Advertisement
০৫ মে ২০২৪

বছর না ঘুরতে ফের জামিন, আর প্রভাবশালী নন, এগোয়নি তদন্তও

সারদা মামলায় ফের নিম্ন আদালত থেকে জামিন পেলেন মদন মিত্র।২০১৫ সালের অক্টোবরে আরও একবার নিম্ন আদালত থেকে জামিন পেয়েছিলেন মদনবাবু। সে বার জামিন পাওয়ার ১৯ দিনের মাথায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তা বাতিল করে দিলে মদনকে জেলে ফিরে যেতে হয়। তার ৯ মাস ২১ দিন পরে শুক্রবার আলিপুর আদালত থেকে ফের জামিন পেলেন মদন। পুজোর ঠিক আগে জামিন পাওয়ায় সহবন্দিদের কাছে আনন্দ প্রকাশ করলেও বাড়তি উচ্ছ্বাস দেখাননি মদন।

মদন মিত্র

মদন মিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৩
Share: Save:

সারদা মামলায় ফের নিম্ন আদালত থেকে জামিন পেলেন মদন মিত্র।

২০১৫ সালের অক্টোবরে আরও একবার নিম্ন আদালত থেকে জামিন পেয়েছিলেন মদনবাবু। সে বার জামিন পাওয়ার ১৯ দিনের মাথায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তা বাতিল করে দিলে মদনকে জেলে ফিরে যেতে হয়। তার ৯ মাস ২১ দিন পরে শুক্রবার আলিপুর আদালত থেকে ফের জামিন পেলেন মদন।

পুজোর ঠিক আগে জামিন পাওয়ায় সহবন্দিদের কাছে আনন্দ প্রকাশ করলেও বাড়তি উচ্ছ্বাস দেখাননি মদন। তবে তাঁর বাড়ি ভবানীপুরে ও নির্বাচনী কেন্দ্র কামারহাটিতে খুশির হাওয়া। অনেকেই সবুজ আবির মেখে রাস্তায় নেমে পড়েন।

৩০ লক্ষ টাকার বন্ড এবং চারটি শর্তের ভিত্তিতে এ দিন আলিপুরের জেলা দায়রা আদালত মদন মিত্রের জামিন মঞ্জুর করে। আগামী ২৩ নভেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। এ দিন আদালত মদনকে জামিনের শর্ত হিসেবে জানিয়েছে, তিনি ভবানীপুর থানা এলাকার বাইরে যেতে পারবেন না। কিন্তু মদনের বাড়ি কালীঘাট থানা এলাকায়। এই নির্দেশ বদলের জন্য সিবিআই আর্জি জানালেও রাত পর্যন্ত আদালত তা করেনি। সিবিআইয়ের দাবি, আদালতের নির্দেশ সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত মদনবাবু জেল থেকে বেরোতে পারবেন না। প্রাক্তন পরিবহণ মন্ত্রীর আইনজীবীদের পাল্টা দাবি, জেল থেকে বেরোনোয় কোনও বাধা নেই। নিজের বাড়িতে ফিরতে না পারলেও ভবানীপুর থানা এলাকার মধ্যে যে কোনও জায়গায় তিনি থাকতেই পারেন। রাতে মদনের আইনজীবীরা আদালতের নির্দেশে আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে দিয়েছেন।

জামিন দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে এ দিন আদালত বলেছে, গত ৮ মাস ধরে সারদা মামলায় মদন মিত্র সংক্রান্ত তদন্তে তেমন কোনও অগ্রগতি হয়নি। তাঁর বিরুদ্ধে বার বার যে ‘প্রভাবশালী’ তত্ত্ব সিবিআই খাড়া করছিল, তারও পরিবর্তন হয়েছে। প্রথমত, তিনি এখন আর মন্ত্রী নন। তার উপরে এ বারের বিধানসভা নির্বাচনেও তিনি হেরে গিয়েছেন।

নিম্ন আদালতের জামিনের সিদ্ধান্তে হতাশ সিবিআই। এ দিনই নিম্ন আদালতে ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে আবেদন করেছিল তারা। আদালত তা খারিজ করে দেয়। সিবিআই কৌঁসুলি কে রাঘবচারিলু শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা আবার হাইকোর্ট যাব। আবার নিম্ন আদালতের দেওয়া এই জামিন বাতিল করে দেওয়া হবে। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবে।’’ তাঁর ক্ষোভ, ‘‘এর আগে যে ব্যক্তির জামিন হাইকোর্ট বাতিল করে দেয়, সেই ব্যক্তিকে কী করে নিম্ন আদালত জামিন দেয়, বুঝতে পারছি না।’’

মদনবাবুর আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘তাদের বক্তব্য না শুনেই জামিন দেওয়া হয়েছিল বলে গত বার অভিযোগ তুলেছিল সিবিআই। এ বার সেই অভিযোগ করার জায়গা নেই ওদের। সিবিআইয়ের বক্তব্য শুনে, মামলার কেস ডায়েরি দেখেই বিচারক জামিন দিয়েছেন।’’ মদনের আরেক আইনজীবী বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় জানান, শুক্রবার সকাল থেকে বিচারক মামলার কেস ডায়েরি খুঁটিয়ে দেখার পরে জামিন দেন।

২০১৩-র এপ্রিলে কয়েক হাজার কোটি টাকার সারদা কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসে। এই কেলেঙ্কারিতে রাজ্যের বর্তমান শাসক দলের একাধিক প্রভাবশালী নেতা-মন্ত্রীর নাম জড়িয়ে যায়। রাজ্য না চাইলেও এ নিয়ে সিবিআই তদন্ত চেয়ে মামলা হয়। শেষ পর্যন্ত ২০১৪-র মে মাসে সুপ্রিম কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। সারদা সংস্থার কাছ থেকে দফায় দফায় টাকা ও অন্যান্য সুবিধা নেওয়ার অভিযোগে ২০১৪-র ডিসেম্বরে সিবিআই গ্রেফতার করে তৃণমূল সরকারের তৎকালীন পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্রকে। তার পর থেকে বহু বার জামিনের আবেদন করেছেন মদন। গত বছর অক্টোবর মাসে একবার ছাড়া প্রতি বারই তাঁর সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আদালত।

এর মাঝে অসুস্থ হয়ে প্রথমে জেল হাসপাতাল ও পরে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হন মদন। সরকারি হাসপাতাল ছেড়ে বেসরকারি হাসপাতালেও ভর্তি হন মদন। সিবিআই আদালতে আপত্তি করায় তাঁকে এসএসকেএমে ফিরতে হয়। সেখানে থাকাকালীনই ২০১৫-র ৩১ অক্টোবর নিম্ন আদালত জামিন দেয় মদনকে। সিবিআইয়ের আবেদনের ভিত্তিতে কলকাতা হাইকোর্ট ১৯ নভেম্বর মদনের জামিন বাতিল করলে ফের জেলে যান তিনি। গত ৯ মাসে তিন বার জামিনের আবেদন জানালেও প্রতিবারই তা খারিজ হয়ে যায়।

আলিপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা জজ উত্তমকুমার নন্দীর এজলাসে মদনের জামিনের আবেদন নিয়ে দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে বিচারক মামলার কেস ডায়েরি চান। তখন সিবিআইয়ের তরফে মদনের সঙ্গে মরা হাতির তুলনা টেনে বলা হয়, মন্ত্রী বা বিধায়ক না থাকলেও তিনি এখনও প্রভাবশালী। এখন অনেকেই তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে চাইছেন। মদন ছাড়া পেলে সেই সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন।

এ দিন মদন জামিন পাওয়ার পরে আইনজীবীদের একাংশের কথায় বারেবারেই উঠেছে কুণাল ঘোষের প্রসঙ্গ। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ কুণালকে ২০১৩ সালের ২৩ নভেম্বর গ্রেফতার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধেও সারদার থেকে বেআইনি ভাবে টাকা ও অন্য সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। তিনিও বারবার জামিনের আবেদন করলেও তা মেলেনি। এ দিনের রায়ের পরে কুণাল-সহ সারদা কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া একাধিক ব্যক্তির জামিনের পথ খুলে যেতে পারে বলে মনে করছেন আইনজীবীদের একাংশ।

এ দিন মদনের জামিনের খবর পেয়ে আলিপুর আদালতে যান তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘খুবই খুশির দিন। এটা সত্যের জয়। ৬২৯ দিন আমাদের প্রিয় সহকর্মী জেলে ছিলেন। আইনের উপরে আমাদের ভরসা ছিল।’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘আদালতের নির্দেশ নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। তবে তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে যে সব পর্যবেক্ষণ শোনা যাচ্ছে, তাতে মোদীভাই-দিদিভাইয়ের খেলাই দেখছেন অনেকে!’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘মদন মিত্র জামিন পাওয়ায় আমি খুশি। আমি চাই এর পরে কুনাল ঘোষও জামিন পান। কারণ যাঁরা টাকা নিয়েছেন, তাঁরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন, বড় বড় কথা বলছেন। তা হলে মদন, কুনালই বা জেলে থাকবেন কেন?’’

মদন-কথা

২০১৪— ১২ ডিসেম্বর: গ্রেফতার করল সিবিআই

২০১৫— ৩১ অক্টোবর: নিম্ন আদালতে মিলল জামিন

১৯ নভেম্বর: হাইকোর্টে জামিন বাতিল, ফের জেলে

২০১৬— ৮ সেপ্টেম্বর: নিম্ন আদালতে জামিনের আবেদন

৯ সেপ্টেম্বর: নিম্ন আদালত থেকে আবার জামিন

জামিনের শর্ত

• ৩০ লক্ষ টাকার বন্ড

• ভবানীপুর থানা এলাকার

• বাইরে যাওয়া যাবে না

• পাসপোর্ট জমা দিতে হবে

• ডাকলেই সিবিআই দফতরে হাজিরা দিতে হবে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

madan mitra TMC bail
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE