Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

উৎসবে প্রাণ তাঁদের গড়া অলঙ্কার-প্রদীপে

উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা, বাদুড়িয়া, দত্তপুকুরের আশুরা বিবি, আয়েশা খাতুন, জাহানারা বিবিদের সে সব অবশ্য শোনারই অবকাশ নেই। তাঁরা ব্যস্ত মুকুট, গয়না আর প্রদীপ তৈরির কাজে। দেবী মূর্তিকে অলঙ্কারে আর দীপাবলিকে আলোয় ভরিয়ে দিতে আশুরা-আয়েশাদের এখন দম ফেলার ফুরসৎ নেই।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৫৫
Share: Save:

কে বলবে ক’দিন আগে কিছু মানুষের প্ররোচনায় এখানেই গোলমালে জড়িয়ে পড়েছিলেন দুই সম্প্রদায়ের মানুষ। উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা, বাদুড়িয়া, দত্তপুকুরের আশুরা বিবি, আয়েশা খাতুন, জাহানারা বিবিদের সে সব অবশ্য শোনারই অবকাশ নেই। তাঁরা ব্যস্ত মুকুট, গয়না আর প্রদীপ তৈরির কাজে। দেবী মূর্তিকে অলঙ্কারে আর দীপাবলিকে আলোয় ভরিয়ে দিতে আশুরা-আয়েশাদের এখন দম ফেলার ফুরসৎ নেই।

দেগঙ্গার চাঁপাতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের খড়ুয়া-চাঁদপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, ঘরে ঘরে মহিলারা ব্যস্ত প্রতিমার গয়না, মুকুট তৈরির কাজে। এক পদের রান্না সেরে কাজ করছেন তাঁরা। ১৬ বছর ধরে ঠাকুরের গয়না গড়ছেন আশুরা বিবি। আশুরা বলেন, ‘‘আমার তৈরি মুকুট-গয়না দেবী দুর্গাকে পরানো হয়— এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে!’’ স্বামী মারা গিয়েছেন ৯ বছর আগে। আশুরার রোজগারেই চলে সংসার। নাতনি রেণুকা খাতুন স্কুলে পড়ে। পড়াশোনার ফাঁকে সে-ও হাত লাগায় গয়না তৈরির কাজে। আশুরার কথায়,, ‘‘ঠাকুর দেখতে গিয়ে রেণুকা মুকুট, গয়না দেখে। বলে, আমাদের তৈরি না?’’

কিন্তু কোনটা রেণুকার হাতে তৈরি আর কোনটা ছোট্ট শাবানার, তা বোঝা যাবে কেমন করে? গয়না তো পাড়ি দেয় বিদেশেও। এমনটাই জানালেন চাঁদপুর গ্রামের গয়না শিল্পের মালিক সঞ্জয় সরকার। কুড়ি বছরের কারখানা তাঁর। সঞ্জয় বলেন, ‘‘সারা বছর অলঙ্কার গড়ি। উল্টোডাঙা, কুমোরটুলিতে অলঙ্কার পাঠাই। আশুরা, ফতেমা-রা ছাড়া এ কাজ সম্ভবই নয়।’’ রোজের বেতন ১৫০-২০০ টাকা। দেগঙ্গার খড়ুয়া-চাঁদপুর, ভাসলিয়া স্টেশন, পালপাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, সেখানেও ঠাকুরের অলঙ্কার গড়ছেন মহিলারা।

অনেক কাল ধরেই যে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ হাতে হাত লাগিয়ে এমন কাজ করছেন, হাবরার দিকে যেতে গিয়েও। যশোর রোডের দু’পাশে কারখানায়, বাড়িতে, মূর্তি, পট আর প্রদীপ তৈরি চলছে। লোকনাথ পল্লি, সারদা পল্লির মতো এলাকায় হাজারখানেক পরিবার যুক্ত এর সঙ্গে। বেশিরভাগই মহিলা। যেমন তাজমিরা, নূরজাহান। ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রদীপ তৈরি করছেন। কারখানার মালিক শরিফুল ইসলাম খোকা বলেন, ‘‘তাজমিরা, জাহানারাদের হাতের কাজ খুব ভাল। কদরও আছে। ওরাও চুটিয়ে কাজ করছে, আমরাও লাভবান হচ্ছি।’’

কলকাতা ছাড়াও দিল্লি, মুম্বই, হায়দরাবাদ, গুজরাত, অসম, পটনায় ভীষণ কদর এখানকার প্রদীপ, লক্ষ্মী-গণেশ মূর্তির। ১৫ বছর ধরে লক্ষ্মী-গণেশের চক্ষুদান করেন সাহানারা বিবি। তুলির টানে চোখ আঁকতে আঁকতে বলেন, ‘‘এ জীবনে কত ঠাকুর গড়েছি! অনেক মেয়েকে শিখিয়েছি।’’

অলঙ্কার গড়তে গড়তে দেগঙ্গার আয়েশা খাতুন, প্রদীপ গড়তে গড়তে দত্তপুকুরের মাফুরা বিবির একই সুরে স্বগতোক্তি— ‘‘বেশ মিলেমিশে রয়েছি আমরা। মাঝে মাঝে কী যে হয়! চেনা মুখগুলোও অচেনা লাগে। ক্ষতি হয় আমাদের কাজেরই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE