Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

চুরি করেছিলেন ছেলে, ফেরালেন ভিক্ষুক মা

রিকশায় ফেলে যাওয়া ওই ব্যাগের লোভ সামলাতে না পেরে রিকশাচালক ব্যাগটা নিয়ে চম্পট দিয়েছিলেন নিজের গ্রামের বাড়িতে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দেবাশিস দাশ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৪০
Share: Save:

কলকাতা শহর দেখতে এসে ভুল করে রিকশায় ব্যাগ ফেলে চলে গিয়েছিলেন ভিন্‌ রাজ্যের এক বাসিন্দা। ওই ব্যাগেই ছিল তাঁর ২৭ হাজার টাকা, মোবাইল ফোন, এটিএম কার্ড-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র। রিকশায় ফেলে যাওয়া ওই ব্যাগের লোভ সামলাতে না পেরে রিকশাচালক ব্যাগটা নিয়ে চম্পট দিয়েছিলেন নিজের গ্রামের বাড়িতে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। যে বৃদ্ধা মায়ের গ্রামে দিন কাটে অন্যের ভরসায়, সেই মা ছেলের এই কীর্তিকলাপ জানতে পেরে টাকা সমেত ব্যাগ ফিরিয়ে দিতে বীরভূমের নানুর থেকে হাওড়ায় এসে পৌঁছেছিলেন একাই। ছেলেকে আর একটা সুযোগ দেওয়ার আর্জি জানিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলেন খোয়া যাওয়া ব্যাগ।

শুক্রবার সকালে এই ঘটনা ঘটেছে হাওড়ার গোলাবাড়ি থানায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১০ নভেম্বর ট্রেন থেকে হাওড়া স্টেশনে নেমেছিলেন উত্তরপ্রদেশের বারাণসীর বাসিন্দা মদন লাল। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী তিনি। বছর চল্লিশের মদনবাবুর ইচ্ছা ছিল, কলকাতা শহরটা ভাল করে ঘুরে দেখার। সে জন্য হাওড়া বাসস্ট্যান্ড চত্বর থেকে একটা রিকশা করে তিনি সস্তার হোটেলের সন্ধানে ঘুরছিলেন। পুলিশ জানায়, ওই সময়ে একটি হোটেল পছন্দ হওয়ায় তিনি ভুল করে সঙ্গে আনা ব্যাগ রিকশায় ফেলে হোটেলে ঢুকে পড়েন। রাতে খেয়াল হয়, যে ব্যাগটিতে টাকা ছিল, সেটি হারিয়ে গিয়েছে। ওই রাতেই তিনি অভিযোগ জানাতে হাজির হন গোলাবাড়ি থানায়।

আরও পড়ুন: ডিমের দাম বাড়তে বাড়তে ৭ টাকায় ঠেকেছে! কেন?

পুলিশ জানায়, ভিন্‌ রাজ্যের ওই ব্যক্তির কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরেই গোলাবাড়ি থানার দুই অফিসরাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, যে যে জায়গায় তিনি রিকশায় করে ঘুরেছেন, সে সব এলাকার ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখতে। সেই মতো মদনবাবুকে সঙ্গে নিয়ে ওই রাতেই সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ভাল করে দেখতে শুরু করে পুলিশ। শেষে জানা যায়, রিকশায় ব্যাগটি ফেলে চলে গিয়েছিলেন তিনি। ব্যাগটি নিয়ে রিকশাচালককে চলে যেতেও স্পষ্ট ভাবে দেখা গিয়েছে ওই ছবিতে।

এর পরে ওই রিকশাচলাকের ছবি নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরে অনুসন্ধান চালানোর পরে জানা যায়, তাঁর নাম মহম্মদ রবিউল।
বাড়ি বীরভূমের নানুরে। তিনি গোলাবাড়ি থানার গোলমোহর এলাকার বাসিন্দা হৃদয় দাস নামে এক ব্যক্তির রিকশা চালান। হৃদয়বাবুর ৩০টির-ও বেশি রিকশা আছে। এই তথ্য জানার পরেই ওই ব্যক্তিকে থানায় ডেকে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়। ভিন্‌ রাজ্যের বাসিন্দা অচেনা শহরে এসে বিপদে পড়েছেন জানতে পেরে হৃদয়বাবুই কথা দেন, তিনি নিজে রবিউলের কাছ থেকে ব্যাগ উদ্ধার করতে তাঁর গ্রামের বাড়িতে যাবেন।

পুলিশ জানায়, ওই রিকশার মালিক তাঁর কথা রাখেন। তিনি নিজেই নানুরে যান ব্যাগের সন্ধানে। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, রবিউলের হতদরিদ্র সংসারে তাঁর স্ত্রী এবং বৃদ্ধা মা আছেন। তাঁদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। রবিউলের একার আয়ে সংসার চলে না। তাই সংসার চালাতে বৃদ্ধা মাকে মাঝেমাঝে ভিক্ষা করতে বেরোতে হয়। পুলিশ জানায়, রিকশার মালিক নানুরে গিয়ে রবিউলকে পাননি। কিন্তু সামনে রবিউলের বৃদ্ধা মাকে পেয়েছিলেন। তাঁকেই জানিয়েছিলেন ছেলের সমস্ত কীর্তিকলাপ। এর পরে তিনি হাওড়ায় ফিরে এসেছিলেন।

পুলিশ জানায়, এর দু’দিন পরেই শুক্রবার সকালে গোলাবাড়ি থানায় এসে ভিন্‌ রাজ্যের বাসিন্দার খোয়া যাওয়া ব্যাগটি ফিরিয়ে দিয়ে যান ওই বৃদ্ধা। ব্যাগ খুলে দেখা যায়, মদনবাবুর সব টাকা, মোবাইল ফোন, এটিএম কার্ড সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। সেই ব্যাগ পেয়ে বেজায় খুশি মদনবাবুও। তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসন আমাদের রাজ্যেও আছে। কিন্তু এখানে পুলিশ যা করল, তা ওই রাজ্যে করবে কি না ঠিক বলতে পারছি না।’’

গোলাবাড়ি থানার ওসি তথাগত পাণ্ডে বলেন, ‘‘বৃদ্ধা ব্যাগ ফিরিয়ে দিয়ে শুধু একটাই অনুরোধ করেছেন। তাঁর ছেলেকে গ্রেফতার না করে যেন আর একটা সুযোগ দেওয়া হয়। তিনি যেন রিকশা চালিয়ে খেতে পারেন। না হলে তাঁদের সংসারটা ভেসে যাবে যে।’’ পুলিশ জানায়, বৃদ্ধার আর্জি মেনে রবিউলকে কী ভাবে কম শাস্তি দেওয়া যায়, এখন সেই চিন্তা করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narur নানুর
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE