কলকাতায় নজরুল মঞ্চে সাংগঠনিক সভায় মাস কয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী ধমক দিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিল সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে মানিয়ে চলার নির্দেশ। নিজেদের মধ্যে বিরোধ মিটিয়ে উন্নয়নের কাজে মন দেওয়ার পরামর্শ ছিল তৃণমূল সুপ্রিমোর।
অবশ্য এখানেই শেষ নয়। হুগলি জেলা পরিষদে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা কানে পৌঁছেছিল নেত্রীর। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিধানসভায় ডেকে জেলা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে তাঁদের সমস্যা নিয়ে আলোচনাও করেন। সব পক্ষকে ডেকে দ্রুত সবকিছু মিটিয়ে নিয়ে দলনেত্রীর নির্দেশমত কাজ করতে বলেন। এমনকী জেলা পরিষদের কোনও কাজে বিঘ্ন ঘটলে অথবা কোনও সমস্যা দেখা দিলে তা মেটানোর জন্য জেলার মন্ত্রী, সাংসদ এবং অন্যদের নিয়ে একটি ‘মনিটারিং’ কমিটি গড়ে দেওয়া হয়। কমিটির মাথায় বসানো হয় দলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্তকে। ঠিক হয়, কমিটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর জেলা পরিষদের কাজ সঠিকভাবে হচ্ছে কি না তা তদারকির জন্য বৈঠকে বসবে। কোনও সমস্যা হলে তা মেটাবে।
কিন্তু দলনেত্রীর নির্দেশ এবং কমিটি গড়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টাও ধোপে টিঁকল না। পরিস্থিতি এমনই যে শাসকদলের কাজিয়ায় জেলা পরিষদের কাজকর্ম বর্তমানে কার্যত লাটে। জেলা পরিষদ গঠনের সময় শাসকদলের সদস্যদের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাবের যে ছবি দেখা গিয়েছিল তা প্রায় একই রয়েছে। উল্টে জেলা সভাধিপতির সঙ্গে দলেরই বহু সদস্যের সংঘাতে অবস্থা আরও জটিল হয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে জেলা পরিষদের প্রতিদিনের কাজে।
হুগলি জেলা পরিষদের অন্দরের সমস্যা আসলে কোথায়?
দল নির্দেশিত জেলা সভাধিপতি মেহেবুব রহমান দলীয় সদস্যদের একটা বড় অংশের কাছে প্রথম থেকেই না-পসন্দ। বস্তুত, জেলা সভাধিপতি হওয়ার আগে দলীয় রাজনীতিতে ততটা পরিচিত মুখ ছিলেন না। পরিণতিতে সভাধিপতির ‘কাজ’ নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলে তাঁকে পদ থেকে সরাতে লিখিত আবেদন জমা পড়ে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে। পত্রপাঠ সেই দাবি নাকচ করে দেন দলনেত্রী। ফল, গোষ্ঠীবিরোধ মেটার পরিবর্তে দিনে দিনে বেড়েছে।
বিরোধ মেটাতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ এবং মনিটারিং কমিটি গঠনের পর এ পর্যন্ত কমিটি একবারই বৈঠকে বসেছে। কমিটির এক সদস্যর কথায়, ‘‘পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে জেলা সভাধিপতি কোন রাস্তায় হাঁটবেন তার উপর। তাঁর কাজের ক্ষেত্রে কী কী সমস্যা রয়েছে। সেই সমস্যার সমাধান খুঁজতে তিনি কী ভাবে মনিটারিং কমিটিকে কাজে লাগাবেন। কিন্তু এ সব নিয়ে তাঁর আগ্রহ কোথায়?’’
দলের সদস্যরা অভিযোগ তুললেও কিন্তু ঠিক ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে জেলা সভাধিপতি মেহেবুব রহমান সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘নিয়মমাফিক প্রতিটি স্থায়ী কমিটির সঙ্গে অর্থ দফতরের বৈঠক হয় নিয়মিত। না হলে কাজকর্ম হচ্ছে কী করে? এরপর বৈঠক ছা়ড়াও জেলা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে নানা কাজের বিষয়ে প্রায় প্রতিদিনই আমার সঙ্গে কথা হয়। হচ্ছে না টা আবার কী?’’
সভাধিপতি দাবি করলেও কিন্তু বাস্তব হচ্ছে, জেলা পরিষদের নয়টি স্থায়ী কমিটি রয়েছে। প্রথা অনুযায়ী প্রতি মাসে অর্থ দফতরের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের আগে দলনেতা প্রতিটি স্থায়ী কমিটির সঙ্গে বসবেন। সেই বৈঠকেই স্থির হবে কোন কোন প্রকল্পের কাজ চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য অর্থ দফতরে পাঠানো হবে। জেলা পরিষদের এক সদস্য বলেন, ‘‘এখন মিটিংটা হয়। কিন্তু পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে কে শাসক আর কারাই বা বিরোধী তা বোঝা কঠিন। এত চেঁচামিচি হয় বৈঠকে। যেন হাট। ’’
যদিও এই বিষয়ে যুযুধান কোনও গোষ্ঠীই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চায়নি। দলের জেলা সভাপতি ও বিধায়ক তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘কোথাও কোনও সমস্যা থাকলে, তা অবশ্যই আলোচনা করে মিটিয়ে নেওয়া হবে।’’
জেলা সভাপতি এমন আশ্বাস এবং বিধানসভা নির্বাচনের আগে উন্নয়ন নিয়ে লাগাতার প্রচারে দলের নেতা-কর্মীরা নামলেও হুগলিতে শাসকদলের অন্দরমহলের এ হেন চরম আকচা-আকচি উন্নয়নের কোন দিশা দেখাচ্ছে সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। যা বিধানসভা নির্বাচনে বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেবে বলে মনে করছে জেলা তৃণমূলের একাংশ।
সিপিএম-তৃণমূলের গোলমাল হিন্দমোটরে। সিপিএম ও তৃণমূলের গোলমালে সোমবার ও মঙ্গলবার উত্তেজনা ছড়াল হুগলির হিন্দমোটরে। দু’পক্ষই মারধরের অভিযোগ দায়ের করেছে উত্তরপাড়া থানায়। এক সিপিএম কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তৃণমূলের কেউ ধরা পড়েনি। শাসকদলের পুলিশ বলেই তৃণমূলের কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে প্রশ্ন উঠেছে। সোমবার রাতে সিপিএমের কিছু কর্মী-সমর্থক হিন্দমোটর নন্দনকানন এলাকার একটি পার্কে আড্ডা দিচ্ছিলেন। রাত ১০টা নাগাদ তিন জন তৃণমূল কর্মী বাইক নিয়ে সেখান দিয়ে যাচ্ছিল। অভিযোগ, দ্রুত পার্ক খালি করার হুমকি দিয়ে তারা চলে যায়। অভিজিৎ চক্রবর্তী নামে এক সিপিএম কর্মী প্রতিবাদ করায় দু’পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ধাক্কাধাক্কি হলেও তখনকার মতো ঝামেলা মিটেও যায়। মঙ্গলবার সকালে ফের গোলমাল শুরু হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy