দুর্ঘটনার পরে। মঙ্গলবার।- নিজস্ব চিত্র
বিমানটি আকাশে উড়ছিল না। রানওয়েতে দৌড়চ্ছিলও না। তবু ঘটল দুর্ঘটনা। আর এমন ভাবে ঘটল, সচরাচর যা হয়ে থাকে রেলের প্রহরাবিহীন লেভেল ক্রসিংয়ে!
মঙ্গলবার কাকভোরে কলকাতা বিমানবন্দরে যাত্রী তোলার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা শিলচরগামী একটি এয়ারইন্ডিয়া বিমানের পিছনে সজোরে ধাক্কা মারল জেটের একটি বাস। বাসে ছিলেন বিমানসংস্থার দু’জন কর্মী। তাঁরা তেমন আঘাত না পেলেও বিমানটির যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। বিমানটি থেকে তেল ছড়িয়ে পড়েছিল। তাতে আগুন ধরলে বড় অঘটন হতে পারত। বিমানটি সারিয়ে তুলতে কত খরচ পড়বে, ফ্রান্স থেকে ইঞ্জিনিয়াররা এসে তা ঠিক করবেন। তত দিন বিমানটি বসে থাকবে।
রানওয়ের মতো সুরক্ষিত এলাকায় কী ভাবে ঘটল এই দুর্ঘটনা?
জেট এয়ারওয়েজের বিমান থেকে যাত্রী আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হয় বাসটি। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, শীতের ভোরে আলো খানিকটা কম থাকলেও কুয়াশা ছিল না তেমন। বাসটি চালাচ্ছিলেন মোমিন আলি। কয়েক মূহূর্তের জন্য তাঁর চোখ বুজে এসেছিল। তাতেই এই বিপত্তি। মোমিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জেটের দুই কর্মী টার্মিনাল থেকে তাঁদের বিমানে যেতে মোমিনের বাসে উঠেছিলেন। ধাক্কা লাগার আগের মূহূর্ত পর্যন্ত তাঁরা কিছুই বুঝতে পারেননি বলে জানিয়েছেন। বাসটি ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার বেগে যাচ্ছিল। বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষের এক তদন্তকারী জানাচ্ছেন, বাসটির ধাক্কায় এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটির ডান দিকের একটি চাকা ফেটে গিয়েছে। ক্ষতি হয়েছে ডানার নীচের অংশের। বেঁকে গিয়েছে একটি যন্ত্রও।
প্রশ্ন উঠেছে, নির্দিষ্ট পথ থেকে কেন বেরিয়ে গেল মোমিনের বাস?
তদন্তকারীদের কথায়, ‘‘এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি থেকে প্রায় ২০ ফুট দূর দিয়ে যাওয়ার কথা ছিল মোমিনের। সোমবার রাত সাড়ে দশটা থেকে ডিউটি করে ভোরে সামান্য সময়ের জন্য ঘুমে তাঁর চোখ বুজে এসেছিল। দুর্ঘটনার ১ ঘণ্টার মধ্যে মোমিনের ডাক্তারি পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে, তিনি মদ্যপান করেননি। তবে রাতজাগা ডিউটির ক্লান্তি নয়, মোমিন বলছেন অন্য কথা। এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘মোমিন যুক্তি দিয়েছেন, বাড়িতে সমস্যা চলছে বলে আগের দিন দুপুরে তিনি ঘুমোতে পারেননি।’’
সূত্রের খবর, এয়ার ইন্ডিয়ার ছোট ৪৮ আসনের ওই এটিআর বিমানটির দাম একশো কোটি টাকার মতো। এর ডান দিকের ইঞ্জিনটির খুবই ক্ষতি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘‘ইঞ্জিন বা যন্ত্রাংশের ক্ষতি হলে এখানে তা বদল করা সম্ভব। কিন্তু, বিমানটির কাঠামোরও বেশ ক্ষতি হয়েছে। ফলে মেরামতিটা করাতে হবে নির্মাণকারী সংস্থাকে দিয়েই। তাই ফ্রান্সের তুলুস থেকে এটিআর সংস্থার ইঞ্জিনিয়ারদের উড়িয়ে এনে তা সারাতে হবে।’’ ফলে খরচ আরও বাড়বে এয়ার ইন্ডিয়ার।
এই রুটে যাত্রীদের কী হবে?
ওই বিমানে শিলচর ছাড়া শিলং ও লীলাবাড়ির যাত্রীও ছিলেন। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, বুধবার যাত্রীদের গুয়াহাটি নিয়ে গিয়ে সেখান থেকে সড়কপথে লীলাবাড়ি ও শিলং পৌঁছে দেওয়া হবে। মঙ্গলবারেও ওই একই ভাবে যাত্রীদের পৌঁছে দেওয়া হয়েছে গন্তব্যে। এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ভারতের অন্য প্রান্ত থেকে একটি এটিআর তুলে এনে কলকাতা থেকে চালানোর চেষ্টাও করা হবে। কিন্তু, তা বাস্তবে তা কতটা সম্ভব হবে, হলেও কত দিনে, এখনও তা পরিষ্কার নয়। সব মিলিয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার লোকসানের অঙ্কটা কী দাঁড়াবে, স্পষ্ট নয় সেটাও।
ঘটনার তদন্তে নেমেছে বিমান পরিবহণের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)। আলাদা করে তদন্ত করছে জেট এবং এয়ার ইন্ডিয়াও। এ কারণে মুম্বই ও দিল্লি থেকে দুই
সংস্থার বিশেষজ্ঞ দলও এসেছে। সূত্রের খবর, লোকসানের পরিমাণ জানা গেলে তা বিমা সংস্থার কাছ থেকে চাইতে পারে এয়ার ইন্ডিয়া। এমনকী, লোকসানের অঙ্ক জেটের কাছ থেকেও দাবি করা হতে পারে বলে একটি অংশের দাবি। মঙ্গলবার সকালে ক্ষতিগ্রস্ত বিমানটির ৪৪ জন যাত্রী নিয়ে শিলচর যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, জেটের বাসের ধাক্কায় বিমানটি বসে যাওয়ার পরে জেটের উড়ানে ওই যাত্রীদের শিলচর নিয়ে যেতে অনুরোধ করা হয়। অভিযোগ, জেট রাজি হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy