আদর: আলিপুরদুয়ারের কামাখ্যাগুড়ির জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: নারায়ণ দে
পড়শি রাজ্য থেকে বাঙালিদের খেদিয়ে দেওয়া হচ্ছে— এই অভিযোগ আগেও তুলেছিলেন। সেই বিবৃতির পরে তাঁর বিরুদ্ধে অসমে এফআইআর-ও হয়। মঙ্গলবার কামাখ্যাগুড়িতে এক সভায় দাঁড়িয়ে ফের একই প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দেন, অসম থেকে যদি কোনও বাঙালি বিতাড়িত হয়ে এই রাজ্যে আসে, তা হলে আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি জেলা তাঁদের আশ্রয় দেবে।
অসমের সাম্প্রতিক নাগরিকপঞ্জিতে দীর্ঘদিন বসবাসকারী অনেকের নাম না থাকার কথা বলে এ দিনও উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘এটা কী হচ্ছে! অসমে ৩ কোটি ৩৯ লক্ষের নাগরিকপঞ্জি তৈরির কথা। অথচ ১ কোটি ৩৯ লক্ষের নাম নেই। এটা মানব না আগেই বলেছি। কারণ, এক রাজ্যের মানুষ আর এক জায়গায় থাকবেন, এটা আমাদের স্বাধীনতা। তাই এ বার বলছি, অসম থেকে কেউ এলে আশ্রয় দেব।’’ এর পরে আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ির বাসিন্দাদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘অসম থেকে কেউ অত্যাচারিত হয়ে এলে আশ্রয় দেবেন। ভালবাসবেন। এটাই বাংলার সংস্কৃতি।’’
আরও পড়ুন: গ্রামে বাড়ি-রাস্তায় নজর মুখ্যমন্ত্রীর
তিনি যে ভিন্ রাজ্যে থাকা বাঙালিদের জন্য চিন্তিত, সেটা এ দিন বারবারই বক্তৃতায় জানান মুখ্যমন্ত্রী। গুজরাতে গিয়ে যে বাঙালি শ্রমিককে প্রাণ হারাতে হয়েছে, তারও উল্লেখ করেছেন। সেই শ্রমিক, মধু সরকারের মাকে আড়াই লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণও দেন। তাই অসমে থাকা বাঙালিদের প্রতি তাঁর সহানুভূতিও স্বাভাবিক। তৃণমূলের একটি সূত্র বলছে, শুধু বাঙালিই বা কেন, মুখ্যমন্ত্রী তো অসমে বসবাসকারী বিহারিদের প্রতিও সহানুভূতিশীল। বক্তৃতায় সে কথাও জানান তিনি।
বিভিন্ন রাজনৈতিক শিবির অবশ্য অন্য ব্যাখ্যাও দিচ্ছে। অনেকের মতে, অসম নাগরিকপঞ্জি তৈরি করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে স্বাভাবিক ভাবেই বাংলার উপরে চাপ বাড়বে। তাই আগে থেকে এই কথাগুলো বলে তাদের উপরেই পাল্টা চাপ তৈরি করে রাখতে চাইছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী এ-ও বলেন, ‘‘মনে রাখবেন, অসম ভাল থাকলে বাংলা ভাল থাকবে। বাংলা ভাল থাকলে অসম ভাল থাকবে।’’
অসম সীমানার কাছে কামাখ্যাগুড়িতে দাঁড়িয়ে মমতা যে এই প্রসঙ্গ তুলবেন, তা অনেকেই আন্দাজ করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ তিনি আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়িকে আশ্রয়দাতা হিসেবে বাছলেন কেন? রাজনীতিকদের একাংশের কথায়, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানেন, অসম থেকে আগত মানুষদের জন্য বাংলাদেশ ঘেঁষা কোচবিহারের চেয়ে আলিপুরদুয়ার-জলপাইগুড়ি ভাল জায়গা। বছর ছয়েক আগে অসমে গোলমালের সময়ে কিছু মানুষ অবিভক্ত জলপাইগুড়ি জেলায় আশ্রয় নেন। দীর্ঘদিন তাঁরা সেখানে ছিলেন। সেই ‘আতিথেয়তাই’ যেন এ বারেও মেলে, তারই বার্তা দিয়ে রাখলেন তিনি। ডুয়ার্সে হিন্দিভাষীদের সংখ্যা যথেষ্ট। তাই বিহারিদের কথা বলে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন— অসম থেকে বিতাড়নের ক্ষেত্রে যেমন বাঙালি-বিহারি ভেদ নেই, আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রেও যেন সেটা না থাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy