Advertisement
০৫ মে ২০২৪

জিতেও বোর্ড গড়া যাবে কি? বিনাযুদ্ধের ৩৪% ঘিরে সংশয়

এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘দীর্ঘ মামলা চললে বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রশাসক বসানোয় দোষের কিছু নেই। সরকার চাইলে যে অংশে ভোট হয়েছে সেখানকার সদস্যদের নিয়েই বোর্ড গঠনও করে ফেলতে পারে।’’

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৮ ০৩:৫৯
Share: Save:

বিনাযুদ্ধে জেতা ৩৪% আসনে ভোটের ফল প্রকাশে স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ১৪ মে ভোট হবে বাকি ৬৬% বুথে। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে যে সব বুথে ভোট হল না, সেখানে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত গঠনের কী হবে? এমন অনেক গ্রাম পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিযদ রয়েছে, যেখানে কিছু আসনে ভোট হচ্ছে, কিছুতে হচ্ছে না। ফলে সে সব পঞ্চায়েত বোর্ডগুলিই বা কী ভাবে গঠিত হবে?

সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ে বেশ কয়েকটি সম্ভাবনার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে মনে করছে পঞ্চায়েত দফতর। কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, যেখানে ভোট হচ্ছে সেখানে ১৭ মে গণনা হবে। কিন্তু তার পরেও কোথাওই বোর্ড গঠন করা যাবে না। তবে রাজ্যের সমস্ত চলতি পঞ্চায়েতের মেয়াদ অগস্ট পর্যন্ত। সরকারের আশা, তার আগে চূড়ান্ত রায় এসে যাবে।

কিন্তু সেটা যদি না হয়, তা হলে সমস্যায় পড়বে পঞ্চায়েত দফতর।

পঞ্চায়েত কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে পুরনো বোর্ডকে রেখে দেওয়ার সংস্থান সংবিধান বা পঞ্চায়েত আইনে নেই। সে ক্ষেত্রে প্রশাসক নিয়োগ করা হতে পারে। কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে প্রশাসক বসানো যাবে, তা-ও বিধিতে নির্দিষ্ট করা রয়েছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়, যুদ্ধ, আইনশৃঙ্খলার গুরুতর অবনতি ইত্যাদি কারণে প্রশাসক বসানো যায়। অতীতে নন্দীগ্রাম, খেজুরিতে গোলমালের সময়ে সেখানে প্রশাসক বসানো হয়েছিল। তখন আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে পঞ্চায়েত চালাতে অপারগতার কথা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে স্বীকার করতে হয়েছিল সরকারকে। প্রশাসক বসানোটাও তাই বিড়ম্বনার বলে মনে করছেন পঞ্চায়েত কর্তাদের একাংশ।

আরও পড়ুন: ভোট ১৪-ই

যদিও এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘দীর্ঘ মামলা চললে বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রশাসক বসানোয় দোষের কিছু নেই। সরকার চাইলে যে অংশে ভোট হয়েছে সেখানকার সদস্যদের নিয়েই বোর্ড গঠনও করে ফেলতে পারে।’’

কী ভাবে? পঞ্চায়েত কর্তাদের একটি অংশের মতে, যে সব পঞ্চায়েতে কোনও আসনেই ভোট হয়নি, সেখানে সরাসরি প্রশাসক বসানো যেতে পারে। পরে আদালতের নির্দেশমতো কাজ হবে। কিন্তু যে সব পঞ্চায়েতে কিছু আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফয়সালা হয়েছে সেখানে সমস্যা হবে। কারণ, ভোটে জেতা প্রার্থীদের নিয়েই প্রাথমিক বোর্ড গঠন যেতে পারে। কিন্তু সমস্যা হল, বোর্ড গড়তে হলে গ্রাম পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতিগুলিতে অন্তত সাত জন সদস্যকে জিতে আসতেই হবে।

পঞ্চায়েত বিধি অনুযায়ী, গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রথম বৈঠকে প্রধান অথবা উপ-প্রধান, সমিতিতে সভাপতি অথবা সহ-সভাপতি নির্বাচন করা হয়। এর পরের বৈঠকে স্বাস্থ্য, অর্থ, খাদ্য, নারী ও শিশু কল্যাণ এবং পূর্ত— এই পাঁচটি উপসমিতি গঠন করতে হয়। এক জন নির্বাচিত সদস্য দু’টি উপসমিতির প্রধান হতে পারেন। প্রতিটি উপসমিতির সদস্য সংখ্যা পাঁচ। তবে কমপক্ষে দু’জন সদস্য থাকলেই উপসমিতি গঠন করা সম্ভব। এক জন সদস্য সর্বোচ্চ দু’টি উপসমিতিতে থাকতে পারেন। একই সঙ্গে অন্য দু’টি উপসমিতির প্রধানও হতে পারেন তিনি। ফলে সব মিলিয়ে অন্তত ৭ জন না হলে বোর্ড গঠন করা যাবে না। আর সে ক্ষেত্রে জয়ের পরেও অধরা থেকে যাবে পঞ্চায়েত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE