প্রতীক্ষা: পাহাড় ছেড়ে সমতলে নামবেন বলে গাড়ির জন্য ঠায় বসে এক বিদেশি পর্যটক। শনিবার দার্জিলিঙের চকবাজারে। ছবি: সন্দীপ পাল
আর পাঁচটা দিন ভোর চারটে থেকেই চকবাজারে হাঁকডাক শুরু হয়ে যায়। খুলে যায় চায়ের দোকান। গত পাঁচ বছর ধরে দার্জিলিংকে এমনই দেখেছেন সোনম প্রধান। এইচডি লামা রোডের একটি হোটেলে কাজ করেন তিনি। এ দিন সকাল সাতটায় চকবাজারে চলে এসেছিলেন বছর ত্রিশের এই যুবক। সুনসান চকবাজারে তখন শুধুই পর্যটকদের লাইন। সকলেই বাস ধরার অপেক্ষায়। অশান্তির ভয়ে পর্যটকদের মতো দার্জিলিং ছাড়তে চান সোনমও। কিন্তু প্রায় চার ঘণ্টা লাইন দিয়েও বাস পাননি। সোনমের কথায়, ‘‘নিরাপদে ফেরা তো দূরের কথা। হঠাৎ শুনি সিংমারিতে নাকি গুলি চলছে। পুলিশ সকলকে ফাঁকা করে দিল। এমন দার্জিলিং আগে দেখিনি।’’ অনির্দিষ্টকালের বন্ধের ফতোয়ায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে হোটেল। বন্ধ অধিকাংশ দোকান। পিঠে রেক্সিনের ব্যাগ নিয়ে চড়াই ভেঙে অনেকটা হেঁটে উঠে খিদের জ্বালায় রাস্তার এক পাশেই বসে পড়েছিলেন সোনম। চৌরাস্তার পাশে একটি বাড়িতে খিচুড়ি রান্নার ব্যবস্থা করেছিলেন স্থানীয় কয়েকজন। সোনম বলেন, ‘‘ওই খিচুড়ি না পেলে খালি পেটেই থাকতে হতো।
আরও পড়ুন: আতঙ্কেই দার্জিলিং ছাড়লেন জোসেফরা
এ দিন সকালে চকবাজারে বাসের জন্য লাইন দেখে সেখানে বাদামের ঝুড়ি নিয়ে ফেরি করছিলেন মুন্না রায়। আচমকাই গুলির শব্দে চারদিক কেঁপে ওঠে। মুহূর্তের মধ্যে হুড়োহুড়ি। ছোটাছুটির সময়ে কারও ধাক্কায় উল্টে গেল বাদামের ঝুড়ি। অনেকটা দূরে ক্লাবসাইড রোডে একটা লম্বা সিঁড়ির ধাপে দাঁড়িয়ে ২৬ বছর বয়সী বাদামওয়ালা কাঁদছিলেন। তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন মিথিলা রায়। তিনি চকবাজারে ঢোকার মুখে পালিশের কাজই করেন। মিথিলা বললেন, ‘‘দু’চার দিন সময় দিয়ে লাগাতার বন্ধ হলে না হয় আলু-পেঁয়াজ-চাল-আটা জমিয়ে রাখতাম। সেই সুযোগটাও পাইনি।’’
২৭ জুন থেকে তিন দিন বন্ধ শিথিল। সেও প্রায় ৯ দিন বাকি। এতদিন কী ভাবে চলবে সেই দুশ্চিন্তার নাওয়া-খাওয়া শিকেয় উঠেছে দার্জিলিঙের অনেক পরিবারের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy