Advertisement
০১ মে ২০২৪

বিপুল জয়ে বিঁধে রইল পদ্ম-কাঁটা

এ তো নেহাত সংখ্যাতত্ত্বের হিসেব। কিন্তু, ভোটের এই ফল বেশ কিছু প্রশ্ন উসকে দিয়েছে। তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটিতে বিজেপি যে ভাবে ভোট বাড়িয়েছে, উপরে আমল না দিলেও, দলের অন্দরে কিন্তু তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

সুপ্রকাশ মণ্ডল
নোয়াপাড়া শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৫
Share: Save:

বিপুল ভোটে জয়। তবে, সেই জয়ের উচ্ছ্বাসেও বিঁধে রইল পদ্মকাঁটা।

নোয়াপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তৃণমূল জিতেছে ৬৩ হাজার ভোটে। গত ভোটের তুলনায় ভোট বেড়েছে অনেকটাই। ভোট বেড়েছে বিজেপিরও। কমেছে সিপিএম-কংগ্রেসের ঝুলিতে।

এ তো নেহাত সংখ্যাতত্ত্বের হিসেব। কিন্তু, ভোটের এই ফল বেশ কিছু প্রশ্ন উসকে দিয়েছে। তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটিতে বিজেপি যে ভাবে ভোট বাড়িয়েছে, উপরে আমল না দিলেও, দলের অন্দরে কিন্তু তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

ঘোর বাম আমলে শিউলি পঞ্চায়েত তাদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল তৃণমূল। তারপর থেকে ওই এলাকা তৃণমূলের ‘শক্ত ঘাঁটি’ হিসেবেই পরিচিত। কিন্তু শিউলি এবং মোহনপুর পঞ্চায়েতে বিজেপি অনেকটাই ভোট বাড়িয়েছে এ বার। এমনকী, বেশ কয়েকটি বুথে তৃণমূলের থেকে বেশি ভোটও পেয়েছে। শিউলি-মোহনপুরে তৃণমূলের দাপট যে অব্যাহত, তা নিয়ে বিরোধীদেরও সন্দেহ নেই। তার পরেও বিজেপির এমন বাড়বাড়ন্ত কী করে সম্ভব হল? ভোটের দিন সকাল থেকেই বিরোধীরা বার বার অভিযোগ করেছে, তাদের ভোটারদের বুথে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এই এলাকায় কংগ্রেসের ভোট তেমন ছিল না। ফলে তাদের ভোট বিজেপির বাক্সে যাওয়ার প্রশ্ন নেই। সিপিএমের ভোট বিশেষ কমেনি। কমেছে তৃণমূলেরই ভোট। এই পরিসংখ্যান মাথায় রেখে তাই তৃণমূলের এক স্থানীয় নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘আসলে আমাদের কিছু ভোটার নানা কারণে বিরক্ত হয়ে বিজেপির দিকে ঝুঁকেছেন।’’

‘বিরক্তি’র কারণ কী? তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে উঠে আসছে বেশ কিছু তথ্য। প্রথমত, ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের মধ্যে হলেও এই এলাকা পুরোপুরি বাংলাভাষী অধ্যুষিত। সেখানে হিন্দিভাষী প্রার্থী সুনীল সিংহকে মেনে নিতে অনেকের অসুবিধা হয়েছে।

এ তো গেল ভোটারদের কথা। এর পরে রয়েছেন শাসক দলের স্থানীয় নেতারা। ভোট নিয়ন্ত্রণে ভাটপাড়ার বিধায়ক অর্জুন সিংহের একক কর্তৃত্ব স্থানীয় নেতাদের অনেকে মেনে নিতে পারেননি। যা বহু কর্মী-সমর্থকের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলেও দলের একটি সূত্রের ব্যাখ্যা। যার ফায়দা পুরোপুরি তুলেছে বিজেপি।গত ভোটে সিপিএম এখানে ছিল না। কিন্তু জোট প্রার্থী, কংগ্রেসের মধুসূদন ঘোষ তৃণমূলের থেকে এক হাজার বেশি ভোট পেয়ে জিতে যান। মধুসূদনবাবুর মৃত্যুতেই উপনির্বাচন হল নোয়াপাড়ায়। কিন্তু কংগ্রেস সেখানে চতুর্থ। তাদের ঝুলিতে ভোট পড়েছে মাত্র ১০ হাজার। গত বিধানসভা ভোটে বিজেপি পেয়েছিল ২৩ হাজার ভোট। এ বার তা পৌঁছেছে ৩৮ হাজারে। ওয়াকিবহাল মহলের মত, যদি ধরে নেওয়া হয় যে, গত বার সিপিএমের ভোটবাক্সে ভর করে কংগ্রেস বৈতরণী পার হয়েছিল, তা হলে প্রশ্ন উঠবে, সিপিএমের সেই ভোটই বা গেল কোথায়?

সিপিএমের প্রার্থী গার্গী চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘আমাদের ভোটারদের তো বুথেই যেতে দেওয়া হয়নি। স্বাভাবিক ভাবেই ভোট কমার কথা।’’ কিন্তু তিনি যেটা বললেন না, সে কথা বলছেন তাঁর দলেরই কর্মীরা। তাঁদের মতে, দলের কোনও নেতাকেই সেই অর্থে ভোটের ময়দানে দেখা যায়নি। গার্গীকে কার্যত একাই লড়তে হয়েছে। তবে বিজেপির এই ভোট বৃদ্ধিকে তেমন আমল দিতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। ব্যারাকপুরের বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত বলছেন, ‘‘গত লোকসভা ভোটে নোয়াপাড়া কেন্দ্রে বিজেপি ৪২ হাজার ভোট পেয়েছিল। পরে বিধানসভা ভোটে তা কমে দাঁড়ায় ২৩ হাজারে। ফলে, তাঁদের এই বৃদ্ধি তেমন চিন্তার কিছু নয়।’’

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, গত বিধানসভা ভোটে যদি ভোট কমেই থাকে, উপনির্বাচনে তা বেড়ে গেল কী করে। জয়ী হয়েও এ প্রশ্ন ভাবাচ্ছে শাসক দলের অনেককেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

By-Poll BJP TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE