Advertisement
১১ মে ২০২৪

সিবিআইয়ের হানা সারদার চার দফতরে

হাজিরার নোটিস আগেই গিয়েছে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র ও তৃণমূল সাংসদ সৃঞ্জয় বসুর কাছে। বৃহস্পতিবার সল্টলেক, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর এবং ডায়মন্ড হারবার রোডে সারদার চারটি দফতরে হানা দিল সিবিআই। কেন্দ্রীয় সংস্থা সূত্রের খবর, এই প্রথম বিষ্ণুপুরে সারদা গার্ডেন্সের দফতরে হানা দিল তারা। সেখানে সুদীপ্ত সেনের চেম্বারে বেশ কিছু নথিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এ দিনই সিবিআইয়ের অন্য একটি দল তল্লাশি চালায় সল্টলেকের ডিএন ব্লকের ২৯ নম্বর বাড়ির তিন ও পাঁচতলায় সারদার দু’টি দফতরে।

সল্টলেকের ডিএন ব্লকে সারদার অফিসে তল্লাশি। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।

সল্টলেকের ডিএন ব্লকে সারদার অফিসে তল্লাশি। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:২৪
Share: Save:

হাজিরার নোটিস আগেই গিয়েছে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র ও তৃণমূল সাংসদ সৃঞ্জয় বসুর কাছে। বৃহস্পতিবার সল্টলেক, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর এবং ডায়মন্ড হারবার রোডে সারদার চারটি দফতরে হানা দিল সিবিআই।

কেন্দ্রীয় সংস্থা সূত্রের খবর, এই প্রথম বিষ্ণুপুরে সারদা গার্ডেন্সের দফতরে হানা দিল তারা। সেখানে সুদীপ্ত সেনের চেম্বারে বেশ কিছু নথিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এ দিনই সিবিআইয়ের অন্য একটি দল তল্লাশি চালায় সল্টলেকের ডিএন ব্লকের ২৯ নম্বর বাড়ির তিন ও পাঁচতলায় সারদার দু’টি দফতরে। সেখানেও নথি মিলেছে। সল্টলেকের এই দু’টি অফিসেই আগে হানা দিয়েছিল রাজ্য পুলিশ ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। জুন-জুলাইয়ে হানা দেয় সিবিআই-ও। অফিস দু’টিতে তারাই তালা ঝুলিয়েছিল। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, এত দিন পরে ওই দু’টি অফিসে আবার কী গুরুত্বপূর্ণ নথি পেল সিবিআই? জবাব মেলেনি।

সারদা গার্ডেন্সে এর আগে রাজ্য পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল ও ইডি তল্লাশি চালিয়েছে। এ দিন সিবিআই অফিসারেরা সেখানে পৌঁছে দেখেন, পাশাপাশি দু’টি বাড়িতে রয়েছে বেশ কয়েকটি অফিস। একটি বাড়ির চারতলায় সুদীপ্ত নিজে বসতেন। সেই বাড়িতে আরও কিছু অফিসঘর রয়েছে। অন্য বাড়িটিতে শুধুই অফিসঘর। সূত্রের খবর, দ্বিতীয় বাড়িটির কয়েকটি অফিস থেকে কিছু নথি ইতিমধ্যেই জোগাড় করেছে ইডি (তা অবশ্য মূলত জমি-বাড়ি সংক্রান্ত)। সেই সব ঘরে তারাই তালা ঝুলিয়ে গিয়েছিল। সুদীপ্ত যে অফিসে বসতেন, রাজ্য পুলিশের তল্লাশির পরেও তার একটি অংশ এ দিন খোলা দেখতে পায় সিবিআই। সেখান দিয়েই ভেতরে ঢোকেন অফিসারেরা। প্রথমে এই অফিসটি ছিল সুদীপ্তর প্রধান দফতর। সেই সময়ে সারদার মূল ব্যবসাই ছিল জমি-বাড়ি কেনাবেচা। পরে বাজার থেকে টাকা তোলার ব্যবসা বাড়তে থাকায় সুদীপ্ত তাঁর দফতর সরিয়ে সল্টলেক ও ডায়মন্ড হারবার রোডে নিয়ে যান। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল পর্যন্ত সারদা গার্ডেন্সের এই চেম্বারেই তল্লাশি চলে। তল্লাশি চলে বেহালার ডায়মন্ড হারবার রোডের অফিসেও।

সব মিলিয়ে সিবিআই অভিযানের গতিপ্রকৃতি দেখে অনেকেই বলছেন ‘ঠিক যেন সিনেমা’। মাঝখানে একটু বিরতি ছিল। এখন ফের ‘পিকচার’ চালু। সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার তুলে দেওয়ার সময়ে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ ছিল, বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে ‘প্রভাবশালীদের’ যোগাযোগের বিষয়টিও খতিয়ে দেখতে হবে। সারদা মামলায় এখনও পর্যন্ত যে দু’টি চার্জশিট সিবিআই আদালতে জমা দিয়েছে, সেখানে প্রভাবশালীদের নাম কার্যত ছিলই না। কিন্তু মদনবাবু-সৃঞ্জয়বাবু সিবিআইয়ের ডাক পাওয়ার পরেই শুরু হয়েছে হইচই। তৃণমূলের অভিযোগ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে সিবিআইকে। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমি মনে করি না, কোনও রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করছে।” তাঁর মতে, সিবিআইয়ের মতো সংস্থাগুলিকে নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে দেওয়া উচিত। যদি কারও বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়, তা হলে সংশ্লিষ্ট সেই ব্যক্তিকে ডেকে অফিসারেরা জিজ্ঞাসাবাদ করতেই পারেন।

তা, ‘বিরতি’র সময়টায় কী করছিল সিবিআই? জানা গেল একটু কাগজপত্র ঘাঁটাঘাঁটি, হোমওয়ার্ক আর চার-চারটি মোক্ষম সাক্ষী জোগাড় করে তাঁদের দিয়ে গোপন জবানবন্দি দেওয়ানো। আর এই অস্ত্র যে কাজ করেছে, তা বৃহস্পতিবার এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে পরিবহণমন্ত্রীর লুকোচুরি খেলা দেখেই তা আঁচ করছেন তদন্তকারীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE