বারবার বলা সত্ত্বেও বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া ৪১টি গরুর হাট সরানোর ব্যাপারে রাজ্য সরকার গা করছে না বলে অভিযোগ করল সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। তাদের মতে, এই হাটগুলির আড়ালে গরু-পাচার চলছে প্রায় অবাধে। অথচ খোদ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, যে ভাবেই হোক গরু পাচার বন্ধ করতে হবে। ফলে রাজ্যের সর্বোচ্চ কর্তার নির্দেশই নিচুতলায় অমান্য করা হচ্ছে বলে বিএসএফের অভিযোগ।
বিএসএফের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে গরুর হাটগুলির একটি তালিকা পাঠানো হয়েছে। সেই তালিকা যিনি পাঠিয়েছিলেন, সেই দক্ষিণবঙ্গের তৎকালীন আইজি সন্দীপ সালুঙ্কের কথায়, ‘‘পঞ্চায়েত দফতরের আইন অনুযায়ী সীমান্তের ৮ কিমির মধ্যে গরুর হাট চালানোর অনুমতি দেওয়া যায় না। অথচ, আমরা যে ৪১টি হাটের তালিকা দিয়েছি, তার সব ক’টিই ৮ কিমির মধ্যে। সরকারের উচিত সেগুলি সরিয়ে দেওয়া। কিন্তু তা করা হচ্ছে না।’’ বিএসএফের দাবি, সরকারের দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ীই পঞ্চায়েতের লাইসেন্স নিয়ে হাটগুলি চলছে। তার মানে, সেখানে আইনি ভাবেই গরু কেনাবেচা হচ্ছে। কিন্তু হাটে আসা প্রায় সব গরু পাচার হয়ে যাচ্ছে বলেই তাদের অভিযোগ।
হাটগুলি বন্ধ করতে অথবা অন্যত্র সরিয়ে দিতে গত দু’বছর ধরে রাজ্যকে তাগাদা দিচ্ছে বিএসএফ। সমস্যার কথা জানিয়ে মাস দু’য়েক আগেও রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব মলয় দে-কে চিঠি পাঠায় তারা। সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সীমান্তের এত কাছে গরু কেনাবেচার আইনি ব্যবস্থা চালু থাকলে পাচার আটকানো মুশকিল। রাজ্য কিছু একটা করুক।’
বিষয়টি নবান্ন অবধি গড়ানোর পরে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। সম্প্রতি ওই ৪১টি হাটের অবস্থান জানিয়ে পঞ্চায়েত দফতরকে রিপোর্ট দিতে বলেছে নবান্ন। সেই নির্দেশ পেয়ে দফতর আবার রিপোর্ট চেয়েছে সংশ্লিষ্ট সীমান্ত এলাকার বিডিওদের কাছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ৪১টির মধ্যে ১৩টি হাট রয়েছে কোচবিহারে, সাতটি জলপাইগুড়িতে, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে ছ’টি করে, চারটি মুর্শিদাবাদে এবং দু’টি উত্তর ২৪ পরগনায়। এ ছাড়া, নদিয়া, মালদহ ও দার্জিলিঙে রয়েছে একটি করে হাট। বেশ কয়েকটি হাট আবার ব্যক্তি মালিকানাধীন। গোয়ালপোখরের দেবীগঞ্জে একটি বিরাট হাট চালাচ্ছে স্থানীয় মাদ্রাসা। পঞ্চায়েত দফতরের মাধ্যমে এই রিপোর্ট হাতে পেয়ে নবান্নের কর্তাদের চোখ কপালে ওঠার জোগাড়! প্রশাসনের বক্তব্য, আগে সব ক’টি হাটেরই লাইসেন্স ছিল। সেই রিপোর্টই ছিল বিএসএফের কাছে। কিন্তু ১৮টি হাট লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করেনি। ফলে এখন সেগুলি বেআইনি।
নবান্নের এক শীর্ষকর্তার কথায়, ‘‘পঞ্চায়েতের ওই রিপোর্ট চোখ খুলে দিয়েছে। কিন্তু স্থানীয় মানুষের রুজিরুটির কথা ভেবে হাটগুলি বন্ধ করা মুশকিল। আবার, জমির অভাবে সীমান্ত থেকে হাট অন্যত্র সরিয়ে নেওয়াও কার্যত অসম্ভব। বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে হবে। বিএসএফ-কেও সমস্যার কথা জানানো হবে।’’
এক প়ঞ্চায়েত কর্তার বক্তব্য, ‘‘২০০৪ সালে সীমান্তের ৮ কিমির মধ্যে গরুর হাটের লাইসেন্স না-দেওয়ার নির্দেশিকা জারি হয়েছিল। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি।’’
অন্য দিকে পঞ্চায়েতের বক্তব্য, এই হাটগুলিকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ বাজার বসে। যা এলাকার আর্থিক কারবারের একমাত্র মাধ্যম। বিএসএফ অবশ্য এই যুক্তি মানতে নারাজ। তাদের মত, গরু কেনাবেচা বন্ধ করে কেবল গ্রামীণ বাজার বসলে আপত্তির কারণ নেই।
রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ আবার প্রশ্ন তুলেছেন, গরু পাচার হয় মূলত মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকা (স্থানীয় ভাবে যাকে বলা হয় ঘাট) দিয়ে। অথচ বিএসএফের তালিকায় সব চেয়ে বেশি সংখ্যক হাট রয়েছে কোচবিহার আর জলপাইগুড়িতে। কেন? বিএসএফের জবাব, দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতেও আইনি-বেআইনি দু’ধরনেরই অনেক হাট রয়েছে। কিন্তু বাহিনী চিন্তিত সীমান্তের ৮ কিমির মধ্যে অবাধে চলতে থাকা হাটগুলি নিয়ে। গরু-চোরাচালান আটকাতে এই হাটগুলি বন্ধ করার আর্জি জানিয়েই সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের উচিত, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এই হাটগুলি সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy