পিজিতে মদনকে ফের জেরা চলতি সপ্তাহেই

প্রায় আট মাসের বন্দিদশায় তাঁর বেশির ভাগ সময়টাই কেটেছে ও কাটছে রাজ্যের সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এসএসকেএমে। সেখানকারই উডবার্ন ওয়ার্ডে ফের সিবিআইয়ের জেরার মুখে পড়তে চলেছেন ক্রীড়া ও পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। চলতি সপ্তাহেই তাঁকে জেরা করা হবে বলে আদালত ও সিবিআই সূত্রের খবর।

সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতারের পর থেকে মদনবাবুকে কয়েক বার জেরা করেছে সিবিআই। ইতিমধ্যে নিম্ন আদালত এবং কলকাতা হাইকোর্টে মন্ত্রীর জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছে। তদন্তের তাগিদেই আবার তাঁকে জেরা করার জন্য আবেদন করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা। মঙ্গলবার তা মঞ্জুর করেছে আদালত। জেরার অনুমতি দিয়ে আলিপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারক সৌগত রায়চৌধুরী জানান, অভিযুক্ত ও তদন্তকারী অফিসারদের কথোপকথন পর্বে কিছুটা সময় মন্ত্রীর আইনজীবীও হাজির থাকতে পারবেন।

২০১৪ সালের ১২ ডিসেম্বর পরিবহণমন্ত্রীকে গ্রেফতার করে সিবিআই। আদালত তাঁকে জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেয়। তবে লৌহকপাটের আড়ালে তাঁকে খুব অল্প সময়ই থাকতে হয়েছে। শারীরিক অসুস্থতার জন্য ছ’মাসেরও বেশি সময় ধরে এসএসকেএমের উডবার্ন ওয়ার্ডই মদনবাবুর ঠিকানা। মন্ত্রীর শারীরিক পরিস্থিতি ঠিক কেমন, সম্প্রতি আদালত মারফত আলিপুর জেল কর্তৃপক্ষের কাছে তা জানতে চায় সিবিআই। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী কিছু দিন আগে মদনবাবুর শারীরিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সিবিআইকে সবিস্তার রিপোর্ট দিয়েছেন আলিপুর জেল কর্তৃপক্ষ।

তার পরেই মদনবাবুকে ফের জেরা করতে চেয়ে গত সপ্তাহে আদালতের দ্বারস্থ হয় সিবিআই। তাদের আর্জির পরিপ্রেক্ষিতে এ দিন দু’পক্ষের বক্তব্য শোনেন বিচারক। সিবিআইয়ের আইনজীবী পার্থসারথি দত্ত বলেন, তদন্তের স্বার্থে মদনবাবুকে আবার জেরা করা দরকার। কারণ, সারদা রিয়েলটি মামলার তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। ওই তদন্তে বিভিন্ন জট ছাড়াতেই পরিবহণমন্ত্রীর বক্তব্য জানা দরকার হয়ে পড়েছে।

মদনবাবুর আইনজীবী বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় ও পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় সিবিআইয়ের ওই আর্জির তেমন বিরোধিতা করেননি। বরং সব রকম সহযোগিতার আশ্বাসই দিয়েছেন। তবে তাঁদের আবেদন, জেরার সময় মন্ত্রীর অন্তত এক জন আইনজীবীকে উপস্থিত থাকার অনুমতি দেওয়া হোক। বিচারক এর পরেই সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার ফণিভূষণ করণকে জিজ্ঞাসা করেন, জেরা করতে কত দিন লাগবে? ওই অফিসার জানান, দেরির প্রশ্ন নেই। মন্ত্রীকে চলতি সপ্তাহেই কোনও এক দিন জেরা করা হবে। বিচারক তখন জেরা করার আবেদন মঞ্জুর করে নির্দেশ দেন, সাত দিনের মধ্যেই এই পর্ব শেষ করতে হবে। একই সঙ্গে বিচারক জানিয়ে দেন, সিবিআইয়ের জেরার সময় মদনবাবুর এক জন কৌঁসুলি থাকতে পারবেন। তবে পুরো সময়ের জন্য নয়।

সিবিআই সূত্রের খবর, উডবার্ন ওয়ার্ডে গিয়েই মদনবাবুকে জেরা করা হবে। ঠিক ঠিক কী কী বিষয় জানতে চাওয়া হবে, তা জানানো হয়নি। তবে সিবিআইয়ের এক কর্তার বক্তব্য, সম্প্রতি সারদা কাণ্ডের তদন্তে নতুন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। ওই বিষয়েই মদনবাবুকে ফের জেরা করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। ‘‘তা ছাড়া সম্প্রতি বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থা রোজভ্যালির বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করেছে সিবিআই। ওই সংস্থার সঙ্গেও মদনবাবুর যোগ ছিল বলে অভিযোগ এসেছে। তাই সেই বিষয়েও তাঁকে জেরা করা হবে,’’ বললেন ওই সিবিআই-কর্তা।