বেসামাল: মাতাল প্রধান শিক্ষক। নিজস্ব চিত্র
মোটরবাইক থেকে নেমে টলোমলো পায়ে স্কুলের দরজা খুলেছিলেন তিনি।
সকাল সওয়া ৬টা মতো বাজে। আর মিনিট পনেরো বাদে স্কুল বসবে। ছাত্রছাত্রীরা আসতে শুরু করেছে।
হঠাৎই হাত-পা নেতিয়ে দরজার পাশে বসে পড়লেন প্রধান শিক্ষক। অবস্থা দেখে তিন-চার জন ছাত্র এক ছুটে বাড়িতে। মিনিট কয়েকের মধ্যে এ পাড়া, সে পাড়া থেকে শ’খানেক গ্রামবাসী স্কুলে এসে হাজির।
তত ক্ষণে স্কুল ছেড়ে কাছেই এক বাড়িতে ঢুকে পড়েছেন তিনি। কিন্তু বাড়ির দাওয়ায় সোজা বসে থাকার ক্ষমতাটুকুও নেই। কাণ্ড দেখে ছাত্রেরা হেসে কুটোপাটি। তাদের হাসতে দেখে হাসছেন হেডমাস্টারও। গ্রামবাসীরা চটে লাল, এই মারে কি সেই মারে! শেষে সাগরদিঘি থানার পুলিশ এসে উদ্ধার করে নিয়ে যায় তাঁকে।
মুর্শিদাবাদে সাগরদিঘিতে গোপ ভূমিহর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওই প্রধান শিক্ষকের নাম আসাদুজ্জামান। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর মাতলামি দেখে অনেকেরই মনে পড়ে গিয়েছে গত মার্চে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা পোক্তপুল প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক যুগলকিশোর দলুইকে। মাস দেড়েক আগে যিনি মাতাল হয়ে স্কুলের সামনে গড়াগ়ড়ি দিয়েছিলেন। পরে তাঁকে সাসপেন্ড এবং বদলি করে দেওয়া হয়।
আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থা নিতে চলেছে প্রশাসন। কারণ, এই প্রথম নয়। নিয়মিত মত্ত অবস্থায় স্কুলে আসার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। এক বার গ্রামের মহিলাদের কাছে হেনস্থাও হতে হয়েছিল তাঁকে। এ দিন স্কুলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে অসহায় ভাবে তাঁর কীর্তি দেখছিলেন সহকারী শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম। আসাদুজ্জামান তাঁর দিকে এগিয়ে গেলে তিনি বলেন, “আপনার সম্মান তো গেলই, শিক্ষক বলে আমাদেরও মুখ দেখানোর জায়গা রইল না। আপনি আর এই স্কুলে আসবেন না।”
সিরাজুল থেকে শুরু করে গ্রামের বহু জনেরই অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক স্কুলের পরিবেশই নষ্ট করে দিয়েছেন। ঠিক মতো ক্লাস হয় না। ছেলেমেয়েরা স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে শিক্ষকের মদ খেয়ে আসার গল্প করে। এত দিন কেউ তেমন আমল দেননি। রানা মণ্ডল নামে এক অভিভাবকের প্রশ্ন, “প্রধান শিক্ষকের আচরণ দেখে কী শিখবে ছেলেমেয়েরা?” চাপের মুখে আসাদুজ্জামান অবশ্য বলেন, “ভুল হয়ে গিয়েছে, আর হবে না!”
পাশের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক তথা তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, “উনি শিক্ষকতার নামে লজ্জা!” সাগরদিঘির অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক এক্রামুল বারি বলেন, “তদন্ত হচ্ছে। ঘটনাটি সত্যি হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy