Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
State news

সিঙ্গল বেঞ্চেই ঝুলে রইল পঞ্চায়েতের ভবিষ্যৎ

ভোট নিয়ে অনিশ্চয়তা অন্তত মঙ্গলবারের আগে কাটছে না।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৮ ১১:৩৮
Share: Save:

কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে ধাক্কা খেল শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন। পঞ্চায়েত ভোট প্রক্রিয়ায় সিঙ্গল বেঞ্চের দেওয়া স্থগিতাদেশকে চ্যালেঞ্জ করে যে আবেদন ডিভিশন বেঞ্চে করা হয়েছিল, তা আজ সোমবার বিকেলে খারিজ হয়ে গেল। সিঙ্গল বেঞ্চেই এই মামলার শুনানি চলবে বলে জানিয়ে দিল বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার এবং বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ। ফলে অন্তত কাল পর্যন্ত ঝুলে রইল পঞ্চায়েত মামলার ভবিষ্যত্।

এ দিনই দুপুরে হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ তার দেওয়া স্থগিতাদেশ মঙ্গলবার পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে। বিকেলে ডিভিশন বেঞ্চে জানিয়ে দেয়, সিঙ্গল বেঞ্চের কাজে তারা হস্তক্ষেপ করবে না। এই রায়ের ফলে, মঙ্গলবার ফের বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের বেঞ্চেই মামলার শুনানি হবে।

এ দিন ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানিতে প্রথমে নির্বাচন কমিশনের কাছে বিচারপতিরা জানতে চান, কত দিন পর্যন্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়সীমা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন ডিভিশন বেঞ্চকে জানায়, ২০১৮ সালের অগস্ট মাসের মধ্যেই নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এর পরই তৃণমূলের তরফে আইনজীবীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, সিঙ্গল বেঞ্চে মামলা চলছে। তার রায় বেরনোর আগেই কেন ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করা হল? এর উত্তরে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেলে সিঙ্গল বেঞ্চের তাতে স্থগিতাদেশ দেওয়ার কোনও অধিকার নেই। তাই সিঙ্গল বেঞ্চের এই স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধেই তাঁদের মামলা। দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পর ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, বিকেল ৫টায় এই মামলায় রায় দেওয়া হবে।

আর বিকেল ৫টায় ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, এই মামলায় সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ই হবে চূড়ান্ত। সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ে ডিভিশন বেঞ্চ কোনওরকম হস্তক্ষেপ করবে না। একই সঙ্গে সিঙ্গল বেঞ্চের কাছে ডিভিশন বেঞ্চের অনুরোধ, যেন দ্রুত এই মামলার নিষ্পত্তি করা হয়। প্রয়োজনে প্রতিদিন যেন এই মামলার শুনানি হয়। পাশাপাশি গত ১১ এপ্রিল পঞ্চায়েত মামলায় সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায়কেও মাথায় রেখে এগোতে বলা হয়েছে সিঙ্গল বেঞ্চকে।

আরও পড়ুন: মন্ত্রিত্বে থেকেই প্রতিবাদ, মমতাকে চিঠি দিচ্ছে জমিয়তে

এখন সিঙ্গল বেঞ্চের রায় যদি বিরুদ্ধে যায় তাহলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারে তৃণমূল এবং নির্বাচন কমিশন। কারণ আইনিভাবে সে রাস্তা বন্ধ হয়নি। তবে আইনজীবীদের একটা বড় অংশের মতে, সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে কতটা লাভবান হবে তৃণমূল, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। ১১ এপ্রিল শীর্ষ আদালতের রায় থেকেই তা স্পষ্ট। কারণ বিজেপির করা মামলা খারিজ করে ওই দিন শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছিল— নির্বাচন কমিশনের কাজে তারা কোনও হস্তক্ষেপ করতে রাজি নয়। এবং এও জানিয়েছিল, এই সংক্রান্ত যাবতীয় মামলা হাইকোর্ট দেখবে। অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্ট কার্যত হাইকোর্টকে এই মামলা নিয়ে চূড়ান্ত রায় দেওয়ার ক্ষমতা দিয়ে দেয়। তাই এ দিন ডিভিশন বেঞ্চের রায় শোনার পর তৃণমূলের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কেই মেনে নেওয়া হবে। সুপ্রিম কোর্টে যাবে না তৃণমূল।

আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত সন্ত্রাস নিয়ে অনশনে কংগ্রেস, দাবি রাষ্ট্রপতি শাসনের

ডিভিশন বেঞ্চের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে বিরোধীরা। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘কমিশন তো কাজ করতে চাইছে। কিন্তু কমিশনের এতো শক্তি নেই যে সে সরকারের বিরুদ্ধে কিছু করবে। সরকার আর পার্টি এক হয়ে গিয়ে পঞ্চায়েত ভোটকে একতরফা করার চেষ্টা করছে। বিরোধীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দিচ্ছে না। তার জন্যই আমরা কোর্টে গিয়েছিলাম।’’ বিজেপির জাতীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা বলেন, ‘‘আদালতের রায়ে নির্বাচন কমিশন এবং তৃণমূলের জোট বড় ধাক্কা খেল। কারণ রাজ্য সরকার এবং নির্বাচন কমিশন যে সঠিক কাজ করছে না, এই রায় থেকে তা প্রমাণ হল। আশা করব হার্ইকোর্ট সদর্থক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘আমি মনে করি এটা আমাদের নৈতিক জয়। আদালতে সত্যতা মান্যতা পেল।’’ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব বলেন, ‘‘এই রায়কে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE