সংশোধিত আইন মেনে দেশের অন্য সব রাজ্যই প্রাথমিক সমস্যা কাটিয়ে জেলা-ভিত্তিক শিশু কল্যাণ সমিতি তৈরি করে ফেলেছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ঝুলে রয়েছে সমিতি গঠনের প্রক্রিয়া।
শুধু পিছিয়ে পড়াই নয়। মেয়াদ রয়েছে, এমন কয়েকটি জেলার শিশু কল্যাণ সমিতিকে দিয়ে অন্য এক বা একাধিক জেলার সমিতির কাজ চালাতে হচ্ছে। কোথাও একটি জেলার হাতে পাঁচটি জেলার শিশু কল্যাণ সমিতির দায়িত্ব ন্যস্ত হয়েছে, কোথাও বা তিনটি আবার কারও হাতে চারটি সমিতির দায়িত্ব দেওয়া আছে। অভিযোগ, এর ফলে নিয়ম-বহির্ভূত ভাবে এক জনের সই নিয়েই কোন শিশুকে কোথায় রাখা হবে, তার লিখিত নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। অথচ নিয়ম অনুযায়ী লিখিত নির্দেশে তিন জনের স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক।
এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হল কেন?
রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতরের একাংশের কথায়, আসলে শিশু কল্যাণ সমিতির ক্ষমতা প্রথম শ্রেণির বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের সমান। তাই এই ধরনের সমিতিতে সদস্য হিসেবে যাতে থাকতে পারেন, সেই জন্য অনেকেই মন্ত্রীর কাছে সুপারিশ করেন। এত দিন এ ভাবেই সমিতি গঠিত হত বলে শাসক দলের সঙ্গে যুক্ত কাউন্সিলর কিংবা জেলা স্তরের দলীয় নেতারা শিশু কল্যাণ সমিতির চেয়ারপার্সন বা সদস্য হতেন। কিন্তু সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, শিশু কল্যাণ সমিতির চেয়ারপার্সন বা অন্য কোনও সদস্য কোনও ভাবেই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন না।
আগে জেলাশাসকের কাছ থেকে সম্ভাব্য সদস্যদের নামের তালিকা চেয়ে পাঠানো হত। দফতরের মন্ত্রীর সম্মতি ভিত্তিতে সদস্য চূড়ান্ত করে গড়া হত চূড়ান্ত সমিতি। কিন্তু সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, জেলা স্তরে প্রাথমিক সদস্য-নাম বাছাইয়ের পরে হাইকোর্টের কোনও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বাধীন কমিটিকে চূড়ান্ত বাছাইয়ের দায়িত্ব দিতে হবে। কিন্তু দফতর জেলা স্তরে নামের তালিকা তৈরি করতে পারলেও কেন্দ্রীয় বাছাই কমিটির চেয়ারপার্সন কে হবেন, তা চূড়ান্ত না-হওয়ায় কমিটি গঠন আটকে গিয়েছে।
শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা অবশ্য জানান, হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে অবসরপ্রাপ্ত কোনও বিচারপতির নাম চেয়ে পাঠানো হয়েছে। নাম পেলেই গড়া হবে কমিটি। তার পরে বৈঠক করে বাকি বিষয়গুলির মীমাংসা হবে।
আরও পড়ুন: ইটভাটায় থাকা শিশুদের হাল বদলাতে উদ্যোগ
জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনও চিন্তিত। কমিশনের তরফে প্রিয়াঙ্ক কানুনগো জানান, নতুন আইন তৈরি হওয়ায় বেশ কিছু রাজ্যে সাময়িক ভাবে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে সেই সমস্যা না-মিটিয়ে যে-ভাবে কাজ চালানো হচ্ছে, তাতে চিন্তা বাড়ছে। কেন না এখানে শিশুদের সুরক্ষা আইনের বিপরীতে গিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এর আগেও মেয়াদ-উত্তীর্ণ সমিতির মাধ্যমে শিশু দত্তক দেওয়ার মতো ঘটনা সামনে এসেছে। কিন্তু রাজ্য সরকার যে তা নিয়ে চিন্তিত নয়, বেআইনি ভাবে শিশু কল্যাণ সমিতির কাজ চালানোর ঘটনাই তার প্রমাণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy