এতে দোষের কিছু দেখছেন না। দলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের মতে, ‘‘ওঁকে নির্বাচনে জিতিয়ে সে দিন যাঁরা জয়ধ্বনি দিয়েছিলেন, এ দিন তাঁরাই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। এতে অন্যায়টা কোথায়?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy