কোনও এলাকায় ডেঙ্গি রোগী ধরা পড়লে সেখানে স্বাস্থ্য দফতরের সমীক্ষক দল চলে যাচ্ছে। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই ডেঙ্গি মোকাবিলার পরিকল্পনা তৈরি হওয়ার কথা। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গি পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে যেমন অনেক সময় সপ্তাহ পেরিয়ে যাচ্ছে, তেমনই স্বাস্থ্য-সমীক্ষকদের রিপোর্ট পেতেও কেটে যাচ্ছে প্রায় ১৫ দিন। ফলে এলাকায় নিশ্চিন্তে ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রমণ।
ডেঙ্গি মোকাবিলায় সরকারি টালবাহানার এই ছবিটাই বৃহস্পতিবার ধরা পড়ল উত্তর ২৪ পরগনা জেলাশাসকের দফতরে ডেঙ্গি-বৈঠকে। ডেঙ্গি এবং অন্যান্য সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে প্রতি জেলাতেই এখন তৈরি হয়েছে ‘ডিস্ট্রিক্ট ভিজিল্যান্স অ্যান্ড মনিটরিং কমিটি’। সেই কমিটিরই বৈঠক ছিল এদিন। সেখানে এলাকাভিত্তিক সমীক্ষা রিপোর্ট পেশের ক্ষেত্রে দেরির কথা সামনে আসায় প্রমাদ গুনছেন চিকিৎসক, পরজীবী-বিশেষজ্ঞরা।
যে জেলায় ডেঙ্গি উদ্বেগজনক হারে ছড়াচ্ছে, সেখানেই রোগ মোকাবিলায় এমন ঢিলেমিতে স্বাস্থ্য-কর্তারাও বিরক্ত। এক স্বাস্থ্য-কর্তা যেমন বলেন, ‘‘কোথায় কোথায় ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে তার ভৌগোলিক চিত্রটা আমরা যদি পরিষ্কার ভাবে না পাই, তা হলে রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা করব কী করে? স্বাস্থ্যকর্মী ও পুরসভার কর্মীদের একাংশকে বিষয়টির গুরুত্ব বোঝানোই যাচ্ছে না।’’
উত্তর ২৪ পরগনার মূলত নগর এলাকাগুলিতেই ছড়াচ্ছে ডেঙ্গি। সেখানে সমীক্ষা রিপোর্ট তৈরি করার কথা সংশ্লিষ্ট পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীদেরই। কোথাও ১০ দিন কোথাও ১৫ দিনের আগে সমীক্ষা রিপোর্ট মিলছে না বলে জেলার স্বাস্থ্য-কর্তাদের অনুযোগ। জেলার বিধাননগর কমিশনারেট এলাকা ছাড়াও দমদম, দক্ষিণ দমদম, বরাহনগর, কামারহাটি ও গাইঘাটায় ডেঙ্গিতে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে।
এ দিন বৈঠকে বিভিন্ন পুরসভার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত চেয়ারম্যান-পারিষদরা জানান, মূলত মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীরাই সমীক্ষার কাজটা করেন। কিন্তু তাঁদের অধিকাংশই বয়স্ক। সে কারণে এক-এক জন স্বাস্থ্যকর্মী এক-একটি পাড়ায় ২০০-৩০০ বাড়ি ঘুরে, তথ্য নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করে পুরসভায় জমা দিতে দিতেই ১০-১৫ দিন পেরিয়ে যাচ্ছে। এই কাজটা অল্পবয়স্কদের দিয়ে করালে তাড়াতাড়ি সমীক্ষা রিপোর্ট পাওয়া যাবে বলে বৈঠকে পুর-কর্তারা জানিয়েছেন।
পুর-কর্তারা এ দিনের বৈঠকে জানান, প্রতিদিনই এলাকার ডেঙ্গি পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। এমনও দেখা গিয়েছে, বাড়িতে হয়তো এক জনের ডেঙ্গি ছিল, কিন্তু ১৫ দিন পরে সেই পরিবারের সবাই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। আরও দেখা গিয়েছে, বেশ কিছু বাড়িতে ডেঙ্গির মশা জন্মেছে ঠাকুরঘরের জমা জল, ফুলের টবের নীচে জমা জলে। যা কিনা সময় মতো জানা গেলে তাঁদের সতর্ক করা যেত বলে দাবি চেয়ারম্যান-পারিষদদের। ডিস্ট্রিক্ট ভিজিল্যান্স অ্যান্ড মনিটরিং কমিটির চেয়ারম্যান, চিকিৎসক-সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার এ দিন বলেন, ‘‘সমস্যা মেটাতে বৈঠকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কাগজে-কলমে নয়, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সার্ভে করে প্রতিদিন অনলাইনে এলাকার ডেঙ্গি পরিস্থিতির রিপোর্ট দিতে হবে।’’
তবে ডেঙ্গি নিয়ে গড়িমসির প্রমাণ মিলেছে আরও। ‘ডিস্ট্রিক্ট ভিজিল্যান্স অ্যান্ড মনিটরিং কমিটি’র বৈঠকটির দিন আসলে নির্ধারিত ছিল ১৬ অগস্ট। কিন্তু সেদিন দেখা যায়, জেলার দু’য়েকটি ছাড়া বেশির ভাগ পুরসভার চেয়ারম্যান, পুরনিগমের চেয়ারম্যান-পারিষদরা উপস্থিত হননি। ফলে সেদিন ভেস্তে যায় বৈঠক। এ দিনের বৈঠকে অবশ্য উপস্থিত ছিলেন সকলেই।
এর মধ্যে রাজ্যে ডেঙ্গিতে আরও এক জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় দুর্গাপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় সেপকো টাউনশিপের বাসিন্দা উর্মিলা সিংহের (৬৫)। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৩ অগস্ট সন্ধ্যায় ভর্তি হয়েছিলেন ওই বৃদ্ধা। প্রথমে তাঁর রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়েনি। কিডনির সমস্যা ছিল। বুধবার সকালে ফের রক্তপরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়ে। এ দিন রাজ্যে আরও ২৩৭ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু ধরা পড়েছে। এই নিয়ে রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪৩৮।
(সহ প্রতিবেদন: সুব্রত সীট)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy