Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal Condition

ভাঙছে আরও নদীবাঁধ, সাত জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে এ রাজ্যের নদীগুলোর জলস্তর এমনিতেই বেড়েছে। কোনও কোনও নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। কোথাও আবার নদী ছাপিয়ে গিয়ে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ঘাটালের।

ঘাটালের প্রতাপপুরের চৌধুরীপাড়ায় বাঁধ ভেঙে জল ঢুকছে শহরে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

ঘাটালের প্রতাপপুরের চৌধুরীপাড়ায় বাঁধ ভেঙে জল ঢুকছে শহরে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৭ ১৩:৩১
Share: Save:

বৃষ্টি থেমে গেলেও রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতির ছবিটা খুব একটা উন্নতি হয়নি। হাওড়া, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বীরভূম ও বাঁকুড়ায় জলবন্দি হাজার হাজার মানুষ। পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অভাব দেখা দিচ্ছে খাবারেরও। ঝাড়খণ্ডের তেনুঘাট, পাঞ্চেত, মাইথন থেকে জল ছাড়ার ফলে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির অবস্থা শোচনীয়।

আরও পড়ুন: মমতার মুখে ফের ‘ম্যানমেড’ বন্যা

কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে এ রাজ্যের নদীগুলোর জলস্তর এমনিতেই বেড়েছে। কোনও কোনও নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। কোথাও আবার নদী ছাপিয়ে গিয়ে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের। বুধবার রাতে প্রতাপপুরের কাছে শিলাবতী নদীর বাঁধ ভাঙায় হু হু করে শহরের বিভিন্ন এলাকায় জল ঢুকছে। ফলে নতুন করে বেশ কয়েকটি জায়গা প্লাবিত হয়েছে। প্রতাপপুরে বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় কয়েকটি বাড়িতে ৩০-৪০ জন আটকে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী নামানো হয় জলবন্দি মানুষদের উদ্ধারের জন্য। কিন্তু এলাকায় এত স্রোত যে বাহিনী সেখানে পৌঁছতেই পারেনি।

শুক্রবার সকালেও এক দফা চেষ্টা চলে। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। দুর্গত এলাকা হওয়ায় সেখানে ত্রাণও পৌঁছনো সম্ভব হচ্ছে না। হু হু করে ঢুকছে জল। প্রতাপপুরে জল প্রায় দোতলা বাড়ির সমান পৌঁছে গিয়েছে। বাঁধ ভাঙার ফলে ঘাটাল শহরের ৫টি ওয়ার্ড এবং দাসপুরের ১ ও ২ নম্বর ব্লকের ১৬টি পঞ্চায়েত এলাকার কয়েক হাজার মানুষ জলবন্দি। এ দিন দুপুরের পর বায়ুসেনার হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ঘাটালে জলবন্দি মানুষকে উদ্ধার করা হয়। ৬৫ জন উদ্ধার করা হয়েছে। মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের অনুরোধে ব্যারাকপুর থেকে বায়ুসেনার এমআই ১৭ ভি ৫ হেলিকপ্টারটি উদ্ধারকাজে নামে।


দাসপুরের সোনাখালিতে ত্রাণ বিলি করছেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।

ঘাটাল মহকুমার ৮১টি মৌজা প্লাবিত হয়েছে। তার উপর জলের চাপে বেশ কয়েকটি নদীবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। কোথাও এক মানুষ সমান জল, তো কোথাও এক তলা বাড়ির সমান। ঘাটালে প্রায় ৬০০ পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শুক্রবার দাসপুরে বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে যান রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি ত্রাণ বিলি করেন। প্রশাসন সব রকম ভাবে তাঁদের পাশে আছে বলে বন্যাদুর্গতদের আশ্বস্ত করেন তিনি।

অন্য দিকে, ভারী বৃষ্টিতে তমাল নদীর দু’কূল উপচে কেশপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা ক’দিন ধরেই জলমগ্ন। বৃহস্পতিবারও বিভিন্ন এলাকায় জল ছিল। আনন্দপুরের বহু এলাকাও জলের তলায় চলে গিয়েছিল। দিন কয়েক আগে এই সেতুর উপরে জল উঠে যায়। সমস্যার শুরু তখনই থেকে। আশপাশের এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ ভেঙে কার্যত ভেঙে পড়ে।


জলমগ্ন ঘাটাল কলেজ।

হাও়ড়ায় এ দিন মুণ্ডেশ্বরী নদীর বাঁধ ভেঙে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। নতুন করে আরও বেশি কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জেলায় ৯৯টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। জলবন্দি মানুষকে উদ্ধারের জন্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী যুদ্ধকালীন তত্পরতায় কাজ শুরু করেছে। প্লাবিত মানশ্রী, দেবীপুর, রঘুনাথপুর-সহ বেশ কয়েকটি এলাকা। হুগলির পুরশুড়ায় মির্জাপুরে বাঁধ ভেঙে গিয়ে গিয়ে আরামবাগের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। পুরশুড়ায় এক তলা সমান জল দাঁড়িয়েছে। খানাকুলে দামোদর, মুণ্ডেশ্বরে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বহু মানুষ জলবন্দি। এ দিন খানাকুলে জলের তোড়ে একটি নৌকা উল্টে এক জনের মৃত্যু হয়। কয়েক জনকে উদ্ধার করা হয়ছে। নিখোঁজ রয়েছেন বেশ কিছু। সবচেয়ে পরিস্থিতি খারাপ খানাকুলের ১ ও ২ নম্বর ব্লকের। গোঘাটের দিকে জল নামলেও নকুন্দা, শ্যাওড়া, বালি— এ সব এলাকায় জল ঢুকেছে।

বাঁকুড়ার বড়জোড়ার পখন্না মানাচরে দামোদরের বান দেখতে গিয়ে ভেসে গেলেন বছর বিয়াল্লিশের এক যুবক। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর নাম কানাই মণ্ডল। বাড়ি পখন্না গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। তাঁর খোঁজ চলছে। বড়জোড়ার মানাচর থেকে জল ধীরে ধীরে নামছে। তবে পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। সোনামুখীর নিত্যানন্দপুরে মানা সমিতির বেশ কিছু এলাকায় জল নামলেও কয়েকটি বাড়ি শুক্রবার সকালে জল নামার পরে ধসে পড়েছে।

বীরভূমের লাভপুরে শুক্রবার বিকেলে বন্যা পরিস্থিতি দেখতে পৌঁছন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। লাঘাটায় তিনি বলেন, ‘‘ম্যানমেড বন্যা। ডিভিসি ড্রেজিং করে না। সময়মতো জল ছাড়ে না। তাতেই বন্যা হয়। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সে সব রিপোর্ট আছে। ওরা (কেন্দ্রীয় সরকার) দিল্লির ঠান্ডা ঘরে বসে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করে। আর আমরা মাঠে ঘাটে কাজ করি।’’

মন্ত্রীর দাবি, লাভপুরের পরিস্থিতি এখন ভাল। জল সরেছে। লাঘাটা সেতুও খুলেছে। তাঁর আশ্বাস, ‘‘এক বছরের মধ্যে লাঘাটা কজওয়েতে নতুন সেতু গড়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Flood Heavy Rainfall West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE