Advertisement
০৫ মে ২০২৪

নারায়ণী সেনা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিল্লির

বিএসএফের বিরুদ্ধে নারায়ণী সেনাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার যে গুরুতর অভিযোগ তুলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার, তা খতিয়ে দেখতে তদন্তের নির্দেশ দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এই তদন্ত করবে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৩০
Share: Save:

বিএসএফের বিরুদ্ধে নারায়ণী সেনাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার যে গুরুতর অভিযোগ তুলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার, তা খতিয়ে দেখতে তদন্তের নির্দেশ দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এই তদন্ত করবে। এর পাশাপাশি, বিএসএফের তরফেও একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত হচ্ছে বলে বাহিনীর অন্দরের খবর। যদিও প্রকাশ্যে আজই বিএসএফের গুয়াহাটির সদর দফতর থেকে একটি প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কোচবিহারে নারায়ণী সেনাকে তারা প্রশিক্ষণ দিয়েছে বলে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ অসত্য। ‘প্রমাণ’ হিসেবে যে ছবি তুলে ধরা হয়েছে, তার সঙ্গেও নারায়ণী সেনার কোনও যোগ নেই বলে দাবি করেছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী।

প্রায় দশ বছর ধরে সদস্য সংগ্রহ করে ‘নারায়ণী সেনা’ নামে একটি বিশাল বাহিনী গড়ে তুলেছে গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন (জিসিপিএ)। কোচবিহারের মাথাভাঙায় বিএসএফ সেই বাহিনীকেই প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বলে সম্প্রতি এক গোয়েন্দা রিপোর্ট পৌঁছয় নবান্নে। ক্ষুব্ধ মমতা বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক কর্তাদের সরব হওয়ার নির্দেশ দেন। কেন্দ্র এ ভাবে পরোক্ষে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিঘ্ন ঘটাতে চাইছে বলে অভিযোগ তোলে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তোলপাড় শুরু হয় দিল্লিতেও। বিষয়টি জানতে পারেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। গত রাতে তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুব ভাল। কিন্তু আমার মন্ত্রকের অধীনে থাকা আধাসামরিক বাহিনী দেশবিরোধী কোনও কাজ করবে, সেটাও আবার বিশ্বাস করা কঠিন। তবু মমতা তথা পশ্চিমবঙ্গ সরকার যখন বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন, তখন ধোঁয়াশা কাটাতে মন্ত্রক কর্তাদের বিস্তারিত তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

বিএসএফ আগাগোড়াই এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। সংশ্লিষ্ট এলাকাটি সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুয়াহাটি ফ্রন্টিয়ারের অধীনে। আজ ওই বাহিনীর তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, নারায়ণী সেনাদের তারা কোনও প্রশিক্ষণ দেয়নি। জনসংযোগের কথা মাথায় রেখে সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ নানা ধরনের কর্মসূচি নিয়ে থাকে। সীমান্তের মতো প্রত্যন্ত এলাকার যুবকদের সেনা বা আধাসেনায় ভর্তি হতে উৎসাহ দিয়ে থাকে তারা। সে ক্ষেত্রে ভর্তির সময় কী ধরনের শারীরিক কসরত করতে হতে পারে, তারই কিছু প্রশিক্ষণ দেয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী।

রাজ্য পুলিশের তদন্ত রিপোর্টের দাবি, চলতি মাসেই নারায়ণী সেনাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল বিএসএফ। সেই প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন চার বিএসএফ অফিসার। কিন্তু বিএসএফের দাবি, গত ১৫ অগস্ট সাতগাছি বর্ডার আউটপোস্টের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে কিছু স্থানীয় গ্রামবাসী ও পঞ্চায়েত সদস্য এসেছিলেন। স্থানীয়দের অনুরোধেই বিএসএফের চার জন অফিসার ওই সীমান্ত চৌকি থেকে ৫০০ মিটার দূরে পঞ্চায়েতের মাঠে গিয়ে স্কুলপড়ুয়াদের সাবধান-বিশ্রাম ও স্যালুট কী ভাবে জানাতে হয়, তা শেখাতে গিয়েছিলেন। রাজ্য পুলিশ যেখানে দাবি করেছে ওই প্রশিক্ষণ প্রায় গোটা দিন চলেছিল সেখানে বিএসএফের দাবি, মাত্র ১৫-২০ মিনিট ওই মাঠে হাজির ছিলেন বিএসএফের অফিসারেরা। তবে গোটা বিষয়টির মধ্যে যে একটা ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে, তা ঘনিষ্ঠ মহলে স্বীকার করে নিচ্ছেন স্বরাষ্ট্র কর্তারা।

ইতিমধ্যে রাষ্ট্রপতির ‘শুভেচ্ছাবার্তা’ দেখিয়ে ‘ভারতভুক্তি চুক্তি দিবস’ পালনের অনুমতি চেয়েছে জিসিপিএ। বুধবার সংগঠনের পক্ষে ওই শুভেচ্ছাবার্তা নিয়ে কোচবিহার জেলাশাসকের দফতরে যান একদল প্রতিনিধি। জেলাশাসক অবশ্য তাঁদের আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, সুনির্দিষ্ট কারণে ওই অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া হবে না। প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা জানান, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে আমন্ত্রণপত্র পাঠালে সাধারণত শুভেচ্ছাপত্র পাঠানোই রেওয়াজ। তার মানে কখনও অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া নয়। জেলাশাসক বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narayani sena
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE