Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

কাল্লুর অসভ্যতায় অতিষ্ঠ ছিল পাড়া

তার শখ হল, মেয়েদের স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে ছাত্রী ও শিক্ষিকাদের উদ্দেশে অশ্লীল মন্তব্য ও অঙ্গভঙ্গি করা। আর বন্ধুবান্ধব জুটিয়ে স্কুলের আশপাশেই মদ্যপান, মদের ফাঁকা বোতল স্কুল চত্বরে ছুড়ে দেওয়া।

শুভাশিস ঘটক ও দীক্ষা ভুঁইয়া
শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:০৭
Share: Save:

তার শখ হল, মেয়েদের স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে ছাত্রী ও শিক্ষিকাদের উদ্দেশে অশ্লীল মন্তব্য ও অঙ্গভঙ্গি করা। আর বন্ধুবান্ধব জুটিয়ে স্কুলের আশপাশেই মদ্যপান, মদের ফাঁকা বোতল স্কুল চত্বরে ছুড়ে দেওয়া। তবে সে সব চেয়ে মজা পায়, প্রচণ্ড গতিতে গাড়ি ছুটিয়ে কোনও ছাত্রীর সামনে হঠাৎ ঘ্যাঁচ করে দাঁড়াতে। এই সব অভিযোগ যার বিরুদ্ধে, সেই কাল্লু মোল্লার গাড়িতেই সোমবার নিভে গিয়েছে দুটি প্রাণ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন আরও চার জন।

পুলিশ জানায়, সোমবার বিকেলেও রসপুঞ্জ মোড়ে জ্ঞানদাময়ী বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে গাড়ি নিয়ে সেই কায়দাই করতে গিয়েছিল কাল্লু মোল্লা। কিন্তু মত্ত অবস্থায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়ি নিয়ে সে পিষে দেয় পড়ুয়া এবং অভিভাবকদের।

ঘটনার পর ৩০ ঘণ্টা কেটে গেলেও মূল অভিযুক্ত কাল্লু মোল্লাকে ধরতে পারেনি পুলিশ। দুর্ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটার দূরে বনগ্রামে বাড়ি কাল্লুর। তারা তিন ভাই-বোন। সোমবার সন্ধ্যা থেকে গোটা পরিবার এলাকা থেকে বেপাত্তা। কাল্লুর সঙ্গে তার জনা তিনেক বন্ধুও গাড়িতে ছিল। দুর্ঘটনার পরে তারাও পালিয়ে যায়।

জ্ঞানদাময়ী বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ মঙ্গলবার জানাচ্ছেন, কাল্লু ও তার সাঙ্গোপাঙ্গদের উপদ্রব নতুন কিছু নয়, কয়েক বছর ধরে এমনটাই চলছে। ওই স্কুল ছাড়াও আরও পাঁচটি স্কুল রসপুঞ্জে। সব স্কুলের ছাত্রী ও শিক্ষিকাদের একাংশের অভিযোগ, কখনও না কখনও তারা কাল্লু ও তার দলের কটূক্তি, টিটকিরি, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির শিকার হয়েছেন। স্কুল শুরুর আগে আর ছুটির সময়ে কাল্লু নিয়ম করে তার সঙ্গীদের নিয়ে স্কুলের গেটের কাছে দাঁড়াত।

এলাকার মানুষদের অনেকেই জানাচ্ছেন, জ্ঞানদাময়ী বালিকা বিদ্যালয়ের পিছনে একটি মাঠ আছে, যেটি স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ‘৫২ বিঘা’ বলে পরিচিত। অভিযোগ, প্রায়ই ওই মাঠে সাঙ্গোপাঙ্গদের নিয়ে দিনেদুপুরে মদ্যপানের আসর বসাত কাল্লু। মাঝেমধ্যে মদ খেয়ে খালি বোতলও স্কুলের দিকে ছুড়ে দিত এবং ছাত্রী ও শিক্ষিকাদের উত্ত্যক্ত করত।

কিন্তু রসপুঞ্জের দুর্ঘটনার পর এখন এ সব নিয়ে সরব এলাকাবাসী। স্থানীয়দের দাবি, বছর দেড়েক আগে কাল্লু ও সাঙ্গোপাঙ্গদের বিরুদ্ধে বিষ্ণুপুর থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছিল এবং সেই সময়ে স্কুলের পরীক্ষার সময়ে সিভিক ভলান্টিয়ার পর্যন্ত মোতায়েন করতে হয়। তার পর পুলিশি নজরদারি সরতে ফের কাল্লুরা স্বমহিমায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের একটি সূত্রে অবশ্য জানা যাচ্ছে, অভিযোগ কিন্তু কাল্লু মোল্লা বা নির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়নি, ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ কেবল পাওয়া গিয়েছিল। পুলিশের একাধিক সূত্র এখন স্বীকার করে নিচ্ছেন, গত বছর দুর্গাপুজোর সময়ে রসপুঞ্জ তল্লাটে অশান্তির মূলে কাল্লুর নাম উঠে আসে।

সোমবার যে গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটায়, সেই এসইউভি-টি কাল্লুর বাবা জাকির মোল্লা কেনেন তিন বছর আগে। গাড়িটি যখন ভাড়া খাটত না, তখন তা নিয়ে বেরোত কাল্লু। সোমবার যেমন বেরিয়েছিল। স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই দিন সকাল ১০টার সময়ে স্কুলের সামনে গিয়েছিল কাল্লু। তার পর কিছুক্ষণের জন্য চলে যায়। অভিযোগ, ফের দুপুর ২টো নাগাদ সেখানে গিয়ে স্কুল থেকে অল্প দূরে গাড়ি দাঁড় করিয়ে তার মধ্যেই কাল্লু দলবল নিয়ে মদ খাচ্ছিল। তার কিছুক্ষণ পরেই ওই দুর্ঘটনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kallu Molla Miscreant
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE