Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

তিহাড়ের কর্মশালায় বাংলার চার বন্দি-শিল্পী

আলিপুর জেলের যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ওই চার বঙ্গসন্তান অবশ্য দাগি অপরাধী বা কালিমালিপ্ত নেতা হিসেবে তিহাড় যাচ্ছেন না। জেলজীবনে রং, তুলি আর মাটিমাখা হাতে তৈরি ওঁদের নানা সৃষ্টি ইতিমধ্যে সম্মান কুড়িয়েছে গুণিজনমহলে।

অত্রি মিত্র
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৭ ০৪:১৪
Share: Save:

আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে চার জনেরই দশ বছরের বেশি জেল খাটা হয়ে গিয়েছে। আজ, শনিবার ওঁরা পা রাখছেন তিহাড় জেলে। বন্দি হিসেবে নয়, বন্দি-শিল্পী হিসেবে।

বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই তিহাড় জেল। এ দেশ তো বটেই, দক্ষিণ এশিয়ারও সব চেয়ে বড় জেল। বলা হয়, এ দেশে চার্লস শোভরাজ, ছোটা রাজনদের মতো দাগি অপরাধীরা ধরা পড়লে তাঁদের নিরাপদে রাখার জন্য অন্য কোনও জেলের নাম ভাবে না সরকার। আবার ভিভিআইপি রাজনৈতিক বন্দিদের জন্যও সব চেয়ে উপযুক্ত জেল এই তিহাড়। সম্প্রতি অমর সিংহ, সুরেশ কলমডীদের জন্য নির্দিষ্ট হয়েছিল ওই জেলই।

আলিপুর জেলের যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ওই চার বঙ্গসন্তান অবশ্য দাগি অপরাধী বা কালিমালিপ্ত নেতা হিসেবে তিহাড় যাচ্ছেন না। জেলজীবনে রং, তুলি আর মাটিমাখা হাতে তৈরি ওঁদের নানা সৃষ্টি ইতিমধ্যে সম্মান কুড়িয়েছে গুণিজনমহলে। তিহাড়ও জেনে গিয়েছে ওঁদের সৃষ্টিশীল মনের কথা। সেই সূত্রেই একটি শিল্প কর্মশালায় অংশ নিতে তিহাড় যাচ্ছেন রাজ্যের চার বন্দি।

দিল্লির ওই জেলের জনসংযোগ আধিকারিক রাজ কুমার শুক্রবার জানান, বন্দিদের নাচ, গান, নাটক এবং তাঁদের আঁকা ছবি নিয়ে এ বছর থেকে তিহাড় জেলে শুরু হচ্ছে ‘তিহাড় ফেস্ট’। তার উদ্বোধন হচ্ছে আজ। ‘দিল্লি হাট’ এবং তিহাড় জেলে ফেস্ট চলবে চার দিন ধরে। সারা দেশের প্রায় আড়াইশো বন্দি যোগ দিচ্ছেন সেই উৎসবে। তাঁদের মধ্যে অন্তত দেড়শো জন যোগ দেবেন শিল্প কর্মশালায়। এ রাজ্য থেকে সেখানেই যাচ্ছেন চার বন্দি— তপন বাউড়ি, চন্দন চন্দ্র, মোবিন শেখ আর চিন্ময় বসু।

রাজ কুমারের কথায়, ‘‘বন্দিদের হাতের কাজ বাইরে সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে এ বছর তিহাড় ফেস্টের কথা ভাবা হয়েছে। আমরা সাধারণ মানুষকে দেখাতে চাই, বন্দিরা জেলের মধ্যে ভাল কাজ করে কী ভাবে মূল স্রোতে ফিরে আসার চেষ্টা করছেন।’’ রাজ কুমার জানান, ফেস্ট চলাকালীন বন্দিরা কর্মশালায় ছবি আঁকবেন, ভাস্কর্য তৈরি করবেন। তাঁদের সঙ্গে হাত লাগাবেন মূল স্রোতের বেশ কয়েক জন নামী শিল্পীও। ২৬ অগস্ট থেকে বন্দিদের সেই সব কাজের প্রদর্শনী হবে দিল্লির ললিতকলা অ্যাকাডেমিতে।

এ রাজ্যে বিভিন্ন জেলের ‘সংশোধনাগার’ হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া শুরুর সময় থেকেই বন্দিদের ছবি আঁকা ও ভাস্কর্যের কাজ শেখানো শুরু হয়। ইতিমধ্যেই বাংলার বন্দিরা জেলে একাধিক কর্মশালা করেছেন। তাঁদের আঁকা ছবি বিক্রি হচ্ছে অনলাইনেও। তবে রাজ্যের বাইরে শিল্প কর্মশালায় কোনও বন্দির যোগদান এই প্রথম।

এই ধরনের কর্মশালা বন্দিদের ছবি আঁকাআঁকি এবং ভাস্কর্যের কাজে আরও উৎসাহিত করবে বলে মনে করেন বন্দিদের শিক্ষক চিত্ত দে। তিনি বলেন, ‘‘তিহাড়ের কর্মশালা থেকে অন্য রাজ্যে কী ধরনের কাজ হচ্ছে, তা-ও জানতে পারবেন ওঁরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE