Advertisement
০৩ মে ২০২৪
গাঁয়ে পদ্ম বিস্তারে রুচি কম

প্রচার পেতে মত্ত নেতারা

ইদানীং রাজ্যে বিজেপির ভোট বাড়ছে। কিন্তু দলেরই বড় অংশের মতে, তার অনেকটাই পরিস্থিতির ফেরে। জেলায় জেলায় না বিজেপি-র সংগঠন বিশেষ ছড়িয়েছে, না আন্দোলন দানা বেঁধেছে। বরং, বিজেপি-র বেশ কিছু নেতা সংগঠনের কাজের চেয়ে টিভি বা সংবাদপত্রে নাম ও ছবি তুলতে বেশি ব্যস্ত বলে দলের অন্দরেই অভিযোগ উঠছে।

রোশনী মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:০৮
Share: Save:

রাজ্য বিজেপিতে রাহুল সিংহের জমানায় তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতারা প্রায়ই অভিযোগ করতেন, দলটা রাস্তায় আন্দোলনে নেই। টিভির পর্দায় আর সংবাদপত্রের পাতায় আছে। এখন দিলীপ ঘোষের আমল। পালাবদলের পর একই অভিযোগ উঠছে তাঁর টিমের বিরুদ্ধেও।

ইদানীং রাজ্যে বিজেপির ভোট বাড়ছে। কিন্তু দলেরই বড় অংশের মতে, তার অনেকটাই পরিস্থিতির ফেরে। জেলায় জেলায় না বিজেপি-র সংগঠন বিশেষ ছড়িয়েছে, না আন্দোলন দানা বেঁধেছে। বরং, বিজেপি-র বেশ কিছু নেতা সংগঠনের কাজের চেয়ে টিভি বা সংবাদপত্রে নাম ও ছবি তুলতে বেশি ব্যস্ত বলে দলের অন্দরেই অভিযোগ উঠছে।

আরও পড়ুন: গুজরাতই মডেল, মন্তব্য কেশরীর

যেমন-বাঁকুড়ার এক চিকিৎসক নেতা। ছিলেন রাজ্য বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক। কাজে সন্তুষ্ট না হয়ে দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের নির্দেশে তাঁকে করে দেওয়া হয়েছে সহ সভাপতি। যে পদের গুরুত্ব অপেক্ষাকৃত কম। কিন্তু তাতেও সংগঠন বিস্তার বা আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য ঘাম না ঝরিয়ে প্রচারে আসার সহজ পথ হিসাবে সংবাদমাধ্যমে ভেসে থাকার নিরন্তর প্রয়াস তিনি চালিয়েই যাচ্ছেন। এমনকী, দলের মধ্যে তিনি চক্রান্তের শিকার, এই তত্ত্বও সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টায় আছেন ওই নেতা। উত্তরবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিলিগুড়ির এক নেতা, উত্তর ২৪ পরগনার এক সংস্কৃতিপ্রেমী প্রাক্তন বিধায়ক, এক অভিনেত্রী নেত্রী, এক কেন্দ্রীয় নেতা— বিজেপি-তে অনেকেই আছেন যাঁরা মাঠের বদলে মিডিয়া-মত্ত বেশি। অথচ দলের সভাপতি অমিত শাহের স্পষ্ট নির্দেশ, দলকে বাড়াতে গ্রামে যেতে হবে নেতাদের।

বিজেপির এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘‘ব্যক্তিগত পছন্দ এবং লাভের নিরিখে দলে দায়িত্ব বণ্টন করা হচ্ছে। ফলে অনেক যোগ্য লোক কাজের অভাবে বসে যাচ্ছেন। তাঁরা ক্ষুব্ধ। কিন্তু সমস্যা সমাধানের চেষ্টা না করে নেতাদের অনেকেই শুধু টিভিতে মুখ দেখাতে এবং কাগজে নাম ছাপাতে ব্যস্ত।’’ ওই নেতার আরও বক্তব্য, ‘‘সঙ্ঘকে আর আদর্শ হিসাবে নয়, মুকুটের পালক হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে পদ এবং সংবাদমাধ্যমে প্রচার পাওয়ার জন্য।’’

বিজেপির সহ সভাপতি সুভাষ সরকার অবশ্য এই অভিযোগের সঙ্গে একমত নন। তিনি বলেন, ‘‘আমি এবং আরও অনেক নেতাই বুথ স্তরের সংগঠন গড়ায় মন দিয়েছি। ফলে সংগঠনের কাজ হচ্ছে না, এই ধারণা ঠিক নয়।’’ উত্তরবঙ্গের আহ্বায়ক রথীন বসুরও দাবি, ‘‘দলে এ রকম কোনও সমস্যা নেই। সব বিরোধী দলের অপপ্রচার। আমাদের সংগঠন খুব ভাল এগোচ্ছে বলেই আমরা পুরভোটে ধূপগুড়িতে প্রায় ৪২% এবং বুনিয়াদপুরে প্রায় ২৮% ভোট পেয়েছি। আগামী দিনে আমরাই সরকার গড়ব।’’ দলের কোর কমিটির সদস্য শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘প্রচারের প্রতি মোহ কোনও কোনও মানুষের চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। আমাদের দলে এই সমস্যা আছে কি না, আমার জানা নেই। তবে থাকলে তা দু’-এক জনের মধ্যে থাকতে পারে। সেটা ব্যতিক্রম। তা দিয়ে মূল দলটাকে বিচার করা ভুল হবে।’’ বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহেরও বক্তব্য, ‘‘সংগঠনের কাজ ভালই হচ্ছে। নতুন যাঁরা দায়িত্ব পেয়েছেন, তাঁদের কাজের মূল্যায়ন ভবিষ্যতে হবে।’’

আর বিজেপির মহিলা মোর্চার সভানেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়কে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘সংগঠন এবং আন্দোলনের দায়িত্ব আলাদা লোককে দিলে কোনও অসুবিধা থাকবে না। যাঁর সংগঠনের দায়িত্ব থাকবে, তিনি নিঃশব্দে সেই কাজ করবেন। আর যাঁর আন্দোলনের দায়িত্ব থাকবে, তিনি প্রচারের আলোয় আসবেন।’’ তবে ঘাম না ঝরিয়ে শুধু সেলফি তোলার জন্য আন্দোলনে আসা যাবে না বলে মহিলা মোর্চার কর্মীদের জানিয়ে দিয়েছেন লকেট। আর দলের সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘প্রচার ছাড়া তো রাজনীতি হয় না। দলের কাজ করে কেউ নাম-ছবি ছাপাতে চাইলে দোষ কোথায়?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE