Advertisement
১১ মে ২০২৪

শব্দবাজি পাশ, অথচ তার কারখানাই ফেল

তারাতলায় শব্দের পরীক্ষায় পাশ হওয়া চকোলেট বোমা ও দোদমা যে দু’টো কারখানায় তৈরি হয়েছে, সেগুলোই ফেল!

সুরবেক বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:০৯
Share: Save:

তারাতলায় শব্দের পরীক্ষায় পাশ হওয়া চকোলেট বোমা ও দোদমা যে দু’টো কারখানায় তৈরি হয়েছে, সেগুলোই ফেল!

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্রই নেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার চম্পাহাটির ওই দু’টি কারখানা— ‘সত্যনারায়ণ ফায়ারওয়ার্কস’ ও ‘শ্যামা ফায়ারওয়ার্কস’-এর। পর্ষদের একাধিক সূত্রের দাবি, ওই দু’টি কারখানাই চলছে বেআইনি ভাবে।

মঙ্গলবার পরীক্ষায় যে চকোলেট বোমাগুলো উতরে গিয়েছে, সে সব তৈরি হয়েছিল চম্পাহাটির হারাল গ্রামে, ‘সত্যনারায়ণ ফায়ারওয়ার্কস’-এ। বুধবার তার মালিক নিমাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের লাইসেন্স আমি রিনিউ করাইনি। বাকি সব লাইসেন্স অবশ্য আছে।’’ তবে পর্ষদ সূত্রের খবর, কারখানার মালিক আবেদন করলেও লাইসেন্স নবীকরণ করা হয়নি। পর্ষদের এক কর্তার কথায়, ‘‘নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও বহু বার ওই কারখানায় শব্দবাজি তৈরি হয়েছে। আমরা একাধিক বার সেটা ধরেছি। ওই ব্যক্তিকে বমাল পাকড়াও করা হয়েছে। সেই জন্যই ওই কারখানার লাইসেন্স নবীকরণ করা হয়নি।’’

নিমাই মণ্ডলের কারখানায় তৈরি চকোলেট বোমার মতো মঙ্গলবার পাশ করেছে চম্পাহাটির ‘শ্যামা ফায়ারওয়ার্কস’-এর তৈরি দোদমাও। ওই কারখানার মালিক গয়ারাম মণ্ডল বলেন, ‘‘১৯৭৪ থেকে এই কারখানায় বাজি তৈরি হচ্ছে। তবে আমার কাছে কখনও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের লাইসেন্স ছিল না।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘আসলে শব্দবাজি তৈরি করতে পারব কি না, তা নিয়ে তো পর্ষদের সঙ্গে মামলা চলছে। তাই পর্ষদের লাইসেন্স নিইনি।’’

কিন্তু পাশ হওয়া চকোলেট বোমা ও দোদমা তৈরি করা দু’টি কারখানা যে অবৈধ, সে কথা জেনে পুলিশ যাবতীয় কাগজপত্র-সহ তাদের মালিকদের লালবাজারে তলব করেছে। কলকাতা পুলিশের ডিসি (রিজার্ভ ফোর্স) অশেষ বিশ্বাস এ দিন বলেন, ‘‘ওই সব কারখানার লাইসেন্স না থাকলে সেখানকার তৈরি বাজিও ছাড়পত্র পাবে না।’’ ডিসি-র কথায়, ‘‘মঙ্গলবার তারতলায় বাজির শব্দ পরীক্ষা করার সময়ে ওই সব কারখানার মালিক জাল নথি পেশ করে থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

সারা বাংলা আতসবাজি উন্নয়ন সমিতির চেয়ারম্যান বাবলা রায় অবশ্য বলেন, ‘‘কারখানার মালিকেরা তো লাইসেন্স নেবেন না বলেননি। আইনি জটিলতায় কারও আবেদন পড়ে আছে, কারও লাইসেন্স নবীকরণ হয়নি। এতে মালিকদের দোষ কী?’’

শুধু ওই দু’টি কারখানা নয়, তারাতলায় যে সব কারখানার বাজি ফাটিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে, সব ক’টির মালিককে কাগজপত্র নিয়ে দেখা করতে বলেছে লালবাজার। আজ, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় তাঁদের লালবাজারে যাওয়ার কথা। এই বিষয়টি পরিষ্কার না হলে কোন বাজি পাশ আর কোনটা ফেল, সেই ব্যাপারে কলকাতা পুলিশ বিজ্ঞপ্তিই জারি করবে না।

যে কোনও বাজি কারখানার চারটি সরকারি সংস্থার লাইসেন্স প্রয়োজন। কারখানা তৈরি ও চালানোর জন্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দু’টি এবং দমকল, পুরসভা বা পঞ্চায়েত ও জেলাশাসকের (বড় কারখানা হলে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড এক্সপ্লোসিভ সেফটি অর্গানাইজেশন) একটি করে লাইসেন্স। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য আইন আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘এই চারটির মধ্যে একটি লাইসেন্স না থাকলেই কোনও বাজির কারখানা বেআইনি। আর বেআইনি কারখানায় তৈরি বাজি কোনও ভাবে স্বীকৃতি পেতে পারে না।’’ তাঁর প্রশ্ন, পুলিশ কি তবে এ বার মুঙ্গের থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ কিনবে? বেআইনি বাজি কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করে জাতীয় পরিবেশ আদালতের পূর্বাঞ্চল বেঞ্চে মামলা ঠুকেছেন বিশ্বজিৎবাবু। সে’টি এখন বিচারাধীন। তিনি বলেন, ‘‘পরীক্ষার সময়ে বেআইনি কারখানায় তৈরি বাজি ঢুকল, কাগজপত্র কেউ পরীক্ষা করে দেখল না!’’ পর্ষদ-কর্তারা অবশ্য এ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

fireworks factory
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE