তাপস ও মমতা চক্রবর্তী
একটা মৃত্যু এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে এক প্রবীণার চিঠিই চোখ খুলে দিল প্রশাসনের!
কালিম্পংয়ের নিসর্গে শেষ পর্যন্ত নিজেদের ৪০তম বিবাহবার্ষিকী আর কাটানো হয়নি তাঁদের। অ্যাম্বুল্যান্সে ছেষট্টি বছরের জীবনসঙ্গীর দেহ নিয়ে একাকী পাহাড় থেকে কলকাতায় ফেরার পর প্রথম কয়েক দিন শোকে পাথর হয়েছিলেন গড়িয়ার বাসিন্দা ৫৮ বছরের মমতা চক্রবর্তী।
একটু ধাতস্থ হওয়ার পরে একে-একে অভিযোগপত্র লেখেন দার্জিলিংয়ের জেলাশাসকের দফতর, জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার দফতর এবং রাজ্য পর্যটন দফতরে।
অভিযোগপত্রের কয়েকটি লাইন নাড়া দিয়েছিল সরকারি আমলাদেরও। মমতাদেবী লিখেছিলেন, ‘‘আমরা বেড়াতে যাওয়ার জন্য হোটেল, বিমানের আসন, গাড়ি, গাইড সব কিছুর ব্যবস্থা আগে থেকে করেছিলাম। কিন্তু সব চেয়ে জরুরি জিনিসটি নিয়েই ভাবিনি। সেটা হল চিকিৎসা ব্যবস্থা। ধরেই নিয়েছিলাম নিশ্চয় দরকার পড়লে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা পাব। এত বড় পর্যটন কেন্দ্র বলে কথা!’’
মমতাদেবীর কথায়, সেই ভাবনাটাই ছিল সব চেয়ে বড় ভুল। ওই মহিলা লিখেছেন, ‘‘যার খেসারত আমাকে দিতে হল আমার সব থেকে নিকট জনকে।’’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘যেখানে দেশি-বিদেশি এত পর্যটক পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসেন, সেখানে উপযুক্ত আপৎকালীন চিকিৎসা না-থাকলে মানুষ আসবে কীসের ভরসায়?’’
গত ৭ মার্চ এই অভিযোগপত্র পাওয়ার পরেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। খোঁজখবর শুরু করে পর্যটন দফতর। দার্জিলিংয়ের মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে বৈঠকে বসে জেলাশাসক সিদ্ধান্ত নেন দার্জিলিং, কালিম্পং ও কার্শিয়াঙের সব সরকারি হাসপাতালে এ বার থেকে পর্যটকদের জন্য আলাদা হেল্প ডেস্ক ও রোগী সহায়ক থাকবে ২৪ ঘণ্টা।
আরও পড়ুন: ফাঁক নেই ভাঙড় জমি অধিগ্রহণে
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা অসিত বিশ্বাস জানিয়েছেন, প্রতিটি হোটেলে বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমের ইমার্জেন্সি নম্বর দেওয়া হবে। দেওয়া হবে অ্যাম্বুল্যান্সের নম্বর। কোনও পর্যটক অসুস্থ হলে সঙ্গে-সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকছে।
কিন্তু পাহাড়ের জেলা হাসপাতালগুলিতে কি জরুরি পরিষেবা দেওয়ার পরিকাঠামো রয়েছে? মমতাদেবীর অভিজ্ঞতা কিন্তু ভয়াবহ। গত ১১ ফেব্রুয়ারি স্বামী তাপস চক্রবর্তীর সঙ্গে তিনি বিবাহবার্ষিকী কাটাতে কালিম্পং এসেছিলেন। সে দিন রাতেই বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তাপসবাবুর। মমতাদেবীর কথায়, ‘‘এক জন চিকিৎসক, এক জন নার্স ও একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়া আর কোনও পরিষেবা কালিম্পং হাসপাতালে মেলেনি এবং কার্যত বিনা চিকিৎসায় চোখের সামনে মারা যান আমার স্বামী।’’
অথচ কয়েক মাস আগেই ওই হাসপাতালে ‘হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট’ খোলা হয়েছে। সেখানে ৪টি ভেন্টিলেটরও রয়েছে। তা হলে কেন সেখানে রাখা হয়নি তাপসবাবুকে? জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা বলেন, ‘‘হাসপাতালের সুপারকে তদন্ত চালিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।’’
পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবের মন্তব্য, ‘‘এমনটা হওয়ার কথা নয়। রাজ্যজুড়ে সমস্ত জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে হোটেলগুলির সঙ্গে স্থানীয় হাসপাতালের সমন্বয় বাড়াতে আমরা আরও জোর দিচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy