Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভূস্বর্গের নরক থেকে পালিয়ে হস্টেলে খালেদা

খালেদার এ বার সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার কথা ছিল। অভিযোগ, মথুরাপুর কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের ছাত্রী খালেদার সঙ্গে কাশ্মীরের এক গ্রামের এক প্রৌঢ়ের বিয়ে দিয়ে দেন বাবা-মা।

প্রতীকী চিত্র

প্রতীকী চিত্র

মধুমিতা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৮ ১১:৩৪
Share: Save:

তিন দিনের পথ পেরিয়ে বাপের বাড়ি পৌঁছেছে খালেদা লস্কর (ছদ্মনাম)।

১৫ বছরের খালেদার বিয়ে হয়েছিল কাশ্মীরে। কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে শারীরিক, মানসিক ও যৌন অত্যাচার সহ্য করতে না-পেরে সে পালিয়ে এসেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরের পাশের এক গ্রামে খালেদার বাপের বাড়ি। গত সোমবার রাতে খালেদা সেখানে পৌঁছয়। কিন্তু বাপের বাড়ির লোক তাকে কাশ্মীর ফিরে যেতে চাপাচাপি শুরু করেন। বুধবার খালেদা জানায়, কিছুতেই সে আর শ্বশুরবাড়ি যাবে না।

খালেদার এ বার সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার কথা ছিল। অভিযোগ, মথুরাপুর কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের ছাত্রী খালেদার সঙ্গে কাশ্মীরের এক গ্রামের এক প্রৌঢ়ের বিয়ে দিয়ে দেন বাবা-মা। এ দিন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতির কাছে গিয়ে খালেদা জানায়, সে আর শ্বশুরবাড়ি যেতে চায় না। পড়াশোনা করতে চায়। চন্দনবাবু বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে, বাড়ির লোক মেয়েটিকে কাশ্মীরে মধ্যবয়সি লোকটির কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন।’’ খালেদা যে আর কাশ্মীরে ফিরতে চায় না, স্কুলের হস্টেলে থেকে পড়তে চায়, সেই বিষয়ে তার লিখিত আবেদনের প্রতিলিপি মথুরাপুর থানায় ই-মেল করে পাঠিয়ে দিয়েছেন চন্দনবাবু। প্রতিলিপি পাঠিয়েছেন ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসারের কাছেও।

খালেদারা চার ভাইবোন। তার দিদির বয়স ১৮। জানুয়ারির গোড়ায় বাবা-মা দুই বোনকে কাশ্মীরে নিয়ে যান। বাবা-মা বলেছিলেন, কাশ্মীরে যাওয়া হচ্ছে বেড়াতে। এ দিন খালেদা বলে, ‘‘কাশ্মীর গিয়ে দিদি আমায় বলে, ওর বিয়ে। আমারও নাকি বিয়ে হবে। তার পরে ওই লোকটার সঙ্গে ওরা আমার বিয়ে দিয়ে দেয়।’’

বিয়ের পরে খালেদা জানতে পারে, তার স্বামীর আগেও দু’বার বিয়ে হয়েছে। খালেদা বলে, ‘‘শুধু মারধর নয়। আরও অনেক কিছু করতে বাধ্য করত। এক বার আমাকে বিষ খাওয়াতে গিয়েছিল। সহ্য করতে না-পেরে দিদিকে সব জানিয়েছিলাম। দিদির বর কিন্তু খারাপ নয়।’’

খালেদার জামাইবাবুই তাকে জম্মুতে পৌঁছে দেন। সেখান থেকে ট্রেনে হাওড়ায় পৌঁছয় খালেদা। কিন্তু বাড়িতে তার ঠাঁই হয়নি। চন্দনবাবু বলেন, ‘‘মেয়েটিকে হস্টেলে রেখে পড়াশোনা চালাতে উৎসাহ দেব আমরা। ওর বাবা-মায়ের সঙ্গেও কথা বলছি। নাবালিকার তো এ ভাবে বিয়ে দিয়ে দেওয়া যায় না।’’

খালেদা স্কুলের হস্টেলেই রয়েছে। তার প্রশ্ন, ‘‘আমি কি আর বাড়ি যেতে পারব না?’’ চন্দনবাবু শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অনন্যাদেবী পরে জানান, দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাওকে তিনি সব জানিয়েছেন। জেলাশাসকের আশ্বাস, মেয়েটি যাতে আপাতত হস্টেলে থেকে পড়তে পারে, তার ব্যবস্থা করা হবে।

বুধবার রাতে খালেদার মা-বাবা জানান, খালেদার বিয়ে দিয়ে তাঁরা ভুল করেছেন। খালেদা পড়াশোনা চালিয়ে যাক, এটাই তাঁরা চান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Child Abuse Domestic Violance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE