দীর্ঘ তিন দশক ধরে আর্সেনিক নিয়ে চর্চা করছেন তিনি। তাঁর আর্সেনিক-গবেষণা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। অথচ রাজ্যে আর্সেনিক দূষণের হাল খতিয়ে দেখতে গড়া কমিটি থেকে বাদ পড়ে গেলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজের সেই প্রাক্তন অধিকর্তা দীপঙ্কর চক্রবর্তী!
এতে রাজনীতির কলকাঠি দেখছে গবেষক মহল এবং পরিবেশবিদদের একটি বড় অংশ। তাঁদের বক্তব্য, বাম জমানাতেও দীপঙ্করবাবুকে প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয়নি। তৃণমূলের আমলেও তিনি ব্রাত্য থেকে গেলেন। দীপঙ্করবাবুর মতো বিশেষজ্ঞকে ধারাবাহিক ভাবে এমন রাজনৈতিক অবহেলার শিকার হতে হচ্ছে কেন, প্রশ্ন তুলছে গবেষক শিবির।
মূলত গাইঘাটা ও তেঘরিয়া ব্লকে আর্সেনিক দূষণের হালহকিকত জানতেই শুক্রবার ওই কমিটি গ়ড়া হয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালতে। তাতে রাজ্য আর্সেনিক টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান কুমারজ্যোতি নাথ, জনস্বাস্থ্য-বিজ্ঞানী অরুণাভ মজুমদার, চিকিৎসক দেবেন্দ্রনাথ গুহ মজুমদার, এসএসকেএম হাসপাতালের কমিউনিটি মেডিসিনের শিক্ষক রঘুনাথ মিশ্র ছাড়াও রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক প্রতিনিধি রয়েছেন। শুধু দীপঙ্করবাবুরই ঠাঁই হয়নি। যাঁরা এ রাজ্যে ও বাংলাদেশে আর্সেনিক দূষণ নিয়ে কাজ করেন, তাঁদের একাংশের বক্তব্য, পিজি-র গ্যাসট্রো এন্টেরোলজি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান দেবেন্দ্রনাথবাবু ছাড়া ওই কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া অনেকেই আর্সেনিক দূষণ সংক্রান্ত গবেষণার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন।
অথচ ওই কমিটির প্রধান হিসেবে দীপঙ্করবাবুর নাম প্রস্তাব করেছিলেন সংশ্লিষ্ট মামলার আবেদনকারী সুভাষ দত্ত। তাঁর আক্ষেপ, রাজ্য সরকারের তীব্র আপত্তিতেই দীপঙ্করবাবুকে কমিটিতে রাখা গেল না। দীপঙ্করবাবু ছাড়া ওই কমিটি সম্পূর্ণ কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন আবেদনকারী। সুভাষবাবু বলেন, ‘‘যিনি আজীবন আর্সেনিক নিয়ে গবেষণা করলেন, আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃতি পেলেন, তাঁকে কমিটিতে নিতে আপত্তি কীসের, সেটাই বুঝলাম না। হাজারো সওয়াল করেও হেরে গেলাম।’’
দীপঙ্করবাবু বাদ পড়লেন কেন?
‘‘রাজ্য সরকার আমাকে নামের যে-তালিকা দিয়েছিল, আমি সেটাই আদালতে জানিয়েছি। আদালত যা ভাল বুঝেছে করেছে,’’ বলেন এই মামলার সরকারি আইনজীবী বিকাশ করগুপ্ত। আর কুমারজ্যোতিবাবু শুধু বলেন, আদালত চাইলে যে-কোনও বিশেষজ্ঞকেই রাখতে পারত।
এক পরিবেশবিদের মন্তব্য, বাম সরকার কোনও বিষয়ে সুস্পষ্ট, যুক্তিনিষ্ঠ বক্তব্য সহ্য করতে পারত না। তৃণমূল সরকারও সেই পথের পথিক। বাম আমলে দীপঙ্করবাবু বা স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ত্বক বিভাগের প্রাক্তন প্রধান কে সি সাহা (যিনি পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে ভূগর্ভস্থ পানীয় জলে আর্সেনিক দূষণের প্রথম সন্ধান দেন) কোনও সরকারি কমিটিতে ঠাঁই পাননি। তৃণমূল সরকারও একই পথে হাঁটল। পরিবেশ আদালতের নির্দেশ, নবগঠিত কমিটি গাইঘাটা ও তেঘরিয়া ব্লকে সমীক্ষা ও নমুনা সংগ্রহ করবে। কী ভাবে ওই এলাকায় আর্সেনিকের দূষণ রোধ করা যায়, সেই পথও বাতলাবে তারা। ১২ জানুয়ারির মধ্যে তাদের রিপোর্ট দেওয়ার কথা।
ওই কমিটির রিপোর্ট কতটা কাজে আসবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশবিদদের অনেকে। তাঁরা বলছেন, রাজ্যে আর্সেনিক দূষণ চলছে প্রায় তিন দশক ধরে। কিন্তু পরিস্থিতির বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। প্রতি বছরই নতুন নতুন এলাকা আর্সেনিকের কবলে প়়ড়ছে। সুভাষবাবু তাঁর আবেদনে বলেছেন, গাইঘাটায় পঞ্চায়েতের নলকূপেও বিপজ্জনক মাত্রায় আর্সেনিক পাওয়া গিয়েছে। তাঁর দাবি, জাতীয় পরিবেশ প্রযুক্তি গবেষণা সংস্থা (নিরি)-র রিপোর্টে প্রায় ৭০০টি নলকূপে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক মিলেছে।
‘‘এমন কমিটি আগেও হয়েছে। কিন্তু কাজ কতটা হবে,’’ প্রশ্ন এবং সংশয় কমিটিরই এক সদস্যের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy