আংশিক বা একটি-দু’টি প্রশ্নে মতভেদ নয়। তৃণমূল সাংসদ তাপস পালের উস্কানিমূলক মন্তব্যের জেরে দায়ের হওয়া মামলায় সব ক’টি প্রশ্নেই ভিন্নমত কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতি গিরীশচন্দ্র গুপ্ত এবং বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী। মঙ্গলবার বিচারপতি গুপ্তই আদালতে এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন।
ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতি একমত হতে না-পারায় গত ১৩ অগস্ট তাপসের ওই মন্তব্য সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তি হতে পারেনি। বিচারপতি গুপ্ত সে-দিন বলেছিলেন, সিঙ্গল বেঞ্চের (বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের) রায় তিনি খারিজ করে দিচ্ছেন। রাজ্য সরকার এবং তাপস পাল এই দু’পক্ষ ডিভিশন বেঞ্চে যে আপিল করেছেন, তিনি সেটি গ্রহণ করছেন। একই সঙ্গে ওই সাংসদের উক্তি ও মন্তব্যের ব্যাপারে সিআইডি তদন্তের নির্দেশও খারিজ করে দিচ্ছেন। ঘটনার তদন্ত করার নির্দেশ দিচ্ছেন পুলিশকেই।
ওই ডিভিশন বেঞ্চের অন্য বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী সে-দিন জানান, তিনি রাজ্য সরকার এবং তাপস পালের দায়ের করা আপিল খারিজ করছেন। একই সঙ্গে সিঙ্গল বেঞ্চ (বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত)-এর নির্দেশই বহাল রাখছেন। ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতি এই ব্যাপারে একমত হতে না-পারায় মামলাটির বিচার এ বার কোন বিচারপতির আদালতে হবে, হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিরই তা স্থির করার কথা। কিন্তু মঙ্গলবার পর্যন্ত তা ঠিক হয়নি।
তা হলে এ দিন ওই ডিভিশন বেঞ্চেই তাপস পালের মন্তব্য সংক্রান্ত মামলাটি উঠল কী করে?
হাইকোর্টেরই এক আইনজীবী লিখিত ভাবে আবেদন জানান, কী কারণে দুই বিচারপতি একমত হতে পারলেন না, ডিভিশন বেঞ্চ তা জানাক। তার ভিত্তিতেই ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন জানায়, এমন নয় যে, দুই বিচারপতির মধ্যে কোনও প্রশ্নে মতের মিল হয়েছে। আসলে কোনও প্রশ্নেই ঐকমত্য হয়নি। বিচারপতি গিরীশচন্দ্র গুপ্ত জানান, এই মামলায় কোনও ক্ষেত্রে তাঁদের মত মেলেনি।
অনেক মামলাতেই কিছু কিছু প্রশ্নে ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতিদের মধ্যে মতের মিল হয় না। কিন্তু একটি মামলায় সব প্রশ্নেই বিচারপতিদের এমন মতপার্থক্য সচরাচর দেখা যায় না বলে জানাচ্ছেন আইনজীবীরা।
লোকসভা নির্বাচনের আগে নদিয়ার নাকাশিপাড়া থানা এলাকায় দলের একাধিক সভায় ‘হেট স্পিচ’ বা উস্কানিমূলক বক্তৃতা দেন তাপস। সম্প্রতি টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্রে সেই বক্তব্য সম্প্রচারিত হওয়ার পরে তোলপাড় শুরু হয়। পুলিশ ওই সাংসদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না-নেওয়ায় এক ব্যক্তি হাইকোর্টে মামলা করেন।
তাপসের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিচারপতি গিরীশচন্দ্র গুপ্ত এবং বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করেন রাজ্য সরকার এবং তাপস। ডিভিশন বেঞ্চে গত ১৩ অগস্ট তার ফয়সালা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বেঞ্চের দুই বিচারপতির মতভেদের দরুন সে-দিন ওই মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। ওই ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিআইডি তদন্তের নির্দেশের উপরে স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। দুই বিচারপতি মামলাটি পাঠাবেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে। কোন বেঞ্চে সেটি যাবে, প্রধান বিচারপতিই সেই সিদ্ধান্ত নেবেন।
এ দিন তাপস পালের আইনজীবী ওই স্থগিতাদেশের মেয়াদ ২ সেপ্টেম্বর থেকে আরও দু’সপ্তাহ বাড়ানোর জন্য ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন জানান। ডিভিশন বেঞ্চ অবশ্য সেই আর্জি শুনতেই রাজি হয়নি। হাইকোর্টের আইনজীবীদের একাংশের মত, ডিভিশন বেঞ্চ একমত হতে না-পারায় মামলাটি যে-হেতু শুনানির জন্য
অন্য বিচারপতির কাছে যাবে, সেই কারণে স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন শুনতে চায়নি ডিভিশন বেঞ্চ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy