Advertisement
১১ মে ২০২৪

সৌম্যদীপকে গ্রেফতারের সূত্র পেল না পুলিশ

কারিগরি মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস তাঁকে গ্রেফতার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তদন্তে নেমে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ এমন কোনও সূত্রই পেল না, যার ভিত্তিতে অ্যাডমিট কার্ডে কুকুরের ছবি-কাণ্ডে গ্রেফতার করা যায় সংশ্লিষ্ট ছাত্রকে। সৌম্যদীপ মাহাতো নামে গোয়ালতোড়ের ওই ছাত্রকে সোমবার দিনভর জেরা করার পরে রাত এগারোটা নাগাদ ছেড়ে দেওয়া হয়।

সৌম্যদীপ মাহাতো। ফাইল চিত্র।

সৌম্যদীপ মাহাতো। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঘাটাল শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৫ ০১:০৯
Share: Save:

কারিগরি মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস তাঁকে গ্রেফতার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তদন্তে নেমে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ এমন কোনও সূত্রই পেল না, যার ভিত্তিতে অ্যাডমিট কার্ডে কুকুরের ছবি-কাণ্ডে গ্রেফতার করা যায় সংশ্লিষ্ট ছাত্রকে। সৌম্যদীপ মাহাতো নামে গোয়ালতোড়ের ওই ছাত্রকে সোমবার দিনভর জেরা করার পরে রাত এগারোটা নাগাদ ছেড়ে দেওয়া হয়।
জেলা পুলিশের দাবি, সৌম্যদীপকে দফায় দফায় জেরা করে, যে সাইবার কাফে থেকে তিনি আইটিআইয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষার ফর্ম পূরণ করেছিলে সেখানে তদন্ত করে সৌম্যদীপকে গ্রেফতার করার মতো কোনও তথ্যই পাওয়া যায়নি। তবে তদন্ত এখনও চলছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “ওই ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন ছিল। যা যা জানার ওর কাছ থেকে জানা হয়েছে।’’ এক সূত্রের খবর, জেলা পুলিশের তরফেই নবান্নে বার্তা পাঠানো হয়, ওই ছাত্রকে গ্রেফতার করা ঠিক হবে না। সাইকেল গ্যারাজে কাজ করে পড়াশোনা চালানো ওই যুবকের কম্পিউটার সম্পর্কেও বিশেষ ধারণা নেই। ফলে, কুকুরের ছবি তাঁর পক্ষে লাগানো সম্ভব নয়।
পুলিশের বিরুদ্ধে কোনও ক্ষোভও নেই সৌম্যদীপের। মঙ্গলবার তিনি বলেন, “অ্যাডমিট কার্ডে কুকুরের ছবি এল কী করে, তার তদন্তে সাহায্য করতেই পুলিশ আমাকে নিয়ে গিয়েছিল। তবে ওঁরা আমার সঙ্গে খুব ভাল ব্যবহার করেছেন। দুপুরে ভাত, বিকেলে টিফিন এবং রাতে ভাত খাইয়ে গাড়িতে করে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে।” তবে মন্ত্রী উজ্জ্বলবাবু যে তাঁকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিলেন, সে কথা সংবাদমাধ্যমের দৌলতে জানেন সৌম্যদীপ। বিষয়টা নিয়ে কিছুটা বিপর্যস্তও চলতি বছরে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ এই যুবক। তিনি বলেন, “তদন্তের আগেই মন্ত্রিমশাই যে ভাবে আমাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিলেন, তাতে তো আমার সম্মানহানিও হল।” সৌম্যদীপের আরও সংযোজন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি শ্রদ্ধা করি। উনি নিশ্চয়ই চান না, অযথা কেউ হয়রানির শিকার হোক।’’ আইটিআইয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষাও দেবেন বলে জানিয়েছেন সৌম্যদীপ।

সোমবার যে সাইকেলের গ্যারাজ থেকে পুলিশ তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল, মঙ্গলবার সাত সকালেই সেখানে কাজে আসেন সৌম্যদীপ। বাবা দিনমজুর। সংসারের জন্য তাই সাইকেল গ্যারাজে কাজ করেন তিনি। গোয়ালতোড় শহরের ওই গ্যারাজের মালিক সুশান্ত লোহার বলেন, “মাধ্যমিক পাশের পরে আমরা দু’জনে একটি গ্যারাজে কাজ শিখতাম। এখন আমি নিজে গ্যারাজ খুলেছি। আমার সঙ্গেই কাজ করে সৌম্য। ও খুব ভাল ছেলে।”

ছেলেকে পুলিশ নিয়ে যাও সোমবার দিনভর চূড়ান্ত উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলেন গোয়ালতোড়ের পেরুমারা গ্রামের বাসিন্দা সৌম্যদীপের বাবা সুদীপ্ত মাহাতো ও মা তরুলতাদেবী। সুদীপ্তবাবু বলেন, “আমার ছেলে পরীক্ষা দেবে বলে ফর্ম পূরণ করেছিল। তাতে এত কাণ্ড ঘটবে দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি।” আর সৌম্যদীপের বোন তাপসীর বক্তব্য, “আমার দাদার দোষটা কী বলুন তো? কেন ওকে নিয়ে পুলিশ এত টানাটানি করছে বুঝতে পারছি না।”

বিষয়টি নিয়ে এ দিন কটাক্ষ করেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। নারায়ণগড়ে হুল দিবসের অনুষ্ঠানে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “যেখানে মানুষের ডায়ালিসিস হওয়ার কথা সেখানে কুকুর পাঠাচ্ছে। অ্যাডমিটে পরীক্ষার্থীর ছবি না ছেপে কুকুরের ছবি ছাপছে। ওঁদের এক মন্ত্রী বলেছেন এর পিছনে সিপিএমের যোগ রয়েছে। তদন্তের আগেই উনি রায় ঘোষণা করেছেন। চিটফান্ডের সময় নানা কথা বলেছিল। এখন সবাই জানে কারা চোর।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE