ঠান্ডা লড়াইটা চলছিলই। এ বার তার রিপোর্ট পৌঁছল নবান্নের চোদ্দতলায়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। বিরোধ বেধেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ সেনের সঙ্গে সরকারি বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির কর্তাদের। আর তাতেই প্রবল অস্বস্তি ছড়িয়েছে রাজ্যের বিদ্যুৎ শিল্পে।
রবীন্দ্রনাথবাবু কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন ২০১৫ সালের মে মাসে। তার আগে ডিভিসি-র চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক মাস পর থেকেই বিরোধের সূত্রপাত। প্রশাসনের একটি অংশের বক্তব্য, রাজ্যের বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে চলে আসা কিছু ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে চাইছেন রবীন্দ্রনাথবাবু, যা অনেকের অপছন্দ। অন্য দিকে বিদ্যুৎ শিল্পের শীর্ষ কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন— চেয়ারম্যান যে পদক্ষেপগুলি নিতে চাইছেন, তা রাজ্যের বিদ্যুৎ নীতির বিরোধী। সরকার সমস্যায় পড়তে পারে রবীন্দ্রনাথবাবুর কার্যকলাপে।
কী পরিবর্তন চেয়েছিলেন চেয়ারম্যান?
সূত্রের খবর, গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল ও সরকারি ভর্তুকি নিয়ে একটি নিয়ম চালু করতে চাইছিলেন রবীন্দ্রনাথবাবু। তার বিরোধিতায় সরব হন বিদ্যুৎ কর্তারা। এর জেরে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। একই ভাবে, বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতি কমানোর পন্থা খুঁজতে একটি কোরীয় সংস্থাকে নিয়োগ করতে চেয়েছিল কমিশন। এ ক্ষেত্রেও রবীন্দ্রনাথবাবুর সঙ্গে সহমত হননি বিদ্যুৎ কর্তারা।
এমন আরও নানা বিষয়ে মতবিরোধের কারণে গত এক বছর ধরে রাজ্যের বিদ্যুৎসচিব-সহ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা ও পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথবাবুর দূরত্ব বাড়ছিল। এই পরিস্থিতির কথা জানিয়ে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীকে একটি রিপোর্ট দিয়েছেন বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করেছেন। যদিও এই বিরোধ নিয়ে বিদ্যুৎমন্ত্রী বা চেয়ারম্যান কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
বিদ্যুৎ ভবন সূত্রে খবর, উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিদ্যুৎমন্ত্রী, বিদ্যুৎসচিব ও বিদ্যুৎ কর্তাদের একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে সরকারের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ চেয়্যারম্যানকে দেওয়া হয়েছে। এক কর্তা জানান, গ্রামীণ বিদ্যুদয়নের কারণে রাজ্যে এখন বিদ্যুৎ গ্রাহকের সংখ্যা এক
কোটি ৭২ লক্ষ। ১০০ শতাংশ গ্রামীণ বিদ্যুদয়নের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে রাজ্য। বিদ্যুৎ উৎপাদনেও রাজ্য অনেক এগিয়ে। এই অবস্থায় কাদের মাসুল বাড়বে, কাদের ভতুর্কি দেওয়া হবে, মাসুলের কাঠামোর কোনও পরিবর্তন হবে কি না— এমন নানাবিধ বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে কমিশনকে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু এ সব কতটা কার্যকর হবে, মুখ্যমন্ত্রী কী ব্যবস্থা নেবেন, চেয়ারম্যান আদৌ পদে থাকবেন কি না— এই সব প্রশ্নে বিষয়টি নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা থেকেই গিয়েছে। তবে অনেকে বলছেন, বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশন স্বাধীন ভাবে কাজ করবে, সেটাই কাম্য। পদে পদে তাঁর কাজে বাধা দেওয়া হলে কমিশন গড়াটাই অর্থহীন হয়ে পড়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy