মোবাইলে কেউ চালিয়ে দিয়েছিল রাজেশ খন্নার হিন্দি ছবির গানটা। ‘শুন চম্পা, শুন তারা, কোই জিতা, কোই হারা’! ফলপ্রকাশের পরে গানের তালে শরীর দোলাচ্ছিলেন গারুলিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান সুনীল সিংহ।
শুধু পুরপ্রধান থেকে নতুন বিধায়ক হওয়ার জন্য যে পথ পেরিয়েছেন সুনীল, তার হিসাব নিলে অবশ্য দেখা যাচ্ছে নোয়াপাড়ায় গণতন্ত্র শুধু নাচ দেখায়নি! রীতিমতো শিবের তাণ্ডব করেছে!
নোয়াপাড়ার বুথওয়াড়ি হিসাব বলছে, মোট বৈধ ভোট যেখানে ৯৯৭, ৯৯৮, ৯৯৯ বা ১০৪১, সেখানে তৃণমূল প্রার্থী সুনীলই পেয়েছেন ৯৭৯, ৯৬৭, ৮৭০ বা ৯২০! বাকি ভোট ছিটেফোঁটা করে ভাগ হয়েছে সিপিএমের গার্গী চট্টোপাধ্যায়, বিজেপির সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কংগ্রেসের গৌতম বসুর মধ্যে। বুথের পর বুথে সিপিএমের ভাগে জুটেছে কোথাও ৪, ৫, ১২, ৬, ২, কোথাও ১২, ২২, ২৪টি ভোট! বিজেপির
হাল আবার মন্দের ভাল! তারা সিপিএমের চেয়ে একটু বেশি জনসমর্থন আদায় করে বুথপিছু ১৪, ২৬, ১০, ২৮, ৪০ বা ৮২, ১০৮টি ভোট পেয়েছে।
কিছু বুথের নমুনা তুলেই নির্বাচন কমিশনকে চিঠি পাঠাচ্ছেন পরাজিত প্রার্থীরা। তাঁদের চেষ্টা, কমিশনকে ‘অবাধ ভোটে’র ছবিটা জানিয়ে রাখার! বিজেপির ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সন্দীপবাবুর কথায়, ‘‘ভোটের দিনই মহকুমাশাসকের দফতরে গিয়ে আমরা বলেছিলাম, এই প্রহসন আটকান। বিধানসভা ভোটে যদি এই হাল হয়, পঞ্চায়েত ভোটে কী হবে তা হলে? কমিশনের কাছে দাবি, ভবিষ্যতের জন্য তারা পদক্ষেপ করুক।’’ সিপিএম প্রার্থী গার্গীও বলছেন, ‘‘এলাকার মানুষ জানেন, কী ভাবে বুথের পর বুথে ভোট হয়েছে। বুথের ফল কমিশনকে জানাচ্ছি। এ ভাবে গণতন্ত্রের অপমৃত্যু কি বসে বসে দেখা হবে?’’
বিরোধীদের মধ্যে সব চেয়ে করুণ হাল কংগ্রেসের। যাদের হাতে নোয়াপাড়া আসন ছিল, তাদের এ বার কিছু বুথে ভোটপ্রাপ্তির নমুনা— ০, ০, ৩, ৬,৭, ৮, ১১, ১৬! উপনির্বাচনের ফল বেরোনোর পরে ফোনে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গাঁধীর। যে কথা উল্লেখ করে তৃণমূল নেত্রী রাজ্য কংগ্রেস নেতাদের ‘চুনোপুঁটি’ বলে কটাক্ষ করেছেন। প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মনোজ চক্রবর্তী তাই বলছেন, ‘‘রাঘব বোয়ালেরা কী ভাবে চুনোপুঁটিদের খতম করতে ভুতুড়ে কারবার চালিয়েছে, সেই পরিসংখ্যান সনিয়া এবং রাহুল গাঁধীকে জানাব!’’
বাম জমানায় অনিল বসু, লক্ষ্মণ শেঠ বা নন্দরানি ডল কী ভাবে বিপুল ভোটে জিততেন, বুথের তথ্য দেখিয়েই তার বিরুদ্ধে সরব হত বিরোধী তৃণমূল। নোয়াপাড়া, উলুবেড়়িয়ার বুথের রিপোর্ট এখন শাসক তৃণমূলকে একই প্রশ্নের মুখে ফেলছে। বিরোধীরা আরও এক পা এগিয়ে দাবি করছে, বাম আমলে ভোট লুঠ হতো কিছু এলাকায়। কিন্তু এখন আর কোনও সীমা-পরিসীমা নেই! নোয়াপাড়ায় ভোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বিধায়ক অর্জুন সিংহ, পার্থ ভৌমিকেরা অবশ্য বিরোধীদের কথা শুনতে নারাজ। তাঁদের সাফ কথা, ‘‘মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের সঙ্গে আছেন। বিরোধীদের সমর্থন, লোকবল কিছুই না থাকলে কী করা যাবে!’’ নোয়াপাড়ার বলে বলীয়ান অর্জুন দলনেত্রীকে আশ্বস্ত করেছেন, সামনের লোকসভা ভোটে বিহার থেকেও দু’টো আসন আসবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy