Advertisement
০৭ মে ২০২৪

রাজ্য ও পুরসভায় এক দলের পক্ষে সওয়াল মমতার

রাজ্যে যারা ক্ষমতায়, তারাই পুরসভা পরিচালনাতে থাকলে উন্নয়ন করতে সুবিধা হয়—সোমবার উত্তরবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য উস্কে দিল নতুন বিতর্ক। বিরোধীদের সমালোচনা, ‘‘বাম আমলে তো তৃণমূল কলকাতা পুরসভায় ক্ষমতায় ছিল। তখন তো উন্নয়ন ব্যাহত হওয়ার প্রশ্ন ওঠেনি!’’

নিজস্ব প্রতিবেদন
উত্তরবঙ্গ শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৫ ০৪:২৬
Share: Save:

রাজ্যে যারা ক্ষমতায়, তারাই পুরসভা পরিচালনাতে থাকলে উন্নয়ন করতে সুবিধা হয়—সোমবার উত্তরবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য উস্কে দিল নতুন বিতর্ক। বিরোধীদের সমালোচনা, ‘‘বাম আমলে তো তৃণমূল কলকাতা পুরসভায় ক্ষমতায় ছিল। তখন তো উন্নয়ন ব্যাহত হওয়ার প্রশ্ন ওঠেনি!’’ মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তিকেই ব্যবহার করে তাঁদের কটাক্ষ, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে দেশের সর্বত্র (এমনকী, এ রাজ্যেও) বিজেপি-র শাসন জারি করতে হয়! সর্বস্তরে একদলীয় শাসনের পক্ষে মুখ্যমন্ত্রীর সওয়ালের অন্দরে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করার ইঙ্গিত রয়েছে কি না, সে সন্দেহও রয়েছে বিরোধীদের। ঘটনাচক্রে এ দিনই হাওড়া পুরসভার বাজেট-বিতর্কে শাসক দলের বিরুদ্ধে বিরোধীদের ঘাড়ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সব মিলিয়ে দু’য়ে-দু’য়ে চার করছেন বিরোধীরা।

তিন দিনের উত্তরবঙ্গ সফরে এ দিন বাগডোগরা বিমানবন্দরে পৌঁছে পুরভোট নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মমতা বলেন, ‘‘আমরা এমনিতেই উন্নয়নের কাজ করছি। স্থানীয় স্তরে পুরসভায় তৃণমূল জিতলে রাজ্যে একযোগে উন্নয়নের কাজ ভাল ভাবে করা সম্ভব হবে। রাজ্যের সব পুরসভায় তৃণমূল জিতলে ভাল হবে।” তাঁর সংযোজন: “সরকার ও স্থানীয় বোর্ড আলাদা হলে উন্নয়ন বন্ধ হয়ে যায়।”

যদিও শিলিগুড়ি পুরভোটে সিপিএমের মেয়র পদপ্রার্থী তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য মনে করেন, রাজ্য সরকার ও স্থানীয় বোর্ড একই না হলে উন্নয়ন বন্ধ হওয়ার প্রসঙ্গ তোলা মুখ্যমন্ত্রীর অন্তত মানায় না। তাঁর দাবি, অতীতে তৃণমূল যখন কলকাতা পুরসভা দখল করেছিল, তখন রাজ্যে বামেরা ক্ষমতায় ছিলেন। তাতে পুর-এলাকায় উন্নয়নে বাধা হয়নি। অশোকবাবু বলেন, ‘‘যদি স্থানীয় বোর্ড ও সরকার একই দলের হতে হয়, তা হলে তো কেন্দ্রে ও রাজ্যে বিজেপির থাকা উচিত। উপরন্তু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভুলে যাচ্ছেন, দিল্লি দেশের রাজধানী হলেও কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের বিরোধিতা করে সেখানকার মানুষ কিন্তু আম আদমি পার্টিকে ক্ষমতায় বসিয়েছে।”

উত্তরবঙ্গের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্রসিংহ অহলুওয়ালিয়া বলেছেন, ‘‘২০১৬ পর্যন্ত মমতা এ রাজ্যে আছেন। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার তো ২০১৯ পর্যন্ত থাকছে। তা হলে মানুষ কার সঙ্গে যাবেন? রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তা বুঝতে পারছেন। তাই এমন বলছেন।’’ বিজেপি নেতা তথাগত রায়ের সংযোজন: ‘‘মুখ্যমন্ত্রী সরকারি সফরে গিয়ে দলের প্রচার করছেন। এটা সম্পূর্ণ নির্বাচনী বিধি ও সংবিধানের বিপরীত। কিন্তু মমতা হয় তা জানেন না, বা জেনেও তোয়াক্কা করেন না। ”

যদিও এ ধরনের মন্তব্য তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের মুখে আগেও শুনেছেন রাজ্যবাসী। গত লোকসভা ভোটের আগে হাওড়ায় প্রচারে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকেই বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘আমি চাই এখানেও (হাওড়া পুরসভায় তখন ক্ষমতায় বামেরা) তৃণমূলের পুর-বোর্ড আসুক। তাতে কাজ করতে সুবিধা হবে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি ছিল, ‘‘রাজ্যে আমরা ক্ষমতায়। কলকাতা পুরসভায় আমাদের বোর্ড। সেখানে কত ভাল কাজ হচ্ছে।’’ পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকেও নানা সময়ে দলনেত্রীর এই বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি করতে শোনা গিয়েছে।

উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের ব্যাখ্যা, ‘‘রাজ্যে যে সরকার রয়েছে, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলিতে একই দল ক্ষমতাসীন হলে উন্নয়নের গতিপ্রকৃতি বুঝতে বা নতুন পরিকল্পনা নিতে সুবিধা হয়। বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের মানে বুঝেও, না বোঝার ভান করছেন।”

বিরোধীরা অবশ্য এ যুক্তি মানছেন না। হাওড়া পুরসভায় এ দিন বাজেট বিতর্কের বক্তৃতার সময়ে সিপিএম কাউন্সিলর আসরাফ জাভেদকে বাধা দেওয়া, এমনকী, বর্ষীয়ান ওই বাম কাউন্সিলরকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে অধিবেশন কক্ষ থেকে বার করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে। ‘অগণতান্ত্রিক পরিস্থিতির’ প্রতিবাদে বাজেট-বিতর্ক বয়কট করে এক সঙ্গে কক্ষ ত্যাগ করেন সিপিএম ও বিজেপির চার কাউন্সিলর। তৃণমূল অভিযোগ উড়িয়ে দিলেও ওই ঘটনার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের মন্তব্যের উদ্দেশ্য মিলিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘‘এটা এক ধরনের স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতা। কোনও গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের কথা বলা বা এ ধরনের আচরণের অর্থ বিরোধীদের অগ্রাহ্য করা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE