Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জেলে এক যুগ, ছাড়া পেয়েই দুলাল গেলেন গোপন ডেরায়

জামিন হয়ে গিয়েছিল সাত দিন আগে। সোমবার জেল থেকে ছাড়া পেলেন সিপিএমের দমদম আঞ্চলিক কমিটির বহিষ্কৃত সদস্য দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। ১২ বছরেরও বেশি সময় লৌহকপাটের আড়ালে কাটিয়ে এ দিন অবশ্য বাড়ি ফেরেননি তিনি। কোনও গোপন ডেরায় ঠাঁই নিয়েছেন বলেই খবর।

জেল থেকে বেরিয়ে আসছেন দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়।  নিজস্ব চিত্র

জেল থেকে বেরিয়ে আসছেন দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৪ ০৪:০৩
Share: Save:

জামিন হয়ে গিয়েছিল সাত দিন আগে। সোমবার জেল থেকে ছাড়া পেলেন সিপিএমের দমদম আঞ্চলিক কমিটির বহিষ্কৃত সদস্য দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। ১২ বছরেরও বেশি সময় লৌহকপাটের আড়ালে কাটিয়ে এ দিন অবশ্য বাড়ি ফেরেননি তিনি। কোনও গোপন ডেরায় ঠাঁই নিয়েছেন বলেই খবর।

বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণ দেখিয়ে গত ১৪ জুলাই দুলালের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু অন্য দু’টি মামলা নিয়ে টানাপড়েন চলায় সঙ্গে সঙ্গে মুক্তি পাননি তিনি। প্রায় এক সপ্তাহ পরে, এ দিন ছাড়া পান দুলাল। সন্ধ্যা সওয়া ৭টা নাগাদ কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেল থেকে খয়েরি স্যুটকেস এবং একটি লাল ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে আসেন তিনি। বেরোনোর সময় অবশ্য সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনও কথাই বলতে চাননি দমদমের এক কালের ডাকসাইটে ওই সিপিএম নেতা। স্ত্রী চৈতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে গাড়িতে ওঠার মুখে শুধু বলেন, “আমি খুব ক্লান্ত। এখন শান্তি চাই।”

জামিনে মুক্তি পেয়ে আবার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করবেন কি না, এই প্রশ্নেরও জবাব দেননি ৬৩ বছরের দুলাল। বলেন, “এই মুহূর্তে আমি কিছুই ভাবতে পারছি না।” জেলে ঢোকার আগে পর্যন্ত অবশ্য রাজনৈতিক কলকাঠি নাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অপরাধমূলক কাজকর্মের ভাবনাই তাঁর নিত্যসঙ্গী ছিল বলে অভিযোগ। দমদম এলাকায় তোলাবাজি, অবৈধ প্রোমোটারি আর ট্রেনে চোরাচালানের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের অভিযোগে ভরে উঠেছিল পুলিশের খাতা। কিন্তু তিনি তখনকার শাসক শিবিরের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা হওয়ায় পুলিশ সব জেনে-বুঝেও নিষ্ক্রিয় থাকত।

২০০২ সালের ৪ মার্চ দমদমের নেয়ারাবাগান মাঠে চন্দন চক্রবর্তী ও সঞ্জয় গোস্বামী নামে দুই যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পরে অবশ্য পুলিশের পক্ষে আর নির্বিকার থাকা সম্ভব হয়নি। কারণ, ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসেবে নাম উঠে আসে দুলালের। ১১ এপ্রিল নিজের বাড়িতে গ্রেফতার হন তিনি। হত্যাকাণ্ডের প্রায় দেড় বছরের মাথায় আলিপুর দায়রা আদালতের তদানীন্তন নবম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক গোপালচন্দ্র সরকার তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। সিপিএমের ওই দাপুটে নেতা তার পরে পরেই দল থেকে বহিষ্কৃত হন। সেই থেকে জেলে ছিলেন তিনি।

নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সেই বছরই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন দুলাল। এ দিন জেল থেকে প্রাক্তন ওই সিপিএম নেতার মুক্তির সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন তাঁর দুই কৌঁসুলি জ্যোতির্ময় অধিকারী এবং অমোজিৎ দে। তাঁরা জানান, হাইকোর্টে ওই মামলা উঠতে উঠতেই ১১ বছর গড়িয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত এ বছরের ২০ জানুয়ারি দুলালের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট। সুপ্রিম কোর্ট পরে হাইকোর্টের ওই রায় খারিজ করে জানায়, সুবিচার পাননি দুলাল। সেই জন্যই তাঁর জামিন মঞ্জুর করা হল।

এ দিন জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে দুলাল দমদমের পেয়ারাবাগান মাঠের কাছে তাঁর বাড়িতে ফিরে যাননি। তাঁর মুক্তি বা বাড়ি ফেরা না-ফেরার ব্যাপারে এলাকার কোনও বাসিন্দা কিছু বলতেও চাননি। পরিবার সূত্রের খবর, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাঁরা দুলালের নিজের বাড়িতে ফেরা খুব একটা নিরাপদ নয় বলেই মনে করছেন। তাই তাঁকে গোপন ডেরায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

১২ বছর আগে দুলাল যখন গ্রেফতার হন, তখন তিনি দমদমে সিপিএমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা। তাঁর সমর্থনে আদালত-চত্বরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন সিপিএমের শ্রমিক সংগঠনের নেতা রাজদেও গোয়ালা এবং কয়েকশো দুলাল-অনুগামী ও দলীয় সমর্থক। এ দিন অবশ্য দুলালের সঙ্গে তাঁর তিনি আইনজীবী, স্ত্রী এবং কয়েক জন পরিচিত ব্যক্তি ছাড়া কেউই ছিলেন না। দুলালের মুক্তি নিয়ে তাঁদের কেউই কোনও মন্তব্য করেননি। শুধু চৈতিদেবী বলেন, “১২ বছর পরে লোকটা ঘরে ফিরবে। সেটাই তো আনন্দ! আমি খুব খুশি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dumdum expelled cpm leader dulal bandyopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE