ডেলো বাংলোর সেই ঘর।
হাতে নতুন কিছু তথ্য আসার পরে কালিম্পংয়ের ডেলোর বাংলোয় রোজ ভ্যালি ও সারদা কর্তার সঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের বৈঠকের ফের ময়না-তদন্ত শুরু করছে সিবিআই। ২০১২ সালের ১ মার্চের সেই বৈঠকে হাজির কুশীলবদের ভূমিকা কী ছিল, নতুন করে তা খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী সংস্থা।
সিবিআইয়ের এক কর্তার দাবি, ডেলোর বৈঠকে বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার দুই কর্তা গৌতম কুণ্ডু ও সুদীপ্ত সেন ঘণ্টাখানেক ছিলেন। কিন্তু কেন তাঁরা সেখানে গিয়েছিলেন, কী তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল— সে সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন তাঁরা। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, সে বার উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে ডেলোয় প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রশাসনের বিভিন্ন কর্তারা যেমন ছিলেন, ছিলেন তাঁর দলের সাংসদ ও নেতারাও। গৌতম ও সুদীপ্তর সঙ্গে সে দিন প্রশাসনের শীর্ষ নেতার সকলকে নিয়ে, না আলাদা করে আলোচনা হয়েছে, কত ক্ষণ কথা হয়েছে, সেখানে কে কে ছিলেন— তদন্তকারীরা তা বুঝতে চাইছেন।
বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর সময় থেকে সিবিআই কর্তারা বারবার দাবি করে আসছেন, সেবির নিষিদ্ধ তালিকায় থাকা সারদা ও রোজ ভ্যালির সঙ্গে বহু প্রভাবশালী ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। এই অর্থলগ্নি সংস্থাগুলি থেকে নগদ-সহ নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে বিধায়ক-সাংসদ-মন্ত্রীদের একাংশ, এই দাবিও করেছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার তোলা এই সব দাবির মতো প্রায় একই অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণাল ঘোষও।
সিবিআই তাঁকে গ্রেফতার করার পর জেলে বসেই ৯১ পাতার একটি বিবৃতি লিখেছিলেন কুণাল। গত লোকসভা নির্বাচনের পরে প্রকাশ্যে আসা সেই বিবৃতিতেই ডেলো পাহাডে়র সেই বৈঠকের সবিস্তার উল্লেখ রয়েছে। কুণালের দাবি ছিল, ডেলোয় সুদীপ্ত ও গৌতমের সঙ্গে আলাদা-আলাদা বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। দু’টি বৈঠকেই ছিলেন দলের সাংসদ মুকুল রায়। কেন বৈঠক, তা অবশ্য তখন নিশ্চিত করে বলতে পারেননি কুণাল।
তবে জেল থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার আগে তিনি ২৬টি পয়েন্ট-সহ একটি ‘নোট’ তুলে দেন আদালতের হাতে। আদালত কুণালের বক্তব্য খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন সিবিআই-কে। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের খবর, গত দু’দিনে কুণালকে প্রায় ২০ ঘণ্টা জেরা করে আরও কিছু তথ্য জানার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রশাসনের মতে, সেই সূত্রেই ফের ডেলোর বৈঠক সামনে চলে এসেছে। গত বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে ডেলোর বৈঠক নিয়ে বিরোধীদের কার্টুন এখনও দেওয়ালে চোখে পড়ে। এই বৈঠকের উল্লেখ করে শাসক দলকে বিঁধেছিলেন কংগ্রেস ও সিপিএম নেতারা। ২০১২-র এই বৈঠকের পরে কালিম্পংয়ের ডেলোয় পর্যটক সমাগমও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ওই বাংলোর কর্মীরা। সেই বৈঠক এখন আবার সিবিআইয়ের আতস কাচের নীচে।
তদন্তকারীদের দাবি, ডেলো-বৈঠকের অনেক কিছুই তাঁরা জেনেছেন। বৈঠকে কী ধরনের চা পরিবেশন করা হয়েছিল, তা-ও জেনেছেন তাঁরা। কিন্তু অভিযোগ সাজাতে আদালত-গ্রাহ্য তথ্যপ্রমাণ হাতে থাকা জরুরি। তারই খোঁজ চলছে এখন। ইতিমধ্যে সারদা ও রোজ ভ্যালি কাণ্ডে ধৃত একাধিক প্রভাবশালীকে ওই বৈঠক দু’টির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গৌতম ও সুদীপকেও জেরা করা হবে। সূত্রের খবর, সারদা ও রোজ ভ্যালির তদন্তে যে সব অফিসারেরা যুক্ত, তাঁদের মধ্য থেকে কয়েক জনকে বেছে একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। এই দলই ডেলো-বৈঠকের বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। সুদীপ্ত ও গৌতমকেও তাঁরাই জেরা করবেন।
সিবিআইয়ের ওই কর্তা জানান, রোজ ভ্যালি ও সারদার সঙ্গে প্রভাবশালীদের নানা ধরনের যোগ ছিল। দুই অর্থলগ্নি সংস্থার টাকা প্রভাবশালীদের কাছে পৌঁছে যাওয়ার বহু তথ্য হাতে এসেছে। কিন্তু ওই দিনের বৈঠকে অর্থলগ্নি সংস্থার কর্ণধারদের কী নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তার পর দু’জন কী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন— সে সব এখন দেখা হচ্ছে। ওই কর্তার যুক্তি— সমস্ত অর্থলগ্নি সংস্থাকে টাকা তোলা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল সেবি। আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতেও বলা হয়। তার পরেও লগ্নি সংস্থার দুই মালিকের সঙ্গে প্রশাসনের কর্তারা কেন বৈঠক করলেন, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy