বিজয়া সম্মেলনীতে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে অনুব্রত মণ্ডল। বোলপুরের গীতাঞ্জলিতে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
এ কী সুর শোনা গেল ‘কেষ্টদা’র মুখে!
সে বার ছিল বিরোধীদের মনোনয়ন জমা করতে না দেওয়ার পরামর্শ। দরকার পড়লে ‘বোম’ মারার হুমকিও। তিন বছর আগে পঞ্চায়েত ভোটের মুখে টিভির পর্দায় তাঁর সেই হুমকি শুনে শিহরিত হয়েছিল জনতা। শাসকদলের সেই বিতর্কিত নেতা তথা দলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত ওরফে কেষ্ট মণ্ডলের মুখেই শোনা গেল এ বার উল্টো সুর!
রবিবার বোলপুরের গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে দলের বিজয়া সম্মেলনীর শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অনুব্রত মণ্ডল বললেন, ‘‘আমরা চাইছি না, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয় হোক। পঞ্চায়েতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকুক। পঞ্চায়েত ছোট জায়গা। তাই ছোট জিনিস বাজাব। ছোট জায়গায় বড় জিনিস বাজিয়ে লাভ নেই।” কী সেই ছোট জিনিস? স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে কেষ্টদার জবাব, ‘‘এ বার ঢাক নয়, একতারা বাজাব!”
যা শুনে জেলা তৃণমূলেরই নিচুতলার কর্মীরা মজা করে বলছেন, কেষ্টদা কি তবে ‘বোষ্টম’ হলেন?
অনুব্রত অবশ্য বরাবরই এ রকম। কখনও তঁার মুখে শোনা গিয়েছে ‘নির্দলদের বাড়ি জ্বালিয়ে’ দেওয়ার কথা। বিরোধীদের গোসাপ বা ধেড়ে ইঁদুর বলতেও কখনও দ্বিধা করেননি তিনি। সিপিএমের ‘বুকে তির’ মারার হুমকিও দিয়েছেন। সেই তিনি-ই আবার এক কর্মিসভায় ‘মিঠে সুরে’ বলেছিলেন, ‘‘সিপিএম যদি আমাদের দিকে বোমা ছোড়ে, তা হলে আমাদের বিধায়ককে বলব, ওঁদের বাড়িতে ফুলের তোড়া পাঠাতে।”
পঞ্চায়েত ভোটের আরও দু’বছর বাকি। অনুব্রতর নেতৃত্বে বহু আগেই তার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল। বীরভূমে বিরোধীদের হাতে থাকা বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েত সমিতি ও পঞ্চায়েত ইতিমধ্যেই ছিনিয়ে নিয়েছে তারা। দলে নাম লিখিয়েছেন কিছু বিরোধী জেলা পরিষদ সদস্যও। এ দিন তাঁর দায়িত্বে থাকা বীরভূমের ১১টি ও বর্ধমানের ৩টি বিধানসভা এলাকার নেতা-কর্মীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত ওই সভায় যাবতীয় কোন্দল ভুলে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে লক্ষ্য করে দলের সংগঠন আরও মজবুত করা নির্দেশ দেন অনুব্রত।
গেল বিধানসভা ভোটে ঢাকের চড়াম চড়াম ‘বাজানো’র কথা বলে সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে উঠে এসেছিলেন বীরভূমের এই দাপুটে নেতা। সেই ভোটেই অনুব্রতর ‘গুড়-বাতাসা’র রণনীতি নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে কম জল ঘোলা হয়নি। ভোটের সময় নির্বাচন কমিশন ওই নেতাকে কার্যত বোতলবন্দি করে ফেলেছিল। তবে কি পঞ্চায়েত ভোট বলেই কি ঢাক ছেড়ে একতারা বাজানোর কথা বললেন অনুব্রত— এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জেলার রাজনীতিতে। অনুব্রত নিজে অবশ্য এর উত্তর দেননি। এর বেশি কিছু ভেঙে বলতেও চাননি।
‘ঘরপোড়া’ বিরোধীরা কিন্তু তৃণমূলনেত্রীর স্নেহধন্য ‘দক্ষ সংগঠক’ অনুব্রতর আপাত নিরীহ এই মন্তব্যের আড়ালেও ‘সিঁদুরে মেঘ’ দেখছেন। কারণ, গত বার পঞ্চায়েত ভোটের অভিজ্ঞতা তাঁদের বড় সুখের নয়! সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোম তাই বলছেন, ‘‘উনি বাদ্যযন্ত্র বিশেষজ্ঞ। ছোটবড় সব রকম যন্ত্রই উনি বাজাতে পারেন! তবে, বাজনার আড়ালে দখলদারির রাজনীতি চলবে। আসল লক্ষ্য, রাজ্যকে বিরোধী-শূন্য করা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy