প্রতীকী ছবি।
জোট-রাজনীতি নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে আবার কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের আশঙ্কা প্রবল হয়েছে। এ বার রাজ্যের মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকা থেকে অবশিষ্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহারের সম্ভাবনাকে কেন্দ্র করে।
অতি-মাওবাদীপ্রবণ এলাকার কেন্দ্রীয় তালিকা থেকে আগেই বাদ গিয়েছে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও বীরভূম জেলা। এ বার ‘সিকিওরিটি রিলেটেড এক্সপেন্ডিচার’ বা এসআরই তালিকা থেকেও সংশ্লিষ্ট জেলাগুলির বাদ যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। প্রশাসনিক ব্যাখ্যায় এসআরই-র অর্থ, মাওবাদীদের দৌরাত্ম্য না-থাকলেও বাড়তি সতর্কতার জন্য সংশ্লিষ্ট তালিকাভুক্ত এলাকাগুলির নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় সরকারের অতিরিক্ত নজরদারি। রাজ্যের সংশ্লিষ্ট জেলাগুলি এক বার এসআরই তালিকার বাইরে চলে গেলে সেখানে নিজেদের বাহিনী আর না-ও রাখতে পারে কেন্দ্র। কিন্তু রাজ্য মনে করছে, এই মুহূর্তে তেমন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হবে না।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, মার্চের প্রথম সপ্তাহে মাওবাদী সমস্যাপ্রবণ রাজ্যগুলিকে নিয়ে একটি বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব। বৈঠকের অন্যতম আলোচ্য ছিল মাওবাদী অধ্যুষিত জেলার তালিকা পরিমার্জন। মাওবাদী দৌরাত্ম্য কোন জেলায় কতটা রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হয় ওই বৈঠকে। যে-সব জেলায় আর মাওবাদী তৎপরতার প্রমাণ মিলছে না, সেগুলিকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র।
এ রাজ্যের সংশ্লিষ্ট জেলাগুলিতে দীর্ঘদিন কোনও মাওবাদী উপদ্রব হয়নি। তাই তালিকা থেকে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং বীরভূমকে পুরোপুরি বাদ দিতে চাইছে কেন্দ্র।
কিন্তু রাজ্যের যুক্তি আলাদা। প্রশাসন মনে করছে, বীরভূম এবং পশ্চিম মেদিনীপুর অনেক ‘নিরাপদ’। কিন্তু পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম (পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে ভেঙে তৈরি নতুন জেলা) ও বাঁকুড়াকে ‘এসআরই’ তালিকা থেকে বাদ দেওয়া উচিত হবে না। প্রশাসনের অনেকের যুক্তি, অনেক দিন ধরেই জেলাগুলি শান্ত আছে। কিন্তু এসআরই তালিকা থেকে বাদ যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে বাহিনী প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু করে দেবে কেন্দ্র। তখনই পড়শি রাজ্য থেকে মাওবাদীরা বাংলায় ঢুকে নতুন করে সংগঠন গড়তে পারে।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে ৩৬ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে জঙ্গলমহলে। তার মধ্যে ছয় কোম্পানি নাগা ব্যাটেলিয়ন। কিন্তু সব ক্যাম্পই রয়েছে ঝাড়গ্রামে। এসআরই তালিকার বাইরে চলে গেলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সুরক্ষা বাবদ কেন্দ্রীয় বরাদ্দও কালক্রমে বন্ধ হয়ে যাবে।
এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘সরাসরি না-হলেও এমন পদক্ষেপের অর্থ, প্রকারান্তরে কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহারের ভাবনাচিন্তার ইঙ্গিত দেওয়া। তা যদি হয়, যত উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট জেলাগুলিতে হয়েছে, সব ভেস্তে দিয়ে ফের রাজ্যকে অশান্ত করে তোলার চেষ্টা করতে পারে মাওবাদীরা। সেই জন্য এখনই এমন পদক্ষেপ করা উচিত নয় কেন্দ্রের।’’
প্রাক্তন এক পুলিশকর্তার বক্তব্য, শান্তির মাপকাঠিতে জেলাগুলিকে এসআরই তালিকা থেকে বাদ দিতে চাইছে কেন্দ্র। এটা এক দিক থেকে রাজ্যের কাছে সম্মান এবং গর্বের বিষয়। কারণ, এতে রাজ্যের উন্নয়নমূলক পদক্ষেপের সাফল্যই প্রমাণিত হবে।
‘‘কিন্তু আইনশৃঙ্খলার স্থায়িত্বের উপরে এই সিদ্ধান্তের বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষত কয়েক দিন আগেই ছত্তীসগঢ়ের সুকমায় ভয়াবহ মাওবাদী হামলা হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের উপরে চাপ বজায় রাখা উচিত রাজ্যের,’’ বলছেন ওই পুলিশকর্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy