প্রতীকী ছবি।
মহোৎসবের বাজনা শোনা যাচ্ছে। মহাপুজো দিন সাতেক দূরে। দু’তিন দিন পর থেকেই আলোয় সেজে উঠবে কলকাতা-সহ সারা রাজ্য। আর সেই আলো জ্বালিয়ে রাখতে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়ে যাবে অনেকটাই।
কিন্তু রাজ্যের বিদ্যুৎকর্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কয়লার জোগান নিয়ে। কারণ, রাজ্যের প্রায় প্রতিটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রেই কয়লার ব্যাপক ঘাটতি চলছে। পরিস্থিতি এমনই যে, বক্রেশ্বর, সাগরদিঘি ও সাঁতালডিহির মতো তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে গড়ে দু’দিনের বেশি কয়লা মজুত নেই। বিদ্যুৎ শিল্পনহলের চোখে পরিস্থিতি বেশ সঙ্কটজনক। এই অবস্থায় পুজোয় বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে কয়লার ঘাটতি কী ভাবে সামাল দেওয়া যায়, সেই বিষয়ে কোল ইন্ডিয়া-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে রাজ্য।
বছরখানেক আগে কয়লা আমদানি নীতি বাতিল করা হয়েছে। রাজ্যের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির জন্য এখন তাই আর কয়লা আমদানি করা হয় না। আবার পরিবেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্র না-পাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের নিজস্ব কয়লা খনিগুলি থেকেও কয়লা তোলা বন্ধ আছে। ফলে নিগমকে কোল ইন্ডিয়ার কয়লা উপরে পুরোপুরি নির্ভর করতে হয়। রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় অবশ্য জানান, কয়লার ঘাটতি কিছু রয়েছে। তবে তার জন্য পুজোয় বিদ্যুতের কোনও অভাব হবে না। কয়লার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
পুজোয় সারা রাজ্যে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে চাই বাড়তি উৎপাদন। এবং সেই বাড়তি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত কয়লা। উৎসবে সিইএসএসি এলাকা বাদ দিয়ে রাজ্যে বিদ্যুতের চাহিদা দাঁড়াবে ৬৫০০-৬৭০০ মেগাওয়াট। তার মধ্যে কমপক্ষে ৩৪০০ মেগাওয়াট উৎপাদন করতেই হবে রাজ্যের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিকে।
অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, বিল বকেয়া পড়ে গিয়েছে বলেই কি কোল ইন্ডিয়া কয়লা পাঠানো কমিয়ে দিয়েছে? নিগমের শীর্ষ কর্তারা অবশ্য তা মানতে রাজি নন। তাঁদের দাবি, বিল যা হয়, তা কোল ইন্ডিয়াকে নিয়মিত মিটিয়ে দেওয়া হয়। বকেয়া যেটুকু আছে, সেটা বড় অঙ্কের কিছু নয়। তা হলে? নিগমকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, হঠাৎই সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদা খানিকটা বেড়ে গিয়েছে। ফলে উৎপাদন বাড়াতে হয়েছে দেশের প্রতিটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রকেই। বাড়তি উৎপাদনের জন্যই কয়লা লাগছে অনেক বেশি।
এ বার বর্ষায় অতিবৃষ্টি ও বন্যার জন্য কোল ইন্ডিয়ার উৎপাদনও মার খেয়েছে। ফলে চাহিদার তুলনায় কয়লা এখন ‘বাড়ন্ত’। সেই ধাক্কা রাজ্যের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতেও এসে লেগেছে বলে নিগমের কর্তাদের অভিমত। এক কর্তার জানাচ্ছেন, ইসিএলের রাজমহল খনিতে আগুন লাগায় সেখানকার কয়লা পাওয়া যাচ্ছে না। কয়লা পরিবহণের ক্ষেত্রেও কিছু সমস্যা চলায় জোগান অনিয়মিত হয়ে গিয়েছে। বিদ্যুৎ মহল সূত্রের খবর, কোল ইন্ডিয়া এখন রেলপথে রেক বাড়িয়ে এবং কাছের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে সড়কপথে কয়লা পাঠানোর কথা ভাবছে। নিগম-কর্তৃপক্ষ জানান, কোল ইন্ডিয়া আগামী কয়েক দিন রাজ্যের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির জন্য ১৫ রেক করে কয়লা পাঠাবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সেই কয়লা পেলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কোনও সমস্যা হবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy