এই সেই মূল্যায়নের ফর্ম।
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে কোথাও কোথাও পড়ুয়াদের দিয়ে শিক্ষকদের মূল্যায়ন করানোর ব্যবস্থা আছে। এ বার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মূল্যায়ন করার সুযোগ পাচ্ছেন অভিভাবকেরা। এবং সেটা মূলত স্কুল স্তরে।
বর্ধমানের (পূর্ব ও পশ্চিম, দুই বর্ধমানে স্কুল পরিদর্শক এখনও এক জনই) স্কুল পরিদর্শকের (মাধ্যমিক) দফতর থেকে জেলার প্রতিটি স্কুলে এই মর্মে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। সেই নির্দেশিকা নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে বিতর্ক। এক পক্ষ এই বন্দোবস্তে শিক্ষা এবং শিক্ষাঙ্গনের মান উন্নয়নের সম্ভাবনা দেখলেও অন্য পক্ষের ধারণা, রাজনৈতিক অভিসন্ধি থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী এবং শাসকের অঙ্গুলিহেলনে চলতে না-চাওয়া শিক্ষকদের শায়েস্তা করতেই এই অস্ত্র প্রয়োগ করা হবে।
কী ভাবে পরীক্ষকের ভূমিকায় নামানো হচ্ছে অভিভাবকদের?
শিক্ষা শিবির সূত্রের খবর, প্রধান শিক্ষকদের কাছে একটি ফর্ম পাঠিয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ওই ফর্ম সব অভিভাবককে দিয়ে পূরণ করাতে হবে। তাতে অভিভাবকদের কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে: শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিয়মিত ঠিক সময়ে স্কুলে আসেন-যান কি না। যথাযথ ভাবে ক্লাস করেন কি না।... এমনকী শিক্ষকেরা ক্লাসে মোবাইল ব্যবহার করেন কি না, থাকছে সেই প্রশ্নও।
আরও পড়ুন: কলেজ মশা মারছে তো, চাই রিপোর্ট
ক্লাসে শিক্ষকদের মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করার প্রথম বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলেন বর্ধমান জেলার স্কুলশিক্ষা প্রশাসনের কর্তারা। এখন গোটা রাজ্যে সেই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করতে চাইছে সরকার। কিন্তু নতুন নির্দেশকে ঘিরে জোরদার বিতর্ক শুরু হয়েছে। শিক্ষক দিবসের প্রাক্কালে জারি করা এই নির্দেশিকা অপমানজনক বলে মনে করছেন শিক্ষক মহলের একাংশ। তাঁদের আশঙ্কা, ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে নির্দিষ্ট কোনও শিক্ষক বা শিক্ষিকাকে হেনস্থা করতে এই হাতিয়ার ব্যবহার করা হতে পারে।
শিক্ষাজগতের বক্তব্য, এই সব বিষয় খতিয়ে দেখাটা প্রধান শিক্ষকদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। এই নিয়ে কিছু বলার থাকলে পড়ুয়ারা তা প্রধান শিক্ষককে জানাতে পারে। তার বদলে অভিভাবকদের যুক্ত করে আসলে শিক্ষকদের উপরে শাসকের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার চেষ্টা হচ্ছে।
বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডলের অভিযোগ, এই সরকার আসার পর থেকেই শিক্ষার পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। নতুন এই ব্যবস্থায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। এটা প্রত্যাহার করা উচিত। নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ওই ফর্ম অভিভাবকেরা মোটেই পূরণ করবেন না, করবেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। ‘‘নিজেদের অপছন্দের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শায়েস্তা করার জন্য এবং ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই এই ফরমান। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করি,’’ বলেন কৃষ্ণবাবু।
যদিও শিক্ষকদের অন্য অংশ এই ধরনের নির্দেশিকায় কোনও দোষ দেখছেন না। বর্ধমানের স্কুলশিক্ষা প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, জেলার এডুকেশন কমিটিতে সর্বসম্মতিক্রমে ওই ফর্মের খসড়া তৈরি করে ডিআই-দের মাধ্যমে তা স্কুলে পাঠানো হয়েছে। ওই কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘‘এই উদ্যোগের ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে। এটা তেমন কিছু ব্যাপারই নয়। স্কুলের উন্নতির স্বার্থেই এই পদক্ষেপ। শিক্ষকদের অপমান করা হচ্ছে না।’’
আর বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় ভাবে এই ধরনের কোনও নির্দেশিকা জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছে পাঠানো হয়নি। তবে বিকাশ ভবনে সর্বশিক্ষা মিশনের এক শীর্ষ কর্তা জানাচ্ছেন, ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক, এই তিন স্তম্ভের উপরেই টিকে থাকে শিক্ষা ব্যবস্থা। কোনও কারণে এর একটি স্তম্ভ নড়ে গেলে পুরো কাঠামো ভেঙে পড়ে। এই ফরমান স্তম্ভগুলিকে নড়বড়ে করে দেবে। এই ফরমান ব্যুমেরাং হয়ে ফিরতে পারে রাজনীতির দিকেও।
জেলা স্কুল পরিদর্শকদের সংগঠন এই বিষয়ে মম্তব্য করতে চায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy