Advertisement
১৭ মে ২০২৪

নিরাপত্তার কড়াকড়িতে সুর কাটল উৎসবের

হেমতাবাদ-কাণ্ডের পরে মঙ্গলবার ছিল বারাসতে প্রশাসনিক সভা। পান থেকে চুন না খসে—তটস্থ ছিল সকলে। আর তাই নিরাপত্তার এমনই কড়াকড়ি দেখা গেল এ দিন, যাত্রা উৎসবের মেজাজটাই জমল না।

বজ্রআঁটুনি: ফাঁক ধরা পড়েছিল হেমতাবাদের সভায়। বারাসতে যাত্রা উৎসবের মঞ্চে তাই চোখে পড়ল এমনই বিশেষ নিরাপত্তা ব্যারিকেড। মঙ্গলবার কাছারি ময়দানে। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

বজ্রআঁটুনি: ফাঁক ধরা পড়েছিল হেমতাবাদের সভায়। বারাসতে যাত্রা উৎসবের মঞ্চে তাই চোখে পড়ল এমনই বিশেষ নিরাপত্তা ব্যারিকেড। মঙ্গলবার কাছারি ময়দানে। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:৫৯
Share: Save:

বলা হয়েছিল, ধরে আনতে। বেঁধেই এনে হাজির করল পুলিশ!

হেমতাবাদে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় নিরাপত্তা-বলয় কাটিয়ে দুই বোন যে ভাবে মঞ্চে পৌঁছে গিয়েছিলেন, তা নিয়ে বিস্তর শোরগোল হয়েছে। অপ্রস্তুত রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও বিরক্ত।

হেমতাবাদ-কাণ্ডের পরে মঙ্গলবার ছিল বারাসতে প্রশাসনিক সভা। পান থেকে চুন না খসে—তটস্থ ছিল সকলে। আর তাই নিরাপত্তার এমনই কড়াকড়ি দেখা গেল এ দিন, যাত্রা উৎসবের মেজাজটাই জমল না। দলের নেতা, পুলিশ-প্রশাসনের কর্তা, জনপ্রতিনিধি বাদে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ভিড়টাই উধাও। মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চে ওঠার আগে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে মাইকে বলতে শোনা গেল, ‘‘গেট খুলে সাধারণ মানুষকে ভিতরে ঢোকার ব্যবস্থা করে দিন।’’

সকাল থেকে বারাসতে ঢোকার মুখে বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে পুলিশি ‘চেকিং’ ছিল। কাছারি ময়দানে যাত্রা উৎসবে ঢোকার মুখেও তল্লাশি। মাঠের চারপাশে ১৭টি উঁচু ছাদে স্নাইপার রাইফেল, দূরবীন নিয়ে বসে ছিলেন নিরাপত্তারক্ষীরা। লাগানো ছিল নাইট ভিশন ক্যামেরা। ইডেনে খেলা দেখতে গেলে যে ভাবে খানা-তল্লাশি চলে, সে ভাবে দর্শকদের তল্লাশি করা হয়েছে। বিড়ি, দেশলাই, জলের বোতল নিয়ে যাওয়া যাবে না শুনে ফিরতি পথ ধরলেন অনেকে।

ভাব-সাব দেখে ‘ব্যথিত’ তৃণমূলের এক স্থানীয় নেতার কথায়, ‘‘সকলে দিদিকে ঘরের মানুষ ভাবেন। হেমতাবাদের ঘটনার পরে কঠিন নিরাপত্তার দরকার ঠিকই। কিন্তু এ দিন পুলিশ বড্ড বাড়াবাড়ি করেছে।’’

‘বাড়াবাড়ি’র নমুনা সকাল থেকেই টের পেয়েছেন বারাসতবাসী। টাকি রোডের পূর্বপাড়া, বারাসত-ব্যারাকপুর রোডের ওয়ারল্যাস গেট, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে নদিয়ার দিকে ময়না, যশোর রোডের বনগাঁর দিকে দিঘার মোড়, মধ্যমগ্রাম-বাদু রোডের কাঞ্চনতলার মতো বিভিন্ন মোড়ে ছিল নাকাবন্দি। হয়রান হয়েছেন বহু মানুষ।

সাদা পোশাকে থাকা এক পুলিশ আধিকারিক বললেন, ‘‘আমাকেই তো ঢুকতে দিচ্ছিল না নিরাপত্তারক্ষীরা। পরিচয়পত্র দেখালেও যে ভাবে খুঁটিয়ে দেখল, নিজেই অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছি।’’ প্রতিবার মঞ্চ থেকে নেমে সামনের সারিতে বসে যাত্রার কুশীলব ও দলের নেতা-মন্ত্রীদের নিয়ে যাত্রা দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। এ বারও দেখেছেন। তবে দু’একজন মন্ত্রী, সাংসদ বাদে ধারেকাছে ঘেঁষতে পারেননি কেউ।

পালা না দেখে বাড়ির পথ ধরেন দত্তপুকুরের নিবাদুইয়ের রাম কাহার। ফতুয়ার পকেটে বিড়ি নিয়ে ঢুকতে যান। কেড়ে নিয়েছে পুলিশ। ব্যাজার মুখে বেরিয়ে বলেন, ‘‘বিড়ি ছাড়া তিন ঘণ্টা এক জায়গায় বসে থাকা যাবে না। তার থেকে গ্রামে পালা এলে পরে দেখে নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE