আচার্য রাজ্যপালের পরে দায় নিলেন না শিক্ষামন্ত্রীও।
এর পরে বিভ্রান্ত শিক্ষা মহলের প্রশ্ন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া বিধির প্রস্তাবিত সংযোজনের প্রস্তাবটি তা হলে কার?
সম্প্রতি রাজ্যপালের দফতর থেকে যাদবপুরের খসড়া বিধিতে কয়েকটি বিষয় সংযোজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে— কোনও শিক্ষক, আধিকারিক বা শিক্ষাকর্মী সংবাদমাধ্যমে সরকারের কোনও নীতির বিরোধিতা করলে তাঁর বিরুদ্ধে শ়ৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ হলে শাস্তিরও বিধান রাখা হয়েছে ওই বিধিতে। তাতে ভর্ৎসনা থেকে শুরু করে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার কথাও উল্লেখ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো খসড়া বিধিতে শাস্তির ধারা কে সংযোজন করল, গত কয়েক দিন ধরেই তা নিয়ে চাপানউতোর চলছে। বৃহস্পতিবার আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠী জানিয়েছিলেন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া বিধিতে যে সব ধারা সংযোজন করা হয়েছে সে ব্যাপারে রাজভবন ওয়াকিবহাল নয়। রাজ্যপাল বলেছিলেন, ‘‘রাজভবন থেকে এমন কোনও প্রস্তাব যায়নি। রাজ্য সরকারই বিশ্ববিদ্যালয়কে এই সংযোজনগুলি প্রস্তাব করেছে।’’
রাজ্যপালের এ হেন মন্তব্যের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শুক্রবার ঠাকুরপুকুরের একটি কলেজের অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন— খসড়া বিধিতে কে নতুন ধারা সংযোজন করেছে, তিনি জানেনই না। পার্থবাবু বলেন, ‘‘সবাই ভাবছে আমরা সংযোজন করেছি। কিন্তু আমাদের করণীয় কিছুই নেই। এটা কমিটির প্রস্তাব।’’ সেটা কোন কমিটি? তা অবশ্য জানাননি শিক্ষামন্ত্রী।
পার্থবাবু বলেন, ‘‘আমি পুরো খসড়া বিধি দেখিওনি। আমার পক্ষে দেখা সম্ভব নয়।’’
পার্থবাবুর এ দিনের মন্তব্যের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন জুটা’র সভানেত্রী নীলাঞ্জনা গুপ্তের মন্তব্য, ‘‘গোটা বিষয়টাই হাস্যকর ঠেকছে। আচার্য করেননি, মন্ত্রী করেননি। সংযোজন তা হলে ভূতে করল নাকি?’’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন— নিয়ম অনুযায়ী, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তাঁদের সংশোধিত বিধির খসড়া আচার্যের দফতরে পাঠায়। রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পদাধিকার বলে আচার্যের সচিব। সুতরাং নিয়ম অনুযায়ী, তাঁর কাছেই পাঠানো হয়েছে বিধিটি। উচ্চশিক্ষা দফতর থেকে পাঠানো হয় ওই দফতরের আইন বিভাগে। কারণ নতুন আইনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালের পাঠানো বিধি সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না— তা খতিয়ে দেখার কাজ ওই বিভাগেরই।
তার মধ্যেই বিধিতে এই সংযোজনকে কেন্দ্র করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় উত্তাল। বিশেষ করে আচার্য নিজের দায় অস্বীকার করার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অধিকারে সরকারের হস্তক্ষেপের বিষয়টিই ফের সামনে আসে। বিধির বদল করে সরকার আসলে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চাইছে বিশ্ববিদ্যালয়ে— এই অভিযোগে আন্দোলনের ডাক দেন শিক্ষকদের একটা বড় অংশ।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে (১৯৮১) বলা রয়েছে, কর্মসমিতি থেকে বিধির যে খসড়া রাজ্যপালের কাছে যায়, সেটি চূড়ান্ত করার আগে আচার্য মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে নেবেন। সেই কারণেই শিক্ষাবিদদের একাংশ মনে করছেন শিক্ষামন্ত্রী বা আচার্য— দু’জনের কেউই এই সংযোজনের দায় এড়িয়ে যেতে
পারেন না।
তাই শুক্রবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এই বক্তব্যের পর সত্যিটা আসলে কী, এই প্রশ্নই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। ‘আবুটা’র যুগ্ম সম্পাদক গৌতম মাইতি বলেন, ‘‘যদি রাজভবনও না-পাঠিয়ে থাকে, শিক্ষা দফতরও না-পাঠিয়ে থাকে, তবে উচ্চশিক্ষা দফতর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানাক, এই সংযোজন তাদের দেওয়া নয়। সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠানো খসড়া বিধির উপর ভিত্তি করেই চূড়ান্ত বিধি তৈরি করা হোক।’’ এর বিরুদ্ধে মঙ্গলবার কর্মবিরতির ডাকও দিয়েছেন তাঁরা। তাতে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে ‘জুটা’। সংগঠনের সভানেত্রী
নীলাঞ্জনা গুপ্ত বলেন, ‘‘মঙ্গলবার উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে দ্রুত কর্মসমিতির বৈঠকের আবেদন জানাব। এবং ওই বৈঠকে যাতে সংযোজনগুলির বিরোধিতা করা হয় সেই দাবিও থাকবে।’’ পাশাপাশি ওই দিন পরবর্তী আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করা হবে। পড়ুযাদেরও ওই আন্দোলনে যুক্ত করার কথা
জানান নীলাঞ্জনাদেবী।
বিধির এই সংযোজনের সিদ্ধান্তে স্বৈরতন্ত্রের ছায়া দেখছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়ও। ‘‘রাজ্য সরকারের লোকই তো বিশ্ববিদ্যালয়ে বিধি পাঠিয়েছে মতামতের জন্য। শিক্ষামন্ত্রী কী করে দায় এড়াতে পারেন তার? আচার্যকে না জানিয়ে যদি এই সংযোজন হয়ে থাকে তা অনৈতিক তো বটেই, অবৈধও।’’
—বলেন আনন্দদেববাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy