রোগ এক, ছবিটা আলাদা। সরকারি হাসপাতাল রোগীর চাপে মুখ থুবড়ে পড়ছে, বেসরকারি হাসপাতাল জ্বর ছাড়তে না ছাড়তেই রোগীকে বাড়ি পাঠাচ্ছে। ডেঙ্গিতে এখন অনেকেরই জ্বর কমার পরে নানা উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। কারও ঝপ করে প্লেটলেট নামছে, কারও বমি হচ্ছে, হেমারেজিক ডেঙ্গির ক্ষেত্রে রক্তপাতও। পরিস্থিতি সামাল দিতে জ্বরের পরে তাই আরও দু’দিন রোগীকে হাসপাতালে রেখে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। তাতে সরকারি হাসপাতালের চাপ বেড়েছে। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালগুলোর অনেকেই গা ছাড়া, ফলে একাধিক রোগীর আত্মীয়ের অভিযোগ, তাঁরা বাড়ি নিয়ে যেতে না চাইলেও হাসপাতাল জোর করছে।
উত্তর ২৪ পরগনার একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক যেমন জানাচ্ছেন, এক তরুণীর জ্বর কমে যাওয়ার পরে পরিবারের লোকেরা হাসপাতালের চাপে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন। বাড়ি ফিরে তরুণী এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে তাঁকে আর বাঁচানো যায়নি।
উত্তর কলকাতার আর এক হাসপাতালে ভর্তি উল্টোডাঙার এক যুবককে তাঁর পরিবার জ্বর কমতেই বাড়ি নিয়ে এসেছিল। পরদিনই বাড়াবাড়ি শুরু হয়। বসে থাকতে থাকতে তিনি পড়ে যান। বমি হতে থাকে ঘন ঘন। বমির সঙ্গে রক্ত। শেষ পর্যন্ত আর একটি নার্সিংহোমে ভর্তি হয়ে তবে প্রাণে বাঁচেন যুবক।
দক্ষিণ কলকাতাতেও বেসরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, এনএস১ পজিটিভ পাওয়ার পরে এক তরুণকে তাঁর বাবা-মা ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন। তিন দিনে জ্বর কমতেই ডিসচার্জ করানোর জন্য চাপ দেওয়া শুরু হয়। ‘‘আমি ওর মা-কে জানিয়েছিলাম, জ্বর কমার পরেই আসল বিপদ শুরু হবে। ছেলেটির বমি শুরু হয়েছে কাল থেকে। মাথা তুলে বসতে পারছে না।’’
জ্বর কমার পরে তাই কড়া নজরদারির পরামর্শই দেন অভিজ্ঞ চিকিৎসকেরা। তা হলে বেসরকারি হাসপাতালের তরফে রোগীদের
বাড়ি ফেরাতে কেন তাড়াহুড়ো
করা হচ্ছে? চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ‘‘ডেঙ্গি রোগীকে বেশিদিন ভর্তি রেখে আদতে হাসপাতালের লাভ কম। কারণ, ডেঙ্গি বা জ্বরের চিকিৎসায় আনুষঙ্গিক খরচ তেমন লাগে না। স্যালাইন দিতে হয়। প্যারাসিটামলেই কাজ চলে যায়।’’
কিন্তু জ্বর কমার পরে এমন বিপদই বা কেন হয়? পরজীবীঘটিত রোগ বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দীর বিশ্লেষণ, যাঁদের প্রথম বার ডেঙ্গি হয় তাঁদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের প্রথম চার-পাঁচ দিন জীবাণু একাই রক্তের মধ্যে ঘুরে বেড়ায়। তখন জ্বর হয়। তার পর রক্তের মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি হলেই সে জীবাণুটিকে মেরে ফেলতে শুরু করে। অমিতাভবাবু বলেন, ‘‘মৃত জীবাণুর শরীর থেকে অ্যান্টিজেন নিঃসৃত হয়ে রক্তে ভেসে বেড়ায়।
নানা রাসায়নিকের সঙ্গে জোট
বেঁধে সেই জটিল পদার্থটি বিভিন্ন কোষের উপরে চেপে বসে কোষগুলিকে ক্ষয় করে দেয়। তখনই বমি, রক্তক্ষরণ, প্লেটলেট কমা, লিভারের সমস্যা দেখা যায়। যে রোগীর শরীরে যত বেশি জীবাণু ঢোকে, মৃত জীবাণু থেকে তত বেশি অ্যান্টিজেন তৈরি হয়। ধ্বংসাত্মক প্রতিক্রিয়াও বেশি হয়।’’
তাই প্রথম বার ডেঙ্গি আক্রান্তদের ক্ষেত্রে জ্বরের সময়ে সাধারণত ভর্তির পরামর্শ দেন না অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা। তাঁরা জ্বর কমার পরের পরিস্থিতির উপরে নজর রাখেন। তাঁদের মতে, ‘‘কোন সংক্রমণে শারীরিক প্রতিক্রিয়া কখন, কেমন হয়, কত দিনের মাথায় জীবাণু সব থেকে সক্রিয় হয় সে ব্যাপারে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকাতেই অযথা পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy