ডাক্তারের অভাবে ধুঁকছে সুপার-স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। ফলে নতুন করে এই মুহূর্তে অন্তত আর কোনও সুপার-স্পেশালিটি হাসপাতাল গড়তে চায় না রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই বুধবার পুরুলিয়ায় এ কথা জানিয়ে বলেন, ইতিমধ্যে যে সব সুপার-স্পেশালিটি হাসপাতাল রাজ্যে তৈরি হয়েছে সেগুলো ঠিকঠাক চালানোই এখন সরকারের প্রধান লক্ষ্য।
এ দিন বাঘমুন্ডির বিধায়ক নেপাল মাহাতো তাঁর বিধানসভা এলাকায় নতুন সুপার-স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। সেই অনুরোধে সটান ‘না’ বলে দেন মমতা, যিনি এ রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীও। মমতা বলেন, ‘‘আর কোনও সুপার-স্পেশ্যালিটি হবে না। ডাক্তার পাব কোথা থেকে? যেগুলো হয়েছে, সেখানেই তো ডাক্তার মিলছে না। একটা হাসপাতাল করতে ৬০০ কোটি টাকা খরচ! কে দেবে সেই টাকা?’’ বরং যে হাসপাতালগুলো আছে, আপাতত সেগুলোর হাল ফেরানোই অগ্রাধিকার সরকারের। সে কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যোগ করেন, ‘‘যেগুলো হয়েছে, সেগুলোই দাঁড় করাতে হবে। সেটাই এখন কাজ।’’
ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ানের অভাবে জন্ম থেকেই রুগ্ন হয়ে রয়েছে জেলার সুপার-স্পেশ্যালিটি হাসপাতালগুলোর। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে অজস্র অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু নবান্ন সে কথা এত দিন মানতে চায়নি। অবশেষে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বিষয়টি স্বীকার করে নেওয়ায় স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘প্রতিদিন বিভিন্ন সুপার-স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল নিয়ে অভিযোগ পেয়ে পেয়ে আমরা ক্লান্ত। যেহেতু এটি মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প, তাই কিছু বলতে সাহস করিনি। উনি নিজে যে বিষয়টা বুঝেছেন, সেটাই অনেক।’’
প্রথম বার ক্ষমতায় আসার পরে জেলায় জেলায় মোট ৪১টি সুপার-স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মমতা। এর মধ্যে পাঁচটিতে ইন্ডোর চালু হয়েছে। বাকিগুলিতে হাতে গোনা কয়েকটি বিভাগের আউটডোরই এখনও ভরসা। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্য ছিল, গ্রামের মানুষকে চিকিৎসার জন্য যাতে কলকতায় ছুটতে না হল, তার ব্যবস্থা করা। কিন্তু বাস্তবে সেই স্বপ্ন সাকার করা যায়নি। রাজ্যের চালু সরকারি হাসপাতালগুলিতেই যেখানে ডাক্তার মেলে না, সেখানে সুপার-স্পেশ্যালিটিগুলিতে ডাক্তারের ব্যবস্থা করা যাবে কী করে, ভেবে বার করতে পারেননি স্বাস্থ্যকর্তারা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া সুপার-স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাবে চালু করা সম্ভব নয়, তা নিয়ে নবান্নে একাধিক রিপোর্ট গিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন থেকে। বাস্তবে এক-একটি হাসপাতালে যে সংখ্যক চিকিৎসক প্রয়োজন, তার চার ভাগের এক ভাগও দেওয়া যায়নি।
কেন? স্বাস্থ্য দফতরের হিসেবেই, এ রাজ্যে প্রতি বছর ২৩০০ ডাক্তার পাশ করে বেরোন। পশ্চিমবঙ্গের ১৩টি সরকারি এবং ৩টি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ, ২৭টি জেলা হাসপাতাল, ৩৭টি মহকুমা হাসপাতাল, ১১০টি গ্রামীণ হাসপাতাল, ৩৫০টি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ৯০০টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পর্যাপ্ত ডাক্তার-নার্স দেওয়া যায়নি। সেখানে ৪১টি সুপার-স্পেশ্যালিটির জন্য ডাক্তারের জোগান কোথা থেকে আসবে, বুঝতে না পেরে মেডিক্যাল কলেজগুলি থেকে ডাক্তার তুলে নিতে শুরু করেছে স্বাস্থ্য দফতর। ফলে সেখানে পরিষেবাও ধাক্কা খাচ্ছে। এ কূল-ও কূল দুইই যেতে বসেছে।
গ্রামীণ হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসক যে অপ্রতুল, এ দিন সেই অভিযোগও শুনতে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই বলে অভিযোগ জানান স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। সমস্ত জেলায় আধিকারিক পাঠিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির হাল জানার জন্য স্বাস্থ্যসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy