প্লেটলেট নিয়েও কালোবাজারি!
ডেঙ্গির মরসুমে বিপুল রক্ত ও প্লেটলেটের চাহিদার মুখে এমনই অভিযোগ উঠেছে সরকারি হাসপাতালের অন্দরেই। সূত্রের খবর, একাধিক সরকারি ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে বিনামূল্যে বা অপেক্ষাকৃত কম টাকায় পাওয়া প্লেটলেটের সিংহভাগ পাচার হয়ে যাচ্ছে কিছু বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে ওই প্লেটলেটই চড়া দামে বিকোচ্ছে রোগীর পরিবারের কাছে। অভিযোগ, এই পাচারের কাজে সাহায্য করেই মোটা কমিশন কামাচ্ছেন সরকারি ব্লাডব্যাঙ্কের এক বা একাধিক কর্মী। মুনাফা লুটছে বেসরকারি হাসপাতালগুলি।
প্লেটলেট নিয়ে এই দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন খোদ বিভিন্ন সরকারি ব্লাডব্যাঙ্কে কর্মরত মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের একাংশই। তাঁদের দাবি, সর্ষের মধ্যেই ভূত। তাঁদেরই সহকর্মীদের একাংশ মোটা কমিশনের লোভে কিছু বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। ফলে বেশ কিছু সরকারি ব্লাডব্যাঙ্কে যত প্লেটলেট তৈরি হচ্ছে, তার সিংহভাগ চলে যাচ্ছে কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে।
সরকারি মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের তৃণমূলপন্থী সংগঠন ‘ওয়েস্টবেঙ্গল মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর রাজ্য সম্পাদক শমিত মণ্ডলের দাবি, প্লেটলেট নিয়ে দুর্নীতিতে সরকারি স্বাস্থ্য কর্মী ও সরকারি মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের একাংশই যুক্ত। তিনি জানান, সাধারণত বিকেলের পর সরকারি ব্লাডব্যাঙ্কে সংগৃহীত রক্তের উপাদান পৃথকীকরণ হয় ও প্লেটলেট তৈরি হয়। সেই প্লেটলেটের অধিকাংশটাই রাতের মধ্যে কিছু বেসরকারি হাসপাতালে চলে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘এটা দুঃখজনক, যে এঁরা সব আমাদেরই সহকর্মী। সরকারকে অনুরোধ করছি, অবিলম্বে এর তদন্ত শুরু হোক।’’
অগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে ডেঙ্গির আক্রমণ চরমে পৌঁছেছে। এসএসকেএমের ব্লাডব্যাঙ্কের তথ্য বলছে, ২২ অগস্ট ৪৮ ইউনিট প্লেটলেট তৈরি হয়েছে। মাত্র ১২ ইউনিট পেয়েছে ওই হাসপাতাল। ৩৬ ইউনিটই উধাও। অভিযোগ, এর পুরোটাই গিয়েছে বেসরকারি হাসপাতালে! ৯ অক্টোবর রাতে ওই ব্লাডব্যাঙ্কেই ৪২ ইউনিট প্লেটলেট তৈরি হয়েছিল। তার মধ্যে ২৮ ইউনিটই চলে গিয়েছে বেসরকারি হাসপাতালে! টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, ‘‘মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ, আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ, মালদহ মেডিক্যাল কলেজ, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের মতো সরকারি ব্লাডব্যাঙ্কে প্রতিদিন যত প্লেটলেট তৈরি হয়, তার ৬০-৬৫% চলে যাচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালে।’’ স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর বক্তব্য, ‘‘এই অভিযোগ আমরা গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখছি।’’
সরকারি হাসপাতালের এমন দুর্নীতি নিয়ে স্বাস্থ্য কর্মী ও রক্ত আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তদের অনেকের ব্যাখ্যা, সরকারি ব্লাডব্যাঙ্কের এক শ্রেণির টেকনোলজিস্ট ও কর্মী বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রচুর রক্তের কার্ড সংগ্রহ করে মজুত রাখেন। ওই কার্ডের বিনিময়ে নিখরচায় রক্ত ও রক্তের উপাদান মেলে সরকারি ব্লাডব্যাঙ্কে। কিছু বেসরকারি হাসপাতালের দালাল এই কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর নামে প্লেটলেটের রিকুইজিশন স্লিপ এঁদের কাছে পৌঁছে দেন।
তখন ওই টেকনোলজিস্টরা রক্তের কার্ডের বিনিময়ে, এক-এক জন রোগীর নামে ৪-৫ ইউনিট করে প্লেটলেট ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে বিনামূল্যে তুলে নেন। মোটা কমিশনের বিনিময়ে তা পৌঁছে যায় দালালদের হাতে। রাতে এটা বেশি হয়। ওই প্লেটলেটের মধ্যেই দু’এক ইউনিট মোটা টাকার বিনিময়ে দেওয়া হয় বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীকে। বাকিটা আবার অন্য কারও কাছে চড়া দামে বিক্রি করা হয়।
সূত্র বলছে, ডেঙ্গির মরসুমে এই প্লেটলেট-ব্যবসা দিব্য জমেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy