খোশমেজাজে। বিধানসভায় অমিত মিত্রের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সুদীপ আচার্য।
ঋণের বোঝা এবং শিল্পের আকাল সত্ত্বেও কর্মসংস্থানের দাবি, এই দুই প্রশ্নে রাজ্য বাজেটের কড়া সমালোচনা করল বিরোধী শিবির। তাদের অভিযোগ, নানা তথ্যের কারসাজিতে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র রাজ্য সরকারের কোলে ঝোল টানার চেষ্টা করেছেন ঠিকই। কিন্তু বাজেটে আসলে কোনও দিশা নেই!
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবারই বিধানসভায় বলেছিলেন, বাম আমলে করে যাওয়া ঋণের ভার এমন ভাবে তাঁর সরকারের ঘাড়ে চেপেছে, পদে পদে তার জন্য কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছে। বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে কনভেনশন করে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বিশেষ প্যাকেজের জন্য দরবার করার প্রস্তাবও তিনি দিয়েছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই অর্থমন্ত্রী অমিতবাবুও শুক্রবার একই যুক্তি দিয়েছেন। তার প্রেক্ষিতেই বিরোধীদের প্রশ্ন, ঋণ ও তার সুদ মেটানোর জন্য রাজ্য সরকারের নিজস্ব আয় বাড়ানোর পথ কেন দেখাচ্ছেন না অমিতবাবুরা? শিল্পের জন্য কোনও সহায়ক প্রস্তাবও বাজেটে নেই বলে বিরোধী নেতারা সরব হয়েছেন।
বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের কথায়, ‘‘অর্থমন্ত্রী ভাববাচ্যে বাজেট পেশ করেছেন! কাল্পনিক তথ্য দিয়ে তিনি বাহবা কুড়োনোর চেষ্টা করেছেন! যার সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই!’’ ঋণের জাল কেটে বেরোনোর জন্য রাজ্য কী ভাবে শিল্প বা অন্য ক্ষেত্রে আয় বাড়াতে পারে, তার কোনও দিশা বাজেটে নেই বলে তাঁর অভিযোগ। বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী অর্থমন্ত্রীর জন্য পাল্টা তথ্য দিয়েছেন, ১৯৪৭ সাল থেকে ২০১১ পর্যন্ত ৬৪ বছরে বাজার থেকে নেওয়া রাজ্যের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৬ হাজার কোটি টাকা। অথত গত পাঁচ বছরেই সেই অঙ্ক এক লক্ষ কোটি টাকা হয়ে গিয়েছে! সুজনবাবুর কথায়, ‘‘অন্যের ঋণ কেন মেটাব, এটা যারা বলছে, সেই সরকারই ঋণের জালে রাজ্যকে জড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ করেছে! আয় বাড়ানোর কোনও চেষ্টা নেই। রাজ্যের ভবিষ্যৎ অন্ধকার!’’ বাকি দুই বিরোধীর সুরে বিজেপি-র দিলীপ ঘোষেরও বক্তব্য, রাজ্যের আয় বাড়ানো নিয়ে বাজেটে দিশা নেই।
রাজ্যে ৬৮ লক্ষ চাকরি হয়েছে বলে ফের সরকারি তরফে দাবি করা হয়েছে এ দিন। মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শে কোথায় কত চাকরি হয়েছে, তার হিসাব বাজেটের উপরে জবাবি ভাষণে দেওয়ার কথা অর্থমন্ত্রীর। কিন্তু তার আগেই কংগ্রেস ও বাম ফের প্রশ্ন তুলেছে, এই তথ্য বিশ্বাস করতে গেলে রাজ্যের মোট দু’লক্ষ ৭৭ হাজার বুথের প্রতিটি পিছু ৮৮ জনের চাকরি হতে হয়। মান্নানের দাবি, ‘‘কোনও বুথে কম-বেশি হতেই পারে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী অন্তত কয়েকটি বিধানসভা কেন্দ্রের হিসাব দিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে দেখিয়ে দিন, প্রতি বুথে এত জন করে চাকরি পেয়েছেন!’’ বাজেটকে ‘অন্তঃসারশূন্য’ বলে অভিহিত করেই কংগ্রেসের বর্ষীয়ান বিধায়ক মানস ভুঁইয়া প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘নতুন একটা শিল্পও হল না। কিন্তু ৬৮ লক্ষ চাকরি হয়ে গেল?’’
বিধানসভায় আজ, শনিবার মানসবাবুর বক্তৃতা দিয়েই বাজেটের উপরে বিতর্ক শুরু হবে। সুজনবাবুর প্রশ্ন, ‘‘কর্মসংস্থান বাড়লে পেশাদারি কর বাবদ আয় বাড়বে। অথচ সরকারি তথ্য বলছে, সেটা কমেছে!’’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে আক্রমণের মধ্যেও প্রশ্নের জবাবে এ দিন মানসবাবু অবশ্য বলেছেন, বাম জমানায় অসীম দাশগুপ্তের আমলেই আর্থিক বিশৃঙ্খলা চরমে উঠেছিল। আর্থিক শৃঙ্খলা আনতে এফআরবিএম আইন এ রাজ্যে চালু হয়েছিল বাম জমানার একেবারে শেষ দিকে। যার জবাবে সুজনবাবু বলেছেন, ওই আইন সংসদে তৈরি করাই হয়েছিল ইউপিএ-১ জমানায়। সেই ১৯৭৭ সাল থেকে তো ওই আইন জারির সুযোগ রাজ্য সরকারের ছিল না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy