Advertisement
১৮ মে ২০২৪

কালি লাগছে কার মুখে, প্রশ্ন তৃণমূলেই

আরামবাগে মহকুমাশাসকের দফতর থেকে ফেরার পথে শনিবারের ওই ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যানে ছড়িয়ে পড়েছে দ্রুত। প্রবল প্রতিক্রিয়া হয়েছে সব মহলেই।

মারধর: রেহাই নেই মহিলা প্রার্থীরও। শনিবার আরামবাগে। ফাইল চিত্র

মারধর: রেহাই নেই মহিলা প্রার্থীরও। শনিবার আরামবাগে। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৮ ০৬:০৩
Share: Save:

দিনের বেলায় রাস্তার উপরে কিছু মহিলাকে ঘিরে ধরেছে দুর্বৃত্ত বাহিনী। চুলের মুঠি ধরে চলছে এলোপাথাড়ি মার। মুখে মাখিয়ে দেওয়া হল কালিও। অপরাধ? তাঁরা বামফ্রন্টের শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের হয়ে মনোনয়ন পেশ করতে গিয়েছিলেন!

আরামবাগে মহকুমাশাসকের দফতর থেকে ফেরার পথে শনিবারের ওই ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যানে ছড়িয়ে পড়েছে দ্রুত। প্রবল প্রতিক্রিয়া হয়েছে সব মহলেই। এবং এ সব ঘটনা দেখে ভিন্ন সুর দেখা দিয়েছে শাসক শিবিরেও। প্রকাশ্যে কেউ মুখ না খুললেও একান্ত আলোচনায় তৃণমূলের একাধিক নেতা-সাংসদ প্রশ্ন তুলছেন, কালি আসলে লাগছে কার মুখে? মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়ন প্রকল্প এবং দুর্বল বিরোধী শক্তির দৌলতে যে পঞ্চায়েত নির্বাচন অনায়াসে উতরে যাওয়া যেত, সেখানে অহেতুক হাতে রক্ত মাখার কি দরকার ছিল?

শাসক শিবিরের অন্দরেই যখন গুন্ডামি নিয়ে প্রশ্ন, বিরোধীরাও তখন চাপ বাড়ানোর সব রকম চেষ্টা করছে। আরামবাগে যাঁদের গায়ে-মুখে কালি লেপা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে ছিলেন গোঘাটের প্রাক্তন বিধায়ক বিশ্বনাথ কারক ও তাঁর স্ত্রী। অতীতে সিপিএমের সঙ্গে শরিকি লড়াই করে রাজনীতি চালিয়ে গিয়েছেন বিশ্বনাথবাবুরা। কিন্তু এমন হেনস্থার মুখে পড়েননি। বামফ্রন্টের প্রাক্তন সচেতক বিশ্বনাথবাবু রবিবার তাই আরামবাগের এসডিপিও-র কাছে গিয়ে সাফ বলে এসেছেন, ‘‘এর পরে গ্রামে, বাড়িতে হামলা হবে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ছেলেটাকে আপনাদের কাছে দিয়ে যাব। আর আমি গায়ে আগুন দিয়ে মরব!’’

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের প্রশ্ন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য জুড়ে নারী দিবস পালন করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর দলের দুষ্কৃতীদের হাতে মহিলাদের এই আক্রান্ত হওয়ার ছবি কি তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ?’’ ফ ব-র রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তাঁরা আক্রান্তদের নিয়ে এসে অবস্থানে বসবেন।

তৃণমূলের এক সাংসদের বক্তব্য, ‘‘বিরোধীদের এই সুযোগ তো করে দেওয়া হচ্ছে।’’ বাঁকুড়ার এক ব্লক সভাপতির প্রশ্ন, ‘‘সব আসনে অবাধ লড়াই হলেও বিরোধীরা বড় জোর একটা-দুটোয় সুবিধা করতে পারবে। এই হেলমেট বাহিনীর কী দরকার!’’

দলের এক নেতা তথা প্রাক্তন আমলার মতে, হিংসা রুখতে প্রকাশ্যে বার্তা দেওয়া উচিত ছিল তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের। সিপিএমের আমলে হিংসার ঘটনায় অনেক সময়েই জ্যোতি বসু বা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যে কৌশল নিতেন। অথচ এখন চন্দ্রবাবু নায়ডুর বৈঠক থেকে ডেভিস কাপ পর্যন্ত অন্য নানা বিষয়ে টুইট করছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দিয়ে রোজ বিরোধীদেরই কটাক্ষ করা হচ্ছে!

শাসক শিবিরের একাংশের আশঙ্কা, গুন্ডামিতে দল রাশ না টানায় প্রশাসনিক ভাবে রাজ্যের ব্যর্থতা প্রমাণ করার সুযোগ মিলছে। এর পরে বাঁচার তাগিদে বিরোধী কর্মীরা আরও বেশি করে বিজেপির দিকে ঝুঁকতে পারেন। আর লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূলের প্রকৃত জনসমর্থন যাচাইয়ের সুযোগও হাতছাড়া হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE