তিন সপ্তাহেরও বেশি আগে গুলি চলেছিল ভাঙড়ে। সেই ঘটনায় নিহত দু’জনের দেহে পাওয়া বুলেটের ব্যালিস্টিক পরীক্ষা এখনও না-হওয়ায় একই সঙ্গে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করল কলকাতা হাইকোর্ট। তার পরেই বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী জানিয়ে দিলেন, গুলি চালানোর ওই ঘটনার তদন্ত হবে হাইকোর্টের নজরদারিতে।
১৭ জানুয়ারি ভাঙড়ে গুলি চালানোর ঘটনায় মহম্মদ মফিজুল আলি খান ও আলমগির মোল্লা নামে দুই যুবকের মৃত্যু হয়। বুধবার হাইকোর্টের নজরে আসে, নিহত দু’জনের দেহ থেকে যে-সব বুলেট উদ্ধার করা হয়েছে, গত প্রায় এক মাসে তার ব্যালিস্টিক পরীক্ষাই হয়নি। সেই সব বুলেট কোথায়? বিচারপতি বাগচীর প্রশ্নের জবাবে সরকারি কৌঁসুলি জানান, নিহতদের ময়না-তদন্ত যে-হাসপাতালে হয়েছে, বুলেট রয়ে গিয়েছে সেখানেই। তদন্তকারীদের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে বিচারপতি বাগচী তখনই বলেন, ‘‘ঘটনাটি খুবই স্পর্শকাতর। এ বার তার তদন্ত হবে আদালতের নজরদারিতে। তদন্তে কতটা অগ্রগতি হল, তদন্তকারীকে কিছু সময় অন্তর হাইকোর্টে তা জানাতে হবে।’’
কাদের বন্দুকের গুলিতে ওই দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে, তা জানতে যে ঘাতক বুলেটের ব্যালিস্টিক পরীক্ষা অত্যন্ত জরুরি, সেটা এ দিন সরকার পক্ষকে মনে করিয়ে দিয়েছে হাইকোর্ট। বিচারপতির নির্দেশ, মামলার কেস ডায়েরি-সহ তদন্তকারী অফিসারকে চার সপ্তাহ পরে তাঁর আদালতে হাজির হতে হবে। এবং ওই দিন পর্যন্ত তদন্তের কতটা কী অগ্রগতি হল, সে-দিন হাইকোর্টে তা-ও জানাতে হবে তদন্তকারী অফিসারকে।
বিদ্যুতের গ্রিড নিয়ে আন্দোলনের জেরে ভাঙড়ে জনতা-পুলিশ সংঘর্ষে নিহত মফিজুলের বাবা সুকুর আলি খান ও দাদা এনতাজুল আলি খান সিবিআই তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে মামলা করেছেন। এ দিন ছিল সেই মামলার শুনানি। আবেদনকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে অভিযোগ করেন, পুলিশের গুলিতে ওই যুবক-সহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। অথচ পুলিশ তা স্বীকার করছে না। একই সঙ্গে বিকাশবাবু জানান, মফিজুলের দাদাকে দিয়ে পুলিশ সাদা কাগজে সই করিয়ে খেয়ালখুশিমতো এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে। সেই তদন্ত নিরপেক্ষ হতে পারে না।
বিচারপতি তখন সরকারি কৌঁসুলি শুভব্রত দত্তের কাছে জানতে চান, যে-বুলেটে মৃত্যু হয়েছে, তা কোথায়। শুভব্রতবাবু জানান, যে-হাসপাতালে ময়না-তদন্ত হয়েছে, বুলেট রয়েছে সেখানকার কর্তৃপক্ষের কাছে। এ কথা শুনে বিচারপতির পরের প্রশ্ন, ‘‘প্রায় এক মাস হতে চলল। এখনও সেই বুলেটের ব্যালিস্টিক পরীক্ষা হল না কেন?’’ সরকারি কৌঁসুলি একটি রিপোর্ট দাখিল করে জানান, ওখানে গোলমালের সময় একটি টাটা সুমো গাড়ির ভিতর থেকে গুলি চালানো হয়েছিল। মৃত্যু হয় সেই গুলিতেই।
ব্যালিস্টিক পরীক্ষা না-করে এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায় না বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর অভিযোগ উঠলে সেটা অবশ্যই খুব স্পর্শকাতর বিষয়। কোন পরিস্থিতিতে গুলি চলল, তা দেখতে হবে।’’ তার পরেই তিনি জানান, এই মামলায় মূল বিচার্য তিনটি। • পুলিশ গুলি চালিয়েছিল কি না। • পুলিশ যদি গুলি না-চালিয়ে থাকে, তা হলে কে চালাল। • ওখানে ব্যবহৃত বুলেটের ব্যালিস্টিক পরীক্ষার রিপোর্ট ঠিক কী বলছে।
সরকারি কৌঁসুলি জানান, ওই ঘটনার ঠিক আট দিনের মাথায় অর্থাৎ ২৫ জানুয়ারি সিআইডি-র হাতে তদন্তের দায়িত্ব তুলে দিয়েছে রাজ্য সরকার। নিহতদের ময়না-তদন্তের রিপোর্ট চেয়েছেন তদন্তকারীরা। তাঁরা ওই সব বুলেট এবং নিহতদের জামাকাপড়ও পরীক্ষা করে দেখবেন। ঘটনার পরে অকুস্থলে ফরেন্সিক দলও পাঠানো হয়েছিল। এ-সব শুনে বিচারপতি বাগচী বলেন, ‘‘তদন্ত যে-ভাবে চলছে চলুক। তবে এ বার থেকে তা হবে হাইকোর্টের নজরদারিতে।’’
ভাঙড়ে ধৃত নকশাল নেতা প্রদীপ সিংহ ঠাকুর ও নেত্রী শর্মিষ্ঠা চৌধুরীকে এ দিন বারুইপুর আদালতে তোলে সিআইডি। দু’জনকেই ফের ১৪ দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। ভাঙড়ে আন্দোলনকারী নকশাল নেতাদের বিরুদ্ধে আদালত-চত্বরে মিছিল করে তৃণমূল। দুপুরে শর্মিষ্ঠাদের আদালতে আনার পরে তাঁদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখানো হয়। শর্মিষ্ঠা বলেন, ‘‘নকশাল আন্দোলন জোর করে বন্ধ করা
যায় না। মানুষের আন্দোলনে জোর খাটে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy