অমরেন্দ্রকুমার সিংহ
বারো ঘণ্টার টানটান নাটক! নাচ-গান-ফাইটিং-এ ভরপুর সিনেমার মতো হয়তো নয়। কিন্তু সোমবার রাত ১০টায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন পেশের দিন বৃদ্ধির পরে তা ঠেকাতে শাসক দলের আইনের ফাঁক দেখানো, সঙ্গে প্রচ্ছন্ন হুমকি এবং শেষে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার— রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে ঘিরে উত্তেজনার অভাব ছিল না।
কমিশন সূত্রের খবর, সোমবার দিনভর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনারের কাছে অভিযোগ করে, শাসক দলের গুন্ডামির জেরে বহু স্থানেই তারা মনোনয়ন জমা দিতে পারেনি। তাই সময় বাড়ানো হোক। সন্ধ্যায় কমিশনার অমরেন্দ্রকুমার সিংহ কমিশনের সচিব নীলাঞ্জন শান্ডিল্যের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সচিব তাঁকে বলেন, গত ৮ দিনে বিরোধীরা যখন মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি, তখন এক দিনে আর এমন কী ফারাক হবে! কমিশনার সেই যুক্তি না মেনে রাতে নির্দেশ জারি করেন, ১০ তারিখও মনোনয়ন দেওয়া যাবে।
এ খবর শুনে ক্ষুব্ধ হন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা জানাচ্ছেন, এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়াই রীতি। উল্টে মুখ্যসচিব মলয় দে ও পঞ্চায়েতসচিব সৌরভ দাস বার বার ফোন করলেও কমিশনার ধরেননি।
আরও পড়ুন: নগ্ন করে নিগ্রহ চিত্র-সাংবাদিককে
সোমবার বেশি রাতে তিন নেতা-মন্ত্রী দক্ষিণ কলকাতায় অমরেন্দ্রর বাড়ি গিয়ে হাজির হন। উপস্থিত এক জনের কথায়, ‘‘আমরা তাঁকে ‘নরম’ করে বুঝিয়ে দিই কেন মনোনয়নের দিন বাড়ানোর প্রয়োজন নেই।’’
এরই মাঝে পঞ্চায়েত দফতরের এক বিশেষ সচিব কমিশনকে চিঠি লিখে বলেন, দিন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত আইন মোতাবেক হয়নি। রাজ্যের আপত্তি জানিয়ে এ দিন সকালে কমিশনারকে ফোন করেন মুখ্যসচিবও।
এ দিকে, মঙ্গলবার সকালে মনোনয়ন নিতে বিভিন্ন বিডিও অফিসে যান নির্বাচনী অফিসাররা। কিন্তু কোথাও পুলিশ নেই। জানা যায়, নবান্ন থেকে বলা হয়েছে, পুলিশ যাবে না। পুলিশ না থাকায় বিডিওরা মনোনয়ন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেন।
নাটক এখানে শেষ হয়নি। কমিশন সূত্রে খবর, রাজ্যের এক ‘হেভিওয়েট’ মন্ত্রী আরও দুই সতীর্থকে নিয়ে এ দিন সাতসকালে আবার কমিশনারের বাড়ি গিয়েছিলেন। তাঁকে কার্যত ঘুম থেকে তুলে জানানো হয়, দিন বৃদ্ধির নির্দেশ ফেরাতে হবে। গুটিকয় শিল্পপতিকে সিলিং অতিরিক্ত জমি পাইয়ে দেওয়ার পুরনো ‘কেস’ নতুন করে খোলা হতে পারে বলেও বার্তা রটে। ঘটনাচক্রে এর আগে অমরেন্দ্র ভূমিসচিব ছিলেন। তবে নবান্নের একটি মহল এ সব গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
এর মধ্যেই সামনে আসে তৃণমূল যুবনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি ফেসবুক পোস্ট। তাতে তিনি সোমবার গভীর রাতে লেখেন, ‘‘ছলচাতুরি আর অসাধু অভিসন্ধির কোনও জায়গা নেই। আগামিকাল আবার সবুজ ঝড় আসছে। যত বার লড়বি, তত বার হারবি।’’
এ দিন সকালে অমরেন্দ্র অফিসে এসেই দিন বাড়ানোর নির্দেশ প্রত্যাহার করেন। তার পর সারা দিন কার্যত একা বসেছিলেন। তিনি কি ভয়ে এই কাজ করলেন? ফোন ধরেননি অমরেন্দ্র। মেসেজ-এর জবাবও দেননি। মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘আমরা কেন ভয় দেখাতে যাব? কমিশনের কাছে মন্ত্রীরা কেউ গিয়ে থাকলে মনে রাখতে হবে তাঁরা দলেরও নেতা। দলের বক্তব্য জানাতেই পারি। বরং বিরোধীরাই কমিশনের উপরে চাপ সৃষ্টি করেছে।’’
কমিশনের এক কর্তার আক্ষেপ, ‘‘কমিশনারই আমাদের মহেশমতীর অমরেন্দ্র বাহুবলী। যদি এক জন কাটাপ্পা থাকত!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy